প্রেসক্রিপশানটা আমার ডেস্কেই আছে। যতবারই তা পড়ি ততবারই মুগ্ধ হই। সেটা এই রকম :
আপ্রাণ চেষ্টায় এমন শক্তি গড়ে তুলুন যাতে অন্যে আপনার মন আর হৃদয় অনুকরণ করতে পারে। আপনার চিন্তাধারা, উদ্দেশ্য সহজে ব্যক্তিকে, দলকে এবং জনগণের সামনে প্রকাশ করতে শিখুন। দেখবেন যে আপনার চেষ্টা যতই এগোতে থাকবে ততই আপনার সত্তা আগের চেয়ে ঢের বেশি করে অপরের উপর প্রভাব ফেলতে পারছে।
এই ব্যবস্থাপত্র থেকে আপনি দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। যতই অন্যের সামনে বক্তব্য রাখতে পারবেন ততই আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে উঠে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটবে। এর অর্থ আপনি আবেগ মণ্ডিত করেছেন, আর তাতেই শারীরিকভাবেও আপনার উন্নতি হবে। বর্তমান জগতে এই জনসংযোগ আর বক্তৃতা তরুণ বা বয়স্ক সকলেরই দরকার। ব্যবসার দুনিয়ায় এর কার্যকারিতার কথা আমি জানি না। তবে স্বাস্থ্যের দিকে অফুরন্ত। একজনই হোক বা অনেকেই হোক পারলেই তাদের সামনে বক্তব্য রাখুন দেখবেন আপনার মধ্যে পরিবর্তন আনবেই।
এধরনের ধারণা থাকা চমৎকার। কোন ওষুধের বড়িতে তা পাবেন না।
৩। সাফল্যের জন্য মনকে তৈরী করুন।
একবার এক বেতার অনুষ্ঠানে আমাকে তিনটে কথায় বলতে বলা হয় জীবনে কোন্ শ্রেষ্ঠ শিক্ষা লাভ করেছি। আমি বলেছিলাম : সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা আমি পেয়েছি তা হল আমরা যা ভাবি তার অসামান্য গুরুত্ব। আপনি কি ভাবেন যদি জানতে পারতাম তাহলে বুঝতে পারতাম আপনি কি, কারণ আপনার চিন্তাই জানিয়ে দেয় আপনি কি। আপনার চিন্তাধারা বদল করে আমরা আপনার জীবনই বদলে দিতে পারি।’
এখন আপনি চাইছেন আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কার্যকর জনসংযোগ গড়ে তোলা। অতএব এখন থেকে আপনার কাজ হল নঙর্থক ভাবনা ছেড়ে চেষ্টায় সফল হওয়ার কার্যকর চিন্তা করা। আপনাকে অবশ্যই লোকের সামনে কথা বলার একটা আশাবাদী মন গড়ে তুলতে হবে।
একটা কাহিনী শোনাব এবার। দেখতে পাবেন একাগ্রতা থাকলে যে কেউ কিভাবে বক্তৃতা করার চ্যালেঞ্জ নিতে পারে। যার কথা বলছি তিনি অনেক নিচু থেকে উঠে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায় ব্যবসা জগতের প্রবাদে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু প্রথম জীবনে কলেজে যখন তিনি বক্তৃতা দিতে উঠতেন তাঁর মুখ দিয়ে কথা বেরোত না। মুখ সাদা হয়ে যেত তাঁর, পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বলতে না পেরে তাঁকে মঞ্চ থেকে সজল চোখে পালাতে হত।
