জনসংযোগের ভীতি দূর করার মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা আমাদের প্রতিদিনের কাজে অদ্ভুত রকম প্রতিক্রিয়া জাগাতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ যারা গ্রহণ করতে পারেন তারাই শ্রেষ্ঠতর মানুষ। তারা যে কোন শ্রোতাদের জয় করার ফলে তাদের জীবন আনন্দময় আর পূর্ণতায় বিকশিত।
একজন বিক্রেতা লিখেছেন : ‘ক্লাসে কয়েকবার দাঁড়িয়ে বলার পর আমার মনে হল যে কোন কাউকেই সামলাতে পারি। একদিন সকালে ঘুরতে ঘুরতে বেশ কড়া একজন ক্রয় এজেন্টের সামনে হাজির হলাম। লোকটি না বসার আগেই সবার আগে আমার সব স্যাম্পেন তার ডেস্কে ছড়িয়ে দিলাম। তিনি এরপর আমাকে এমন বায়না দিলেন সারা জীবনেও যা পাইনি।’
এক গৃহকর্ত্রী আমায় বলেন আমি আমার বাড়িতে পড়শীদের নিমন্ত্রণ জানাতে ভয় পেতাম। কারণ কথাবার্তা চালাতে পারব না বলে আমার ভয় লাগতো। ক্লাসে যোগ দিয়ে বার কয়েক উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলার পরে আমার সাহস বাড়ল। এরপর একদিন একটি পার্টি দিলাম। পার্টি দারুণ জমলো, আমি সকলকে চমৎকার মাতিয়ে রেখেছিলাম।’
আমার নিশ্চিত বিশ্বাস আপনিও তা পারবেন। আপনিও দেখবেন জনসংযোগ আর বক্তৃতা করতে পারলে প্রতিদিনই ভয় জয় করে আপনি আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলছেন। এর ফলে প্রতিদিনের জীবনের নানা সমস্যা আর জটিলতা জয় করতে আপনার অসুবিধা থাকবে না। যে সমস্যা আগে দূর করা যায়নি তার সমাধান করে জীবন আপনার পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
০৩. দ্রুত ও সহজে বক্তব্য রাখার পথ
দিনে আমি হঠাৎ কখনো কখনো টেলিভিশন দেখি। কিন্তু আমার একজন বন্ধু বিকেলের একটা অনুষ্ঠান দেখতে অনুরোধ জানাল একদিন। অনুষ্ঠানটা গৃহকর্ত্রীর জন্য এবং একটু উচ্চস্তরের তাই বন্ধুর ধারণা
অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া আমার দেখা উচিত। সত্যিই তাই মনে হল। অনুষ্ঠানটা বেশ কয়েকবার দেখলাম আমি। যারা কথা বলছিলেন তারা কেউই পেশাদার বক্তা নন। তাঁদের বক্তৃতার শিক্ষা ছিল না তবুও তাঁদের কাজ অত্যন্ত শিষ্টাচার পূর্ণ। কথা বলার সময় তারা সকলেই ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন।
এর কারণ কি? কারণটা আমি জানি কারণ বহু বছর ধরেই এ ধরণের ক্লাস আমাকে নিতে হয়েছে। এই সব মানুষরা সকলেই অতি সাধারণ স্ত্রী পুরুষ অথচ তারা সারা দেশের দর্শকদের আকর্ষণ করে চলেছেন। তাঁরা বলে যান তাঁদের নিজেদেরই কথা। তাঁদের জীবনের কোন বিসদৃশ মুহূর্ত, কোন আনন্দময় ঘটনা। কিভাবে স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে, ইত্যাদির কাহিনী। এসব বলতে গিয়ে তাঁদের বাক্যবিন্যাস বা ব্যাকরণগত দিক নিয়ে ভাবতে হয়নি। অথচ তা সত্বেও তারা দর্শককুলের বাহবা পেয়ে চলেন। এটাই আমার কাছে জনসংযোগের তিনটি নাটকীয় নিয়ম :
