অভিজ্ঞদের নাম উল্লেখ করুন
বক্তৃতা করার সময় প্রায়শঃই কোন বিশেষ অভিজ্ঞ মানুষের উদাহরণ দিতে পারেন। অবশ্য সেই
অভিজ্ঞতার উদাহরণ রাখার সময় নিচের কথাগুলি মনে রাখতে হবে :
১। যে উদ্ধৃতি রাখতে চাই সেটি কি নির্ভুল?
২। এটি কি কোন ব্যক্তির নিজস্ব অভিজ্ঞতা লব্ধ অর্থনীতির সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কখনই জো লুইয়ের উদাহরণ রাখা প্রাসঙ্গিক হবে না।
৩। যার উদাহরণ রাখছি শ্রোতাদের তার প্রতি শ্রদ্ধার ভাব আছে তো?
৪। যে অভিজ্ঞতার উদাহরণ রাখবো তা কি শুধু ব্যক্তিগত সুবিধা লব্ধ না অন্যেরও কাজে লাগবে?
আমাদের পাঠক্রমের একজন সদস্য একবার ব্রুকলীনের চেম্বার্স অব কমার্সে বক্তৃতা করার সময় অ্যান্ড্রু কার্নেগীর উদ্ধৃতি দিয়ে ছিলেন। কাজটা কি তিনি ঠিক করেন? হ্যাঁ, ঠিক, কারণ যার কথা তিনি বলেন শ্রোতাদের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র। ব্যবসায় সাফল্যের ব্যাপারে তার চেয়ে যোগ্য কেউ আর নেই। সেই উদ্ধৃতিটি এই রকম :
‘আমার বিশ্বাস যে কোন বিষয়ে প্রকৃত সাফল্য লাভের প্রকৃষ্ট পথ একমাত্র সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা। কারও সম্পদ নানা ভাবে ছড়িয়ে ফেলায় আমি বিশ্বাস করি না। আমার জীবনে এমন কাউকেই দেখিনি–বিশেষভাবে উৎপাদনের কাজে–যিনি নানা বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে অর্থ উপার্জন করেছেন। যে সব মানুষ সফল হয়েছেন তারা একটা লাইন বেছে নিয়ে তাতেই লেগে থেকেছেন।‘
সারাংশ প্রকাশ করুন
দীর্ঘ বক্তৃতার ক্ষেত্রে অনেকটা সময় ধরেই নানা কথা বলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে উপসংহার টানার সময় কিছু বিশেষ পথ গ্রহণ কর্তব্য। দীর্ঘ বক্তৃতায় বক্তা সাধারণতঃ জানা বিষয় উল্লেখ করার ফলে শ্রোতারা অনেক সময় বিহ্বল হয়ে পড়ে, মূল বক্তব্য তাদের কাছে অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। খুব কম বক্তাই ব্যাপারটা উপলব্ধি করে থাকেন। তাঁরা ধরে নেন বিষয়টা তাঁদের কাছে যেহেতু বেশ স্বচ্ছ আর সহজ শ্রোতাদের কাছেও বুঝি তাই। তার কিন্তু কখনই হয় না। শেক্সপীয়ার যেমন বলেছিলেন, ‘শ্রোতারা অনেক কথাই শোনে কিন্তু মনে রাখে কম।’
একজন বিখ্যাত আইরিশ রাজনৈতিক নেতা বলেছিলেন কিভাবে বক্তৃতা দিতে হয়। কথাটা এই রকম : ‘শ্রোতাদের প্রথমে বলুন কি বলতে চলেছেন। তারপর সেটা বলুন, তারপর আবার তাদের বলুন কি বললেন। এই কারণেই তাদের কি বললেন তার সারাংশ আবার বলা চাই। সারাংশের উপকারিতা এই জন্যই অপরিসীম।
এবার ভাল বক্তা হওয়ার জন্য বক্তৃতা দেবার নানা সূক্ষ্ম কারুকার্য আর নিয়ম ছাড়াও দরকার হয় আরও অনেক কিছু। এ হল বক্তার নিজস্ব ব্যক্তিগত বিষয় যা শ্রোতাদের সঙ্গে অনেকখানিই জড়িত। সেগুলো হল এই :
মঞ্চে উপস্থিতি ও ব্যক্তিত্ব
এ সম্পর্কে আগে আলোকপাত করা হলেও বিষয়টি এতই জরুরি যে আরও বিশদ করে জানা দরকার।
