আমেরিকার সেকালের বিখ্যাত সেনাপতি জেনারেল গ্র্যান্ট এই পোশাকের ব্যাপারে একবার তীব্র অনুশোচনা করেছিলেন। গৃহযুদ্ধ শেষে শত্রুপক্ষের সেনাপতি জেনারেল লী যখন অ্যাপোম্যাটক্স কোর্ট হাউসে গ্ল্যান্টের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য আসেন, তার দেহে ছিল নতুন সামরিক পোশাক। তাঁর কোমরের একপাশে ঝুলছিল বহু মূল্যবান একখানা তরবারী। অন্যদিকে গ্ল্যান্টের দেহে কোন কোট ছিল না, তরবারীও ছিল না। তার দেহে ছিল একটা শার্ট আর ট্রাউজার। নিজের আত্মজীবনীতে গ্র্যান্ট লেখেন, তুলনায় আমাকে অতি দরিদ্র আর তুচ্ছ দেখাচ্ছিল আমার পাশেই দাঁড়ান ছিল ছ’ ফিট দীর্ঘ এক সুপুরুষ, চমৎকার নিখুঁত তার পোশাক। ওই ঐতিহাসিক দিনটিকে নিখুঁত পোশাক না পরে থাকার জন্য সারাজীবন অনুতাপ করেছিলেন জেনারেল এ্যান্ট।
ব্যাপারটি এই রকমই হয়। বক্তাও সব সময়েই শ্রোতাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টির মধ্যে থাকেন–তাকে আতস কাঁচের নিচে রেখেই যেন যাচাই করা হতে থাকে, তার সামান্যতম ক্রটিও অনেক বড় হয়ে উঠতে পারে।
কথা শুরু করার আগেই আমরা গৃহীত বা বাতিল হই
বেশ কয়েক বছর আগে আমি একজন নামী সফল ব্যাঙ্কার সম্পর্কে আমেরিকান ম্যাগাজিনে লিখছিলাম। তার এক বন্ধুকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম ভদ্রলোকের সাফল্যের কারণ কি? সেই বন্ধুটি উত্তরে বলেছিলেন সাফল্যের কারণ হল তার বিজয়ী হাসি। প্রথমে ভেবেছিলাম কথাটায় বাড়াবাড়ি আছে, পরে জেনেছিলাম কথাটা নিছক সত্যি। সত্যিই এই ধরনের বিজয়ী হাসি শ্রোতার মন জয় করতে সক্ষম।
এক চীনা প্রবাদ আছে, ‘যে হাসতে পারে না, তার কোন দোকান করা উচিত নয়। হাসি অনেক ক্ষেত্রেই ছোঁয়াচে হতে পারে। আমাদের ব্যবহারই শ্রোতাদের মধ্যে অনুকুল ধারণা জাগাতে চায়। তাই আমাদের উপস্থিতির মধ্যে যদি গ্রহণযোগ্য ভাব না থাকে তাহলে শ্রোতাদের মধ্যে প্রথম দর্শনেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জাগতে পারে। তাই জেনে রাখা চাই আমরা কথা শুরু করার আগেই গৃহীত বা বর্জিত হয়ে যাই শ্রোতাদের কাছে। এই কারণেই আমাদের ভাবভঙ্গী এমন হতে হবে যাতে সকলের কাছ থেকে উত্তাপ ভরা আগ্রহ পেতে পারি।
শ্রোতাদের এক জায়গায় কাছাকাছি আনবেন
একজন জনসংযোগকারী বক্তা হিসেবে আমি একটা বিচিত্র জিনিস লক্ষ্য করেছি। যখন কোন বড় হলঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শ্রোতাদের সামনে কিছু বলেছি, তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া খুবই কম হয়েছে। অন্যদিকে কোন দর্শক বা শ্রোতায় ঠাসা ছোট্ট ঘরে যখন কিছু বলেছি শ্রোতাদের মধ্যে তার অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
এর কারণ অনুসন্ধান করে বুঝেছি যে, যত ভাল বিষয়বস্তুই হোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শ্রোতাদের মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া মোটেই হয় না। খালি আসন বা চেয়ার আগ্রহে জল ঢেলে দেয়।