১. অভিজ্ঞতা বা শেখার মধ্য দিয়ে জানা বিষয়ে কথা বলুন
টেলিভিশনে যারা কথা বলেছিলেন তাঁরা সবাই তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। তারা তাদের জানা কথাই বলছিলেন। একবার ভাবুন তাঁদের যদি, কমিউনিজম বা রাষ্ট্রসঙঘ সম্বন্ধে বলতে বলা হত তাহলে কি দাঁড়াত। সমগ্র অনুষ্ঠানই জলো হয়ে উঠত। অথচ হাজার হাজার অনুষ্ঠানে বক্তারা এই ভুলই করেন। তারা ভাবেন যা বলতে হবে তা হল নতুন নব বিষয়ে, অথচ তাদের ওই সব বিষয়ে হয়তো জ্ঞানই নেই। তারা বেছে নেন স্বদেশিকতা, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ইত্যাদি। বক্তৃতা তৈরী করতে তাঁরা পাগলের মত ঘটতে থাকেন উদ্ধৃতি। তাঁরা আদৌ ভাবেন না শ্রোতারা হয়তো ঘটনাবহুল অভিজ্ঞতালব্ধ কথাই শুনতে চাইবেন, বড় বড় বাক্যবিন্যাস নয়।
শিকাগোয় ডেল কার্নেগী পাঠক্রমের এক ক্লাসে কয়েক বছর আগে একজন ছাত্রবক্তা কিছু বলতে গিয়ে এইভাবে শুরু করে : স্বাধীনতা, মমতা আর ভ্রাতৃত্ব। মানুষের ইতিহাসে এসবই হল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধারণা। স্বাধীনতা ছাড়া জীবন বৃথা।
এ পর্যন্ত বলার পরেই শিক্ষক, তাঁকে থামিয়ে দেন তারপর প্রশ্ন করেন যে কথা তিনি বলছেন সে সম্বন্ধে তাঁর কোন রকম অভিজ্ঞতা আছে কিনা। ছাত্রটি তখন এক অদ্ভুত কথা শোনায়।
তিনি ছিলেন এক ফরাসী গেরিলা যোদ্ধা। তিনি আমাদের এবার শোনান তিনি ও তাঁর পরিবার নাশীদের হাতে কিভাবে অসম্মান লাভ করেন। সজীব ভঙ্গীতে তিনি আমাদের শোনালেন কিভাবে সিক্রেট পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আমেরিকায় পালিয়ে আসেন। তিনি বলেছিলেন ‘আমি আজ যখন মিশিগান অ্যাভিনিউ দিয়ে এই হোটেলে আসছিলাম কোন পুলিশ আমার দিকে তাকায়নি। আজ আমি যেখানে খুশি যেতে পারি। আজ বুঝেছি স্বাধীনতার মূল্য কি। ছাত্রটি শ্রোতাদের কাছ থেকে বিরাট প্রশংসাই পান।
জীবনে যা শিখেছেন তাই শোনান
যে সব বক্তা জীবন তাদের কি শিখিয়েছে যখন শোনাতে চান শ্রোতারা তাদের কথা শুনতে খুবই আগ্রহী হন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি বক্তারা কথাটা সহজ মেনে নিতে চায় না-তাঁরা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে তুচ্ছ বলেই ভাবেন। তারা বরং সাধারণভাবে দার্শনিকতত্বের দিকে বেশি ঝুঁকতে ইচ্ছুক। তারা যখন কোন সম্পাদকীয় লেখেন আমরা তা পড়তে চাই এটা ঠিক। তবে সেটা যোগ্য লোকের হাত থেকেই আসুক তাই আমরা চাই। তবুও আসল কথাটা হল এই : জীবন আপনাকে যা শিখিয়েছে তাই শোনান তাহলে আমিই হব আপনার শ্রোতা।
শোনা যায় এমার্সন সব সময়েই লোকের কথা শুনতেন, তা সে যত সামান্যই হোক। এর কারণ হল তাঁর মনে হত, যে কোন মানুষের কাছ থেকেই তার কিছু শেখার আছে। আমি প্রচুর বয়স্ক মানুষদের বক্তৃতা আর কথা শুনেছি, তাই বলতে পারি বক্তা যখন জীবন তাকে যা শিখিয়াছে তাই শোনাতে চান তখন সে কথা কখনই বিরক্তিকর মনে হয় না।