অল্প বয়সে যার এ অবস্থা ছিল, ব্যর্থতা তাঁকে স্তব্ধ করতে পারেনি। তিনি শপথ নেন একজন ভালো বক্তা হবেন। আর তাতেই না থেকে তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্ব-প্রসিদ্ধ সরকারী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। তার নাম ক্লারেন্স বি. র্যাণ্ডেল। তাঁর একটা বই ‘ফ্রিডম’স ফেথ’-এ তিনি জনসংযোগ সম্পর্কে বলেছেন সব রকম কাজেই আমার অভিজ্ঞতা জমেছে। আমি হাজির হয়েছি ব্যবসায়িক সভায়, চেম্বার অব কমার্সেও, রোটারী ক্লাবে এই রকম বহু জায়গায়। মিশিগানে যুদ্ধের সময়েও বক্তৃতা দিয়েছি। আমি হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট জেম্স ব্রায়ান্ট কনাল্টের সঙ্গে বক্তৃতা দিয়েছি। এমন কি মূল ফরাসি ভাষাতেও তা করেছি।
‘আমার ধারণা শ্রোতারা কি শুনতে চায়, আর তা কিভাবে বলা হবে, তা আমি জানি। আমার মনে হয় একজন দক্ষ ব্যবসায়ী যদি ব্যবসায় দায়িত্ব নিতে পারেন তাঁর পক্ষে অন্য কিছু শেখা কঠিন নয়।’
মি. র্যান্ডালের সঙ্গে আমি একমত। একজন ভালো বক্তা হওয়ার কাজে সাফল্যের ইচ্ছা অনেকটাই এগিয়ে দেয়। আমি যদি আপনাদের মনের ইচ্ছা সম্পর্কে একটা অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতাম তাহলে বলে দিতে পারতাম নিশ্চিত ভাবেই, সাফল্য লাভ করতে আপনার কত সময় প্রয়োজন।
তাই একাজে সফল হতে আপনার চাই উপযুক্ত কিছু গুণাবলী। এটা যে কোন দরকারী কাজেই প্রয়োজন হয়। পর্বত ডিঙিয়ে যেতেও চাই উদগ্র একটা ইচ্ছার মত কিছু।
জুলিয়াস সীজার যখন গলা থেকে চ্যানেল পার হয়ে ইংল্যান্ডে হাজির হন তখন তাঁর সেনাদলের বিজয়ের জন্য কি ব্যবস্থা নেন জানেন? খুব একটা চালাকির কাজই তিনি করেন। তিনি ডোভারের মুখে এক উঁচু জায়গায় থামেননিচে তাকাতে তাঁদের চোখে পড়ে, যে জাহাজে চড়ে তারা এসেছিলেন তার সবই লেলিহান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শত্রু দেশে সব সংযোগ নিশ্চিহ্ন, পালাবার পথও নেই–অতএব একটা কাজই করার ছিল : এগিয়ে চলা-জয় করার জন্য। আর ঠিক তাই তিনি করেন।
অমর সীজারের এমনই ছিল মনের জোর। আপনিও তাই করুন না কেন, শ্রোতাদের ভয় জয় করার মধ্য দিয়ে।
৪। যতটা সম্ভব অভ্যাস করুন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে আমার যে পাঠ্যক্রম চালু করেছিলাম আজ তা পুরোপুরি বদলে গেছে। প্রতি বছরই নতুন ধ্যান ধারণা পুরনোগুলো বদলে গেছে। তবে পাঠক্রমের একটা বিষয় অপরিবর্তিত থেকে গেছে। ক্লাসের প্রত্যেককেই অন্ততঃ একবার উঠে দাঁড়িয়ে, বেশির ভাগই দুবার, ক্লাসের সকলের সামনে বক্তৃতা দিতে হয়। কেন? এটা সেই জলে না নেমে যেমন সাঁতার শেখা যায় না তেমনই–অর্থাৎ মানুষের সামনে বক্তৃতা না দিলে কেউ বক্তা হতে পারে না। আপনি বক্তৃতা করা সম্পর্কে মোটা মোটা বই পড়তে পারেন–এ বইয়ের সঙ্গেও –অথচ বক্তৃতা দান না করতেও পারেন। এ বইটা একটা গাইড বই মাত্র। আপনাকে এর নির্দেশ অভ্যাস করতে হবে।