এ ব্যাপারটা মনে রাখা খুবই ভালো, আর তা আপনি ছোট ছেলেমেয়ে, শাবক বা শিম্পাঞ্জি যাকে নিয়েই চলতে চান না কেন। যেমন উদাহরণ হিসেবে : রাফল ওয়ালডো এমার্সন আর তার ছেলে একটা বাছুরকে একদিন খোঁয়াড়ে ঢোকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তারা খুব সাধারণ সেই ভুলই করলেন। তারা নিজেরা যা চান তাই করছিলেন। এমার্সন বাছুরটাকে ঠেলে দিচ্ছিলেন আর তাঁর ছেলে টানতে চাইছিলেন। বাছুরটাও নিজে যা চায় তাই করতে লাগল–সে পা শক্ত করে কিছুতেই জায়গাটা ছাড়তে চাইলো না। বাড়ির আইরিশ পরিচারিকা ওঁদের ঝামেলা লক্ষ্য করছিল। পরিচারিকার প্রবন্ধ বা বই লেখার ক্ষমতা ছিল না, তবে এমন অবস্থায় তার প্রচুর সাধারণ বুদ্ধি ছিল, যা এমার্সনের ছিল না। বাছুরের মনোভাব সে বুঝল। সে করলো কি ওর আঙুলটা মাতৃস্নেহে বাছুরের মুখে ঢুকিয়ে দিতেই বাছুরটা সেটা চুষতে শুরু করলো আর তাকে ঘরে ঢুকিয়েও দেয়া গেল।
জন্মের পর থেকে আপনি যা করে আসছেন তা হলো আপনার কিছু উদ্দেশ্য আছে বলে। মনে ভাবুন যেদিন রেড ক্রশের তহবিলে একশ ডলার দান করেছিলেন। হ্যাঁ, এটা নিয়মের কোন ব্যতিক্রম নয়। আপনি রেড ক্রশকে একশ ডলার দিয়েছেন কারণ আপনি সাহায্যের হাত বাড়াতে চেয়েছেন, আপনি চেয়েছেন চমৎকার একটা স্বার্থপরতাহীন স্বর্গীয় কাজ করতে।
.
একশ ডলার আপনি যদি খুব বড় মনে করতেন তাহলে নিশ্চয় টাকাটা আপনি হাতছাড়া করতেন না। অবশ্য দানটা আপনি চক্ষুলজ্জাতেও করে থাকতে পারেন বা কোন মক্কেলের কথাতেও তা পারেন। তবে একটা ব্যাপার ঠিক। আপনি দানটা করেন যেহেতু আপনি কিছু চেয়েছিলেন।
প্রফেসর হ্যারী এ ওভারষ্ট্রীট তাঁর চমৎকার বই ‘ইনফ্লুয়েন্সিং হিউম্যান বিহেভিয়ারে’ লিখেছিলেন : আমাদের কাজের উৎপত্তি হল আমাদের ইচ্ছাশক্তি থেকেই …ভবিষ্যতে যারা অন্যদের বশে আনতে চান, সেটা পরিবারে, স্কুলে, রাজনীতিতে যেখানেই হোক না কেন–তাদের প্রতি সব সেরা পরামর্শ হলো প্রথমে সেই মানুষের মনে সে যা চায় সে সম্বন্ধে আগ্রহ জাগিয়ে তোলা। একাজ যে করতে পারে সারা দুনিয়াই তার সঙ্গে থাকবে। যে পারে না তাকে একলাই চলতে হয়।’
একেবারে গরীবের সন্তান স্কচ অ্যান্ড্রু কার্নেগী, যিনি ঘন্টায় দু সেন্ট রোজগার করে জীবন শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি ডলার দান করেন। জীবনে শুরুতেই শিখেছিলেন যে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তারের গোড়ার কথা হলো অন্যরা কি চায় সেটা বুঝে কথা বলা। তিনি মাত্র চার বছর স্কুলে পড়েছিলেন, তবুও মানুষদের ভালোভাবেই চালনা করতে শেখেন।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি : তার শালী একবার তার দুই ছেলে নিয়ে দারুণ চিন্তায় পড়েন। দুজনে ইয়েলে পড়াশুনা করছিল আর তারা নিজেদের নিয়েই এতে মশগুল ছিল যে বাড়িতে চিঠিপত্র লেখার কথা বা মায়ের চিঠির জবাব দেওয়ারও সময় থাকতো না তাদের।
