১। কেন পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে সেকথা ঘোষণা করুন, হয়তো তা দীর্ঘ কাজের জন্য বা কোন প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করায়, সরল ভাষায় তা জানান।
২। পুরস্কার গ্রহীতার জীবন সম্পর্কে সামান্য কথায় শ্রোতাদের অবহিত করুন।
৩। বলুন এই পুরস্কার বক্তার কতখানি প্রাপ্য, আর তা প্রদান করে আপনারা কতটা আনন্দিত।
৪। পুরস্কার প্রাপককে অভিনন্দিত করে প্রত্যেকের হয়ে শুভেচ্ছা জানান।
৫। একটা কথা মনে রাখা চাই কথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাই আন্তরিকতার স্পর্শ। তবে এও মনে রাখা দরকার বক্তা বা পুরস্কার গ্রহীতার প্রশংসা করার সময় যেন বেশি বাড়াবাড়ি না করা হয়, কারণ কারও সম্পর্কে অতিশয়োক্তি করা তেমন কঠিন নয়। আমাদের কথাবার্তায় বন্ধুত্বের ভাবটাই বজায় রাখা চাই।
৬। গ্রহণের বক্তব্যে আন্তরিক হন
পরিচিতি দানের বক্তব্যের চেয়ে এটি আরও ছোট হওয়া দরকার। এটা কখনই মনে মনে তৈরি রাখা যায় না, অথচ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক হওয়ায় সুবিধাও অনেক। শুধু ‘ধন্যবাদ’ বা ‘আজ আমার দারুণ আনন্দ’ ইত্যাদিতে কাজ হয় না। একটা সূত্র রাখা চাই এ বিষয়ে। তা হল এই রকম :
১। সকলকে আন্তরিকতা মেশানো ধন্যবাদ জানান।
২। যারা আপনাকে সহায়তা করেছেন, সেই সহকর্মী, মালিক বন্ধু বা আত্মীয়দের প্রশংসা করুন।
৩। সকলকে জানান পুরস্কার আপনার কাছে কতখানি মূল্যবান এবং সকলকে তা তুলে দেখান। কিভাবে তা কাজে লাগাবেন সকলকে বলুন।
৪। সকলকে এজন্য আপনার কৃতজ্ঞতা জানান।
১২. দীর্ঘ বক্তৃতা তৈরি
কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কোন পরিকল্পনা ছাড়া বাড়ি তৈরি করেন না, সেক্ষেত্রে কোন রকম তৈরি না হয়ে বক্তৃতাই বা দেবেন কেন?
কোন বক্তৃতার ব্যাপার হল সমুদ্রে ভ্রমণের মত। তাই যিনি কোথা থেকে শুরু করতে হবে জানেন না, তিনি কোথায় পৌঁছবেন তারও ঠিক থাকে না।
নেপোলিয়ন যে কথা একবার বলেছিলেন মনে হয় তা সোনার অক্ষরে বাঁধিয়ে রাখা দরকার। কথাগুলো এই : যুদ্ধ হল এক ধরণের শিল্পবিজ্ঞান, তাই আগে হতে পরিকল্পনা না নিলে সফলতা হবে অসম্ভব।
বক্তৃতা দেবার ব্যাপারটাও অনেকটা তাই। আশ্চর্যের কথা হল বহুক্ষেত্রেই বক্তারা মনে রাখেন না–বা মনে রাখলেও তা কি কাজে লাগান? না, তা লাগান না। এ বিষয়ে অবশ্য নির্ভুল কোন নিয়ম সামনে রাখা সম্ভব নয়, তবে কিছু এমন বিষয় আছে যা আলোচনা করে মনে গেঁথে রাখা যেতে পারে।
১. গোড়াতেই দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন
আমি একবার নর্থ ওয়েষ্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. লিন হ্যারল্ড হাউকে প্রশ্ন করেছিলাম, বক্তা হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা কি রকম বলে। একটু ভেবে তিনি বলেন : প্রথমেই দরকার আকর্ষণীয় প্রস্তাবনা যাতে শ্রোতাদের চট করে মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। ডঃ লিন একজন বিখ্যাত বক্তা। তিনি যেভাবে সুরু করতেন সেটা একটু দেখা যাক।
কোন ঘটনার উদাহরণ দিয়ে শুরু করবেন
লাওয়েল টমাস ছিলেন একজন খ্যাতনামা সংবাদ বিশ্লেষক, বক্তা, চলচ্চিত্র প্রোডিউসার। তিনি লরেন্স অব অ্যারাবিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে এইভাবে আরম্ভ করতেন :
একদিন আমি জেরুজালেমের ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রীটে হেঁটে চলার সময় ঝলমলে প্রাচ্যদেশীয় পোশাক পরিহিত একজন মানুষের দেখা পাই…. তার পোশাকের একদিকে ঝুলছিল বিশাল একখানা তরবারী….।
এরপরেই তিনি ঘটনাটি বর্ণনা করে যান। এভাবে শুরু করলে ব্যর্থতার আশঙ্কা থাকে না। শ্রোতাদের আগ্রহী করে তোলা যায় সহজেই।
যে বক্তা কোন কাহিনীর মধ্য দিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন, যে কাহিনী তার অভিজ্ঞতা লব্ধ তিনি কখনই ব্যর্থ হন না। যে কোন দীর্ঘ বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে এই ধরণের কাহিনী দিয়