বক্তব্যের সিঁড়ি বেয়ে আমরা জনসংযোগের ক্ষেত্রে যতই অগ্রসর হতে থাকি-জনগণের সামনে বক্তৃতা যেসব ক্ষেত্রে একান্ত দরকার–ততই আমরা দেখতে পাই আলোচনা, কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা মেটানো, নীতি-নির্ধারণ, ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই এই জনসংযোগকারী বক্তৃতা কি অসাধারণ কার্যকরী। এ বইয়ের উপদেশ আর পরামর্শ তাই চমঙ্কার ভাবেই কাজে লাগানো সম্ভব। বিক্রয় সংক্রান্ত ক্ষেত্রে এটা অভাবনীয় সাফল্য আনতে সক্ষম তার প্রমাণ বহুবারই পাওয়া গেছে।
আপনি হয়তো অবাক হয়ে ভাবছেন আগে তেরোটা পরিচ্ছেদ থেকে যা শিখেছেন সেগুলো কিভাবে কোথা থেকে কবে কাজে লাগাতে শুরু করবেন। আমার উত্তর শুনে হয়তো অবাক হবেন : এখনই।
আপনি এখনই, এই মুহূর্তেই হয়তো কোন জনসংযোগকারী বক্তৃতা দিচ্ছেন না, তা সত্ত্বেও বলতে চাই আপনার দৈনন্দিন জীবনেও আপনি এটা কাজে লাগাতে পারবেন। এখনই কথাটা বলতে গিয়ে আমি বলতে চাই পরক্ষণেই যে মানুষের সঙ্গে আপনার কথা বলার দরকার হবে তাকে দিয়েই আপনি আরম্ভ করুন।
আপনি যদি পুরো বিষয়টা একবার বিশ্লেষণ করে দেখেন তাহলে আশ্চর্য হয়ে দেখবেন যে আপনার দৈনন্দিন কাজে কর্মে, চিরাচরিত কথাবার্তায় কেমন ফল পেতে সুরু করেছেন।
সাত নম্বর পরিচ্ছেদে আপনাদের জানানো হয়েছে কোন দলের সামনে কথা বলার সময় কোন্ চারটি নিয়ম মেনে চলতে হবে : আপনি হয়তো শ্রোতাদের জানাতে চান তাদের উৎসাহিত করতে চান, তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে চান বা কোন কাজে উদ্বুদ্ধ করতে চান। জনসংযোগের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি আমাদের মনে রাখা দরকার।
প্রাত্যহিক কথাবার্তায় ও সব বিষয়গুলোই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়ে থাকে আর সারাদিনে নানাভাবে কার্যকর হতে থাকে। কখনও আমরা হয়তো কোন হালকা ধরণের আলাপ আলোচনায় মেতে থাকি আবার পরক্ষণেই কোন প্রয়োজন দেখা দিলে কোন পণ্য সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই। এই বইয়ে লেখা নিয়মগুলো কাজে লাগাতে পারলে সব রকম অবস্থাতেই তাকে কাজে লাগানো যাবে। এ থেকে আমরা
যে কোন ভাবেই নানা ধারণা লাভ করে অপরকে কোন কাজে লাগাতেও পারি।
১. প্রাত্যহিক কথাবার্তায় নির্দিষ্ট বর্ণনা রাখুন
মাত্র একটা নিয়ম নিয়ে দেখা যাক এবার। মনে রাখবেন, প্রথম পরিচ্ছেদে বলেছি আপনার বক্তব্য রাখার সময় তাকে বর্ণনাময় করা চাই। এটা করলে আপনার বক্তব্য বেশ সহজ আর সজীব হয়ে উঠবে। অবশ্য কোন একদল শ্রোতার সামনেই এটা করার কথা বলেছি। তবুও রোজকার কথাবার্তায় এর কি কোন দাম নেই? অবশ্যই তা আছে। প্রাত্যহিক মেলামেশা আর আলাপ আলোচনাতেও এর মূল্য অনেক।