হেনরি ওয়ার্ড বিচার করে বলেছেন, সামান্য বারো জন শ্রোতার সামনে কথা বলেও আনন্দ পাওয়া যায় যদি তারা আমার চারপাশে ঘিরে থাকে। আর এক হাজার শ্রোতাও যদি চার ফিট করে পরস্পরের তফাতে থাকে তাহলে ফাঁকা ঘরে কথা বলছি বলেই মনে হয়।
বিশাল শ্রোতাদের সামনে যে কোন বক্তাই তার বক্তিসত্ত্বা হারিয়ে ফেলেন। তিনি দর্শকদেরই একজন হয়ে যান–এক্ষেত্রে তিনি অনেক সহজভাবে কাজ করতে পারেন কারণ অল্প শ্রোতার সামনে তাঁকে ঢের সতর্ক থাকতে হয়। অতএব সবচেয়ে ভাল হয় শ্রোতার সংখ্যা বেশি হলে।
অল্প শ্রোতাদের সামনে কোন মঞ্চ থেকে না বলাই ভাল। এক্ষেত্রে একই উচ্চতায় তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েই কথা বলা ভাল।
মঞ্চে কোন অতিথি রাখবেন না
আমি একবার অন্টারিওতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে বক্তৃতা করতে দেখেছিলাম। একটু পরে একজন কর্মচারি ঘরের জানালাগুলো খুলে দিতে আরম্ভ করে। এতে কি হয়? হলের প্রায় সমস্ত শ্রোতাই বক্তাকে আমল না দিয়ে ওই কর্মচারীকে লক্ষ করতে থাকে।
এর কারণ শ্রোতারা কিছুতেই কোন চলমান বস্তু না লক্ষ করে পারে না। প্রত্যেক বক্তাকেই কথাটা মনে রাখতে হবে। এছাড়াও বক্তা নিজেও শ্রোতাদের অমনোযোগী করে তুলতে পারেন। আর সেটা করা হয় অকারণে হাত নাড়তে চেয়ে, জামায় হাত দিয়ে, মাথার চুল স্পর্শ করে ইত্যাদি। এ ধরনের মারাত্মক অভ্যাস বর্জন করা চাই।
বিখ্যাত বক্তা ডেভিড বেলাসকো কোন মঞ্চের টেবিলে লাল গোলাপ রাখতে দিতেন না কারণ তা শ্রোদাঁতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এই কারণেই মঞ্চে কোন বাড়তি কাউকে রাখতে দেবেন না। না, কোন অতিথি নয়।
.
১৪. যা শিখলেন তা কাজে লাগানো
আমার পাঠক্রমের চৌদ্দতম অধ্যায় শেষ হওয়ার পর আমি প্রায়ই শুনেছি আমার ছাত্ররা কিভাবে এই বইয়ের কৌশলগুলো প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগিয়েছে। আমার আনন্দ এতে বাধ মানেনি। আমি বলেছি এই পাটক্রম থেকে বিক্রয় প্রতিনিধিরা তাঁদের বিক্রি বাড়াতে পেরেছেন, উচ্চপদস্থ কর্মীরা প্রোমোশান লাভ করেছেন–আর এর সবই তাদের দক্ষতা বেড়ে গিয়েছে বলেই। আর তা এসেছে তাদের সমস্যা সমাধানে পাঠ্যক্রম কাজে লাগিয়ে।
এন. রিচার্ড ডিলার তাঁর ‘টুডে’জ স্পীচ-এ লিখেছেন : বক্তব্য, কোন বিশেষ ধরনের বক্তব্য, বক্তব্যের ওজন, আর এই বক্তব্যের আবহাওয়া…শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রাণদায়ী রক্ত প্রবাহের ভূমিকা নিতে পারে।’ জেনারেল মোটর কোম্পানির ডেল কার্নেগি পাঠক্রমের অধিকর্তা আর, ফেড. কানোডে লিখেছেন : আমাদের জেনারেল মোটর প্রতিষ্ঠানে আমরা যে বক্তৃতার পাঠক্রম অনুরাগী হয়েছি তার কারণ আমাদের প্রত্যেক সুপারভাইজারই এক একজন শিক্ষক। প্রতিটি নতুন কর্মীকেই তারা গোড়া থেকেই শিক্ষা অনুরাগী করে তোলেন।