কার্নেগী সব শুনে একশ ডলার বাজি রাখলেন যে উত্তর না চেয়েও পরের ডাকেই তিনি ওদের উত্তর এনে দেবেন। একজন বাজিতে রাজীও হয়ে গেল। তিনি এবার দুজনকে বেশ তামাশা করে চিঠি লিখে জানালেন এবং সঙ্গে দুজনকে পাঁচ ডলার করে নোট পাঠাচ্ছেন তাও জানালেন।
টাকাটা অবশ্য তিনি পাঠালেন না।
পরের ডাকেই যথারীতি উত্তর এসে গেল মেশোমশায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে। অবশ্য চিঠিতে আর কি ছিল নিজেরাই সেটা ভেবে নিন।
আগামীকালই আপনি হয়তো কাউকে দিয়ে কোন কাজ করাতে চাইবেন। কথা বলার আগে একটু চিন্তা করে প্রশ্ন করুন : ‘ওকে কাজ করতে আগ্রহী করবো কিভাবে?’
এই প্রশ্নটা মনে জাগলে আমরা পাগলের মত ছুটে গিয়ে সেই লোককে আমি কি চাই বোঝাতে বসবো না। একাজ বৃথাই হবে।
নিউইয়র্কের কোন এক হোটেলের বলরুমটা আমি কুড়িটি রাতের জন্য ভাড়া করেছিলাম, উদ্দেশ্য কিছু বক্তৃতা দেওয়া। এক সীজুনের শুরুতে আমাকে আচমকা জানানো হলো আমার আগের ভাড়ার প্রায় তিনশগুণ বেশি দিতে হবে। এ খবর আমার কাছে আসে টিকিট ছেপে বিলিয়ে দেবার আর ঘোষণা করার পরে।
স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি টাকা দেবার ইচ্ছে আমার ছিল না। কিন্তু আমি কি চাই তা নিয়ে হোটেলের সঙ্গে কথা বলে কোন লাভ হতো কি? তাদের আগ্রহ তারা কি চায় তাই নিয়ে। তাই দিন কয়েক পরে
আমি ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম।
দেখা করে আমি বললাম, আপনার চিঠিটা পেয়ে একটু ধাক্কা খেয়েছি। তবে আপনাকে দোষ দিচ্ছি না। আপনার জায়গায় থাকলে আমিও বোধ হয় এরকম চিঠিই লিখতাম।এ হোটেলের ম্যানেজার হিসেবে যত বেশি লাভ করা যায় সেটা দেখা উচিত। তা না করলে আপনার চাকরি হয়তো থাকবে না, আর না থাকই স্বাভাবিক। এখন একবার আসুন এক টুকরো কাগজে লেখা যাক এই ভাড়া বাড়ালে আপনার কি সুবিধে অসুবিধে হতে পারে।
.
এরপর আমি একটা লেটার প্যাডের কাগজ নিয়ে মাঝবরাবর একটা লাইন টেনে একপাশে লিখলাম ‘সুবিধা’ অন্যপাশে লিখলাম ‘অসুবিধা’।
এবারে সুবিধার ঘরে লিখলাম : বলরুম বিনা ভাড়ায়। তারপরেই বললাম, আপনি বলরুম নাচ আর অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া পেলে আপনাদের সুবিধেই হয়। এ বেশ বড় সুবিধে কারণ বক্তৃতার জন্য ঘরটা ছেড়ে দেওয়ার চেয়ে বলরুমে নাচের অনুষ্ঠানে ভাড়া দিয়ে অনেক বেশি লাভ হয়। আপনাদের বলরুমটা কুড়িটা রাতের মত আটকে রাখলে নিশ্চয়ই আপনাদের লাভ বেশ কমই হবে।