তবে একটা বিষয় জেনে রাখা দরকার। কথাবার্তায় এই দক্ষতা অর্জন করতে হলে নিজের উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখা অবশ্যই চাই। অল্প কিছু লোকজনের কাছে কথা বলতে গেলেও আপনার ধারণাকে : স্পষ্ট রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় নিয়েই বক্তব্য রাখা চাই-কথা শুরু করার পর দেখবেন কেমন তরতর করে এগিয়ে চলেছেন।
গৃহকর্ত্রীরা এ ব্যাপার থেকে যথেষ্ট সুফল পেতে পারেন। সিনসিনাটির মিসেস আর. ডি. হার্ট লিখেছিলেন, ‘দেখতে পেলাম আমার নতুন অভিজ্ঞমতা কতখানি আনন্দের হয়ে উঠেছে। সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় ঘটমান বিষয় আমার যথেষ্ট অবহিত করে তোলে। আমি কথা বলতে পেরে দারুণ খুশি হই।’
কোন শিক্ষিকার কাছে ব্যাপারটা নতুন নয়। আমরা অনেকে কিন্তু শিক্ষকের কাজ না করলেও প্রাত্যহিক জীবন যাপনের সময় অনেক সময়েই কাউকে না কাউকে কিছু শেখানোর জন্য বলে থাকি। বাবা মা তার সন্তানদের শেখানোর জন্য বলেন, পড়শীরা অনেক বিষয়ে উপদেশ বা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, ভ্রমণবিলাসীরা সহজে সস্তায় কোন্ পথে ভ্রমণ করলে ভাল হয় বলেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই এসব করা হয়।
২. কর্মক্ষেত্রে জনসংযোগ কৌশল কাজে লাগান
এবার আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কর্মক্ষেত্রে এই জনসংযোগ কৌশল কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সেটাই দেখব। মনে রাখবেন বিক্রয় প্রতিনিধি, ম্যানেজার, করণিক-গ্রুপ নেতৃত্বের অধিকারী, ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক–আমরা এর যে কোন পদেই কাজ করি না কেন, আমাদের দায়িত্ব থাকে নিজেদের বিশেষ এলাকা সম্বন্ধে অপরকে শেখানো। এটা অনেক সময়েই পেশাদারী হতে পারে। এই সব কাজে নিজেদের দক্ষতা প্রকাশ বহু ক্ষেত্রেই আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নতির সহায়ক হয়ে ওঠে। কিছু জানানোর সময় দ্রুত চিন্তা করা আর সেই জ্ঞান চমৎকারভাবে পরিবেশন করাই দক্ষতার লক্ষণ। এই কারণেই দক্ষতা অর্জন তখনই আরও ভাল হতে পারে যদি আমরা জনসংযোগের সহজ নিয়মকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। ক্রেতার কাছে বিক্রয় প্রতিনিধি, ছাত্রের কাছে শিক্ষক, অধস্তন কর্মীর কাছে ম্যানেজার সকলেই তাদের লব্ধ জ্ঞান সুষ্ঠুভাবে পরিবেশন করতে পারেন।
৩. জনসংযোগের সুযোগ অন্বেষণ করুন
এই বইয়ে জানানো প্রতিদিনের বক্তব্য রাখার বিষয় কাজে লাগানো সুযোগ আপনাকে তৈরি করে নিতে হবে। আপনাকে অনবরত জনসংযোগের সুযোগ খুঁজে নিতে হবে। এটা কিভাবে করবেন? যে সব ক্লাবে জনসংযোগকারী বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ আছে সেখানে সদস্য হতে পারেন। তার নিছক সদস্য হলেই হবে না, আপনাকে কার্যকর ভূমিকাও নিতে হবে। সদস্যদের সামনে কথা বলার অভ্যাসটি গড়ে তুলতেও হবে।