শোয়ব আরও জানিয়েছিলেন অ্যাণ্ড কার্নেগীর সেই ঘটনাবহুল সাফল্যের চাবিকাঠিও এই জিনিস। কার্নেগী তার সহকর্মীদের খোলাখুলি আর আড়ালেও প্রশংসা করতেন।
এছাড়াও কার্নেগী তার সহকর্মীদের প্রশংসা করতে চেয়েছিলেন তার সমাধি প্রস্তরের মধ্য দিয়েও। তিনি নিজে একটা সমাধি ফলক লিখেছিলেন যাতে খোদাই করা ছিল এই কথাগুলো : ‘এখানে এমন একজন শায়িত আছেন যিনি তার চেয়েও বুদ্ধিমান মানুষদের সঙ্গে মিশতে পারতেন।
জনসংযোগের কাজে রকফেলার সাফল্যের অন্যতম রহস্য ছিল আন্তরিকভাবে প্রশংসা করা। যেমন উদাহরণ হিসেবে একবার যখন তাঁর একজন অংশীদার এডওয়ার্ডটি বেডফোর্ড, দক্ষিণ আমেরিকায় কিছু লগ্নী করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় দশ লক্ষ ডলার ক্ষতি করে বসলেন, জন ডি অবশ্যই দারুণভাবে সমালোচনা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি জানতেন বেডফোর্ড তার যথাসাধ্যই করেছেন–অতএব ব্যাপারটির ওখানেই ইতি ঘটলো। রকফেলার প্রশংসা করার একটা পথ পেয়ে গেলেন, তিনি তাই বেডফোর্ডকে প্রশংসা করে বললেন মোট টাকার শতকরা ষাট ভাগ তো তিনি বাঁচাতে পেরেছেন। একাজ সত্যিই দারুণ’, রকফেলার বলেছিলেন। উঁচু তলার মানুষও এমন সচরাচর করতে পারে না।’
জিগফিল্ড ছিলেন ব্রডওয়েকে যাঁরা উদ্ভাসিত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন সবসেরা প্রমোদ সংগঠক। তিনি সুনামের অধিকারী হয়ে ওঠেন আমেরিকান মেয়েদের গৌরবান্বিত করে তোলার কাজে সুক্ষ্ম ক্ষমতা অর্জন করে। তিনি কাজ করতেন এইভাবে, যাদের দিকে কেউ দুবার তাকায় না এমন সাধারণ মেয়েদের তিনি মঞ্চে বারবার নিয়ে এসে ক্রমে তাদের রহস্যময়ী আর লাবণ্যময়ী করে গড়ে তুলতেন। প্রশংসা আর আত্মবিশ্বাসের মূল্য তিনি জানতেন বলেই তিনি মেয়েদের তার সাহসিকতা আর বিবেচনাবোধ দিয়ে এই বিশ্বাস জাগাতেন যে তারা সুন্দরী। তিনি আসলে ছিলেন বাস্তববোধের মানুষ, তাই তিনি কোরাস মেয়েদের মাইনে মাসে ত্রিশ ডলারের বদলে প্রায় একশ পঁচাত্তর ডলারে তুলে দেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন খুবই চমকদার মানুষ। কোন অনুষ্ঠান রাত্রির উদ্বোধনের সময় তিনি প্রতিটি অংশগ্রহণকারিনীকে টেলিগ্রামে শুভেচ্ছা জানাতেন আর প্রতিটি কোরাসের মেয়েকে চমৎকার রক্ত গোলাপ উপহার দিতেন।
একবার আমায় অনাহারে থাকার পাগলামিতে পেয়েছিল আর তাই ছ’ রাত ছ’ দিন না খেয়ে কাটাই। ব্যাপারটা তেমন কঠিন ছিল না। দুদিনের শেষে যতখানি ক্ষুধার্ত ছিলাম তার চেয়ে ছ’দিনের মাথায় কমই ক্ষুধার্ত হই। তা সত্ত্বেও আমি জানি, আর আপনিও জানেন, অনেকেই নিজেদের অপরাধী ভাবতে চাইবে তারা যদি তাদের পরিবারের লোকজন বা কর্মচারিদের ছ’ দিন অনাহারে রেখে দেয়। অথচ তারাই আবার তাদের ছ’দিন কেন, ছ’ সপ্তাহ বা ষাট বছরেও তাদের আকাঙিক্ষত সেই আহার্যের মতই প্রশংসাটুকু করতে চাইবে না। অ্যালফ্রেড লাস্ট যখন ‘রিইউনিয়ন ইন ভিয়েনা’তে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তখন তিনি বলেন, ‘আমি যা সবচেয়ে বেশি চাই তা হলো আমার আত্মবিশ্বাস বজায় রাখার জন্য কিছু প্রশংসা।‘
.
