৫. পুরস্কারের অবশ্যম্ভাবিতা সামনে রাখুন
আমার একান্ত বাসনা আপনারা আপনাদের প্রাতরাশের টেবিলে প্রফেসর উইলিয়াম জেমসের এই লেখাটি রেখে মুখস্থ করে ফেলবেন :
‘কোন তরুণ তার লাইন যে রকমই হোক, সে যেন তার শিক্ষা নিয়ে কোনরকম উদ্বেগ বোধ না করে। দৈনিক জীবনে সে যদি নিয়মিত প্রতিটি ঘন্টা বিশ্বস্তভাবে কাটায় তাহলে সফলতা আসবেই। একদিন সে দেখতে পাবে সফলতা তার হাতের মুঠোয়।’
প্রফেসর জেমসের মত আমিও বলতে চাই বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অনুশীলন করে চললে একদিন আপনার পক্ষেও সুযোগ্য বক্তা হয়ে ওঠা মোটেই কঠিন হবে না।
মনে রাখবেন কথাগুলো যতই অসম্ভব বলে মনে হোক সাধারণভাবে এটা সত্য। অবশ্যই একথা ঠিক এর ব্যতিক্রম আছে। নিকৃষ্ট মানসিক অবস্থার বা ব্যক্তিত্বহীন কোন মানুষের যার বলার মত কিছুই থাকে না, তার পক্ষে কোনো ড্যানিয়েল ওয়েবার হয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। তবে কিছুটা তার পক্ষেও নিজেকে তৈরি করা সম্ভব।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি : নিউ জার্সির প্রাক্তন গভর্নর স্টোকম ট্রেনটনে একদিন আমার পাঠক্রমের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি সদস্যদের যে বক্তৃতা করতে শুনেছেন তা ওয়াশিংটনের শোনা বক্তৃতার চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। এই বক্তৃতা দেন কিছু ব্যবসায়ী আর বিক্রয় প্রতিনিধিরা যারা পাঠক্রমের ক্লাসে যোগদান করার আগে শ্রোতাদের সামনে দাঁড়াতেই ভয় পেতেন। অথচ তারাই একদিন সকালে জেগে উঠে যেন নিজেদের সফলতায় মণ্ডিত দেখতে পান।
অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমি বহু বক্তাকে লক্ষ্য করেছি। আমি দেখেছি তাঁদের অনেকেই শ্রোতাদের সামনে কথা বলার ক্ষমতা অর্জনের জন্য কি প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিভাবান কয়েকজনই মাত্র অল্প আয়াসে দক্ষতালাভ করেছে–বাকি সকলে কখনও হতাশায় ভেঙে পড়েনি। তাঁরাও পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে শিখরে উঠতে পেরেছেন।
এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। ব্যবসা জগতে অহরহ এমনই ঘটে থাকে। জন ডি রকফেলার (বড়) বলেছিলেন ব্যবসাজগতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ধৈর্য আর জ্ঞান। সাফল্য এতে আসবেই। বক্তৃতা আর জনসংযোগের ক্ষেত্রেও তাই।
কয়েক বছর আগে বিখ্যাত বেডেকার অস্ট্রিয়ার দিক থেকে আল্পস পর্বতের শিখরের উচ্চতা মাপার চেষ্টা করেন। এর নাম ওয়াইল্ডার কাইজার। বেডেকার বলেন ওদিক দিয়ে ওঠা বেশ কঠিন ছিল। বিশেষ করে অপেশাদারদের একজন গাইড থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। বেডেকার আর জনৈক বন্ধু গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কোন গাইড ছিল না। একজন তাই জানতে চান তারা সফল হবেন কিনা। অবশ্যই হব’,
বেডেকার জবাব দেন।
‘এরকম ভাববার কারণ?’ ভদ্রলোক জানতে চান।
