জর্জ বার্নার্ডশ’কে যখন প্রশ্ন করা হয় এমন চমৎকারভাবে জনগণের সামনে তিনি কিভাবে বক্তৃতা করেন, তিনি জবাব দেন : ‘স্কেট করা যেভাবে শিখেছি সেই ভাবেই একগুয়ের মত নেহাত বোকার মতই অভ্যাস করে শিখেছি বক্তৃতা করা। যৌবনে শ ছিলেন অত্যন্ত ভীরু। কারও বাড়িতে ঢোকার আগে রাস্তায় অন্ততঃ বিশ মিনিট ঘোরাঘুরি করতেন। খুব কম লোকই আমার মত কাপুরুষ ছিল আর এমন লজ্জা পেত’, শ স্বীকার করেছেন। শেষ পর্যন্ত শ ভীরুতা, আর কাপুরুষতা জয় করার সেরা পথই বেছে নিয়েছিরেন। তিনি তাঁর দুর্বলতাকে জয় করতে চাইলেন। একটা বিতর্ক সভায় তিনি যোগ দিলেন। লণ্ডনের প্রায় সব সভায়, যেখানে আলোচনার সুযোগ থাকত সেখানেই যোগ দিতে লাগলেন। সমাজতন্ত্রের পক্ষে প্রচার চালাতে মনপ্রাণ ঢেলে জর্জ বার্নার্ড শ বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের একজন চমৎকার সুদক্ষ বক্তা হয়ে উঠেছিলেন।
কথা বলার সুযোগ চারপাশেই ছড়ানো। যে সব প্রতিষ্ঠানে কথা বলার সুযোগ আছে তাতে যোগদান করুন। সুযোগ পাওয়া মাত্রই যে কোন জনসভায় যোগ দিন। দপ্তরের কোন সভায় পিছনের আসনে থাকবেন না। বেশ জোরালো স্বরেই আপনার বক্তব্য রাখুন। কথা বলুন! রবিবারের শিক্ষাদানের ক্লাসে শিক্ষাদানও করুন। ভালো করে নজর রাখলে দেখবেন আপনার চারপাশে ব্যবসা, সামাজিক, রাজনৈতিক পেশাদারী বা এমন কি আপনার এলাকাতেও কথা বলার দারুণ সুযোগ রয়েছে। কথা না বললে আপনার জানা অসম্ভব কতটা উন্নতি লাভ করতে পারলেন। তাই শুধু কথা বলে যান বারবার।
একজন তরুন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্তা আমায় বলেছিলেন, এ ব্যাপার আমার জানা, কিন্তু শেখার অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করে না।
‘অগ্নিপরীক্ষা!’ আমি জবাব দিই। কথাটা মন থেকে হটিয়ে দিন। আপনি ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারেন নি।”
‘ঠিক চিন্তাটা কেমন?’ তাঁর প্রশ্ন ছিল।
‘একটা অ্যাডভেঞ্চারের চিন্তা’ জবাব দিই।
আপনিও তা করতে পারেন।
০২. আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা
জনসংযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হল ভয়। আমি এমন একজনকে জানি যিনি আমার ক্লাসে যোগ দেননি কারণ তাঁকে কথা বলতে হবে। পাঁচ বছর পরে অবশ্য তিনি যোগ দিয়ে পাঁচটা বছর নষ্ট হওয়ার জন্য দুঃখও করেন। আজ তিনি একজন বিখ্যাত বক্তা।
এমার্সন বলেছেন, পৃথিবীতে ভয়ের মত আর কিছু মানুষের ক্ষতি করে না। কথাটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, কারণ ১৯১২ সাল থেকে শিক্ষাদান করে এ অভিজ্ঞতা আমি সঞ্চয় করেছি।
স্ত্রী পুরুষকে জনগণের সামনে বক্তৃতা করা শেখাতে গিয়ে আমি ভয় দূর করার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার পথ আবিষ্কার করেছি। এজন্য শুধু দরকার কয়েক সপ্তাহের অভ্যাস।