আমার নানা ভাবেই আমাদের ছেলেমেয়েদের, বন্ধু বাস্তব বা কর্মচারিদের শরীরের জন্য যত্নের ব্যবস্থা করি কিন্তু কদাচিৎ আমরা তাদের আত্মবিশ্বাসের যত্ন নিতে চাই। আমরা তাদের মাংস আর আলু খাইয়ে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করি কিন্তু দুঃখের কথা, তাদের প্রশংসার বাণী শোনাতে আমাদের অবহেলা অফুরন্ত। আমরা বুঝিনা এই প্রশংসা তাদের মনে প্রভাত সঙ্গীতের মতই চিরজাগরুক থাকতে পারে।
কোন কোন পাঠক বোধহয় এ পর্যন্ত পড়ে বলতে চাইবেন : পুরনো বস্তাবন্দী মাল! একদম বাজে আর তোষামোদ ছাড়া কিছুই না। এ জিনিস আমরা জানি। এতে কাজ হয় না–বিশেষ করে বুদ্ধিমান মানুষদের কাছে।
ঠিক কথা, তোষামোদ বুদ্ধিমান মানুষেরা কদাচিৎ ভোলেন। তোষামোদ হলো, স্বার্থপরতা মাখা আর কপটতায় জড়ানো কিছু। এটা সাধারণত ব্যর্থ হয় আর তা হওয়ারই কথা। এটাও সত্যি কথা যে কিছু কিছু মানুষ প্রশংসা শোনার জন্য এতই লালায়িত আর উদগ্রীব থাকে যে তারা যে কোন কিছুই গিলতে তৈরি। অনাহারক্লিষ্ট মানুষ যেমন ঘাস বা কুচোমাছের টোপও গিলে ফেলে।
উদাহরণ হিসেবে বহু বিবাহকারী ডিভানি ভাইদের কথাটাই একবার ধরুন। এই ডিভানি ভাইরা বিয়ের বাজারে একেবারে জ্বলজ্বলে তারার মতই ছিল। তারা অর্থাৎ এই তথাকথিত রাজপুত্ররা কেমন করে দুই অপরূপ সুন্দরী আর বিখ্যাত অভিনেত্রী, বিখ্যাত একজন অপেরা গায়িকা আর লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বারবারা হাটনকে বিয়ে করেছিলেন? কেন? আর কেমন করেই বা তারা এটা করে?
‘লিবার্টি’ নামে একটা কাগজে অ্যাডেলা রোজার্স সেন্ট জন লিখেছিলেন, ‘…. মেয়েদের কাছে ডিভানিদের আকর্ষণের ব্যাপার যুগ যুগ ব্যাপী কোন রহস্যেরই অঙ্গ।‘
তিনি আরও জানান, ‘বিখ্যাত পোলা নেগ্রী পুরুষ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আর বিখ্যাত শিল্পী একবার ব্যাপারটা আমার কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ওরা তোষামোদের ব্যাপারটা এতই ভালো বোঝে যেটা আর কোন আমার দেখা পুরুষ কে কখনই দেখিনি। আর এই তোষামোদ ব্যাপারটা এই রসকষহীন বাস্তব জগতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আপনাকে কথা দিতে পারি যে, মেয়েদের কাছে ডিভানি ভাইদের আকর্ষণের রহস্যটাও এটাই।’