‘অনেকেই গাইড ছাড়া পেরেছেন, বেডেকার বলেন, অতএব আমাদের যুক্তি আমরা কেন পারব। পরাজয়ের কথা ভেবে আমি কোন কাজ হাতে নিই না।’
যে কোন কাজে, এমন কি মাউন্ট এভারেষ্ট বিজয় সম্পর্কেও মনস্তত্ব তাই বলে।
বক্তৃতাদানে বা জনসংযোগের কাজেও কথাটা একই রকম। আপনি কতখানি সফল হবেন তার চিন্তাধারাই আপনাকে অনেকটা প্রভাবিত করে : আপনি যদি মনে মনে ভাবেন সফল হবেন আর সেইভাবেই মনে সাহসের জোগান দেন তাহলে নিশ্চয়ই সফল হতে পারবেন। প্রয়োজন হল দৃঢ় আত্মবিশ্বাস।
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় অ্যাডমিরাল ডুপো অন্ততঃ ছ’টি কারণ দেখিয়ে বলেছিলেন চার্লস্টন বন্দরে কেন তিনি তাঁর বন্দুকবাহী জাহাজ নিয়ে যান নি। অ্যাডমিরাল ফ্যরাগট বেশ মন দিয়ে সব কথা শোনার পর বলেন, আর একটা কারণের কথা আপনি বলেন নি।
‘সেটা কি?’ অ্যাডমিরাল ডুঁপো প্রশ্ন করেন।
এবার জবাব এলো : ‘কাজটা আপনি করতে পারবেন বলে আদৌ ভাবেন নি।‘
রাফল ওয়ালডো এমার্সন একবার বলেছিলেন : উৎসাহ ছাড়া কোন বড় কিছু করা কখনই সম্ভব হয় নি। সাফল্যের চাবিকাঠিও তাই।
উইলিয়াম লিয়ন ফেলপস ছিলেন সম্ভবতঃ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ আর জনপ্রিয়তম একজন শিক্ষক। তাঁর ‘একসাইটমেন্ট অব টিচিং’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাছে শিক্ষাদানের কাজ এক শিল্পকলার মত। এ আমার ভালবাসা। আমি শিক্ষা দিতে ভালবাসি, যেমন শিল্পী শিল্প সৃষ্টি করতে ভালবাসেন। গায়ক সঙ্গীত ভালবাসেন, কবি তেমন কবিতা রচনা করতে ভালবাসেন। সকালে শয্যা ছেড়ে ওঠার পরেই আমি আমার ছাত্রদের কথাই আনন্দে স্মরণ করি।‘
কোন শিক্ষক যে তার কাজে এমন আন্তরিক আনন্দ পান তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু আছে? বিলি ফেলপস তাঁর ছাত্রদের উপর প্রচণ্ড প্রভাব রেখেছিলেন, আর তা তিনি পেরেছিলেন ভালবাসা, আগ্রহ এবং আন্তরিকতার স্পর্শে।
আপনার শেখার বিষয়েও আপনি যদি এ ধরনের আন্তরিকতা দিয়ে অগ্রসর হতে পারেন সমস্ত বাধাই তাহলে দূর করতে পারবেন সন্দেহ নেই। আপনার ক্ষমতা আগ্রহের সামনে এ একটা চ্যালেঞ্জ, তার বিশ্বাস রাখতে শুরু করুন নিজের উপর। চেষ্টা করুন ছোট ছোট কোন দলের আস্থা অর্জন করতে। দেখবেন একটু একটু করে বড় মাপের কিছু কারও আর কঠিন বলে থাকবে না। জনসংযোগে এ ধরনের প্রচেষ্টা ফলবতী হবেই।
ডেল কার্নেগি পাঠক্রমের শিক্ষকদের গাইড বইয়ে এই কথাগুলি লেখা থাকে : ক্লাসের সদস্যরা যখন আবিষ্কার করেন তারা শ্রোতাদের মনোযোগ আর শিক্ষকদের দৃষ্টি অকার্ষণে সমান–তখনই তারা অন্তরে একটা ক্ষমতার অধিকারী হন। তাঁদের সাহস আর আত্মবিশ্বাসে কোন ত্রুটি থাকে না। এর ফলাফল কি হয়? তাঁরা স্বপ্নেও যা ভাবতে পারেন নি সেই কাজই তারা করতে সক্ষম হন। তাঁরা শ্রোতাদের সামনে কথা বলার সুযোগই খুঁজতে থাকেন। তারা ক্রমেই অনেক বেশি করে ব্যবসা সংক্রান্ত আর পেশাদারী, সামাজিক কাজকর্মে যোগদান করে নেতৃত্বের অধিকারী হয়ে ওঠেন।