১. বক্তৃতার ভীতি সম্বন্ধে নানা ঘটনার খোঁজ রাখুন।
এক নম্বর ঘটনা :
বক্তৃতা সম্বন্ধে একমাত্র আপনিই ভীত নন। কলেজে পরিসংখ্যান নিয়ে দেখা গেছে বক্তৃতার ক্লাসে শতকরা আশি কি নব্বই ভাগ ছাত্রেরই গোড়ায় এই ভয় থাকে। আমার আরও ধারণা বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ ভয় শতকরা একশ ভাগ।
দুই নম্বর ঘটনা :
একটু মঞ্চভীতি থাকা কাজের হয়। আমাদের পারিপার্শ্বিকতা মেনে নেওয়ার জন্য প্রকৃতিদত্ত ক্ষমতা তৈরি হওয়ার ব্যাপার থাকে। তাই যখন দেখবেন নাড়ীর গতি বেড়ে উঠে ঘামতে শুরু করেছেন, তাতে ভয় পাবেন না। আপনার শরীর বাইরের উত্তেজনায় কাজ করতে তৈরি। এই শারীরিক ব্যাপারটা একটা সীমানার মধ্যে থাকলে আপনি বেশ ভালোভাবেই পরিষ্কারভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় কথা বলে যেতে পারবেন।
তিন নম্বর ঘটনা :
বহু পেশাদার বক্তা আমাকে বলেছেন তারাও পুরোপুরি ভয়কে জয় করতে পারেন না। এ রকম অবস্থা প্রতিবার প্রথম কথা শুরুর সময় বেশ কিছুক্ষণ থেকে যায়। যে সব বক্তা বলেন ভয় বলে কোন প্রতিক্রিয়া তাদের হয় না তারা নেহাত বাচাল।
চার নম্বর ঘটনা :
জনতার সামনে বক্তৃতা করতে ভয় পাওয়ার কারণই হল আপনি একাজে অনভ্যস্ত। বেশির ভাগ মানুষেরই জন-সংযোগের অভিজ্ঞতা থাকে না তাই ভয় তাদের আঁকড়ে ধরে। শিক্ষানবীশদের কাছে এটা টেনিস খেলা বা গাড়ি চালানোর মত। এই ভয় কাটানোর একমাত্র পথই হল কেবল অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া। দেখবেন বক্তৃতা ব্যাপারটা আনন্দের খনি হয়ে উঠতে পারে।
২. সঠিকভাবে নিজেকে তৈরি করুন।
মনে পড়ছে একবার বেশ ক’বছর আগে নিউইয়র্ক রোটারী ক্লাবের মধ্যাহ্নভোজে একজন নামী সরকারী অফিসার প্রধান বক্তা হিসেবে আসেন। আমরা সাগ্রাহ অপেক্ষায় ছিলাম তিনি কি বলেন শুনব। বলে।
প্রথমেই বুঝতে পারা গেল ভদ্রলোক তৈরি নন। প্রথমে তিনি মন থেকেই বলার চেষ্টা করলেন, তাতে ব্যর্থ হয়ে পকেট থেকে একতাড়া কাগজ বের করলেন। অবশ্য তাতেও সুবিধে হল না। যতই তিনি বলতে চেষ্টা করলেন ততই সব তাঁর গুলিয়ে যেতে লাগল। বারবার ক্ষমা চেয়ে তিনি কাঁপা ঠোঁটে কিছু বলতে চাইছিলেন। বেচারি ভয়ে একেবারে শুকিয়ে কাঠ, বোঝা যাচ্ছিল একদম তৈরি হয়ে আসেন নি। শেষ পর্যন্ত হতমান অবস্থায় তিনি বসে পড়লেন।
১৯১২ সাল থেকে প্রায় বছরে পাঁচ হাজার বক্তৃতা আমাকে তদারক করতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে এভারেস্টের চূড়োর মতই একটা ব্যাপার মাথা তুলে আছে : একমাত্র তৈরি হয়ে আসা বক্তারাই আত্মবিশ্বাসী হন। দুর্বল অস্ত্র নিয়ে কেউ কিভাবে কোন ভয়ের দূর্গ জয় করা ভাবতে পারে? লিঙ্কন বলেছিলেন :”আমার বিশ্বাস কোন কিছু বলার না থাকলে বলতে গেলে অসোয়াস্তি না বোধ করে পারব না।”