ব্যক্তিত্ব অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বংশানুক্রমিক হয়ে থাকে। একে চট করে বদল করা যায় না। যে কোন জনসংযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব অনেকখানি কাজ করে। তাহলে কি ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা সম্ভবপর হয় না? হ্যাঁ, অবশ্যই হয়। এর জন্য অভ্যাস প্রয়োজন। শ্রোতাদের সামনে কথা বলার সময় এজন্য প্রথমেই তাদের মনোযোগ আকর্ষণ প্রয়োজন। এই মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে ক্লান্ত ভঙ্গী হয় মারাত্মক। বক্তাকে তাই মঞ্চে ওঠার সময় বা শ্রোতাদের মুখোমুখি হওয়ার মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে তিনি যেন ক্লান্ত না থাকেন। ধরুন কোন ব্যবসা সংক্রান্ত সভায় আপনি বক্তব্য রাখতে চলেছেন–সেক্ষেত্রে কখনই মধ্যাহ্ন ভোজের পর অফিসে কাজে যোগ দেবেন না। এজন্য আপনার যা চাই তা হল বিশ্রাম।
কোন জরুরী বক্তৃতা করার আগে খাদ্য সম্পর্কেও সতর্কতা নেওয়া দরকার। বিখ্যাত গায়িকা মাদাম সেলবা বলেছিলেন, ‘কোন অপেরা বা কনসার্ট থাকলে আমি অত্যন্ত অল্পই খেতে অভ্যস্ত। অনুষ্ঠান শেষ হলে বাড়ি ফিরে পুরো আহার করতে চাই।’
পোশাক কতটা প্রতিক্রিয়া আনে?
একজন মনস্তত্ত্ববিদ বেশ কিছু মানুষকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিলেন পোশাক তাদের মনে কতখানি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্রায় প্রত্যেকেই স্বীকার করেন যে নিখুঁত পরিপাটি পোশাক পরলে, তার অনুভূতি সকলের মনেই অদ্ভুত একটা ভাবনার জন্ম দেয়। এই ভাব কোন রকমে প্রকাশ করা যায় না। এই নিখুঁত। পোশাক পরা থাকলে তাদের মনে আত্মবিশ্বাস দারুণভাবেই বেড়ে যায় তারা টের পেয়েছে। এতে তাদের আত্মসম্মান বোধও ঢের বেড়ে যায়। তারা লক্ষ্য করে দেখেছেন, তারা সাফল্যের কথা ভাবলে সাফল্য লাভ করাও যেন এতে সহজ হয়ে যায়। যিনি ভাল, নিখুঁত পোশাক পরেন তার উপর এর প্রতিক্রিয়া হয় এই রকমই।
কিন্তু শ্রোতাদের উপর পোশাকের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়? বারবার রক্ষ্য করে দেখেছি কোন জনসংযোগের ক্ষেত্রে বক্তার দেহে যদি ঢোলা ট্রাউজার, ইস্ত্রি ছাড়া কোট আর নোঙরা জুতো থাকে, আর। পকেট থেকে পেন বা তামাকের পাইপ উঁকি মারতে থাকে তাহলে শ্রোতাদের মনে সঙ্গে সঙ্গেই বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে নিখুঁত, ভদ্র, আড়ম্বর বর্জিত পোশাক প্রথম আবির্ভাবেই শ্রোতাদের মনে ভাল ধারণা জাগিয়ে তোলে। এতে একটা শ্রদ্ধার ভাবও শ্রোতাদের মনে জেগে উঠতে শুরু করে।
শুধু পোশাকই নয়। সেই সঙ্গে নিখুঁতভাবে আঁচড়ানো চুল, ফিটফাট মুখভঙ্গী পোশাকের মতই শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই কারণেই প্রত্যেক বক্তাকে বাইরের এ বিষয়েও তীক্ষ্ণ নজর দেওয়া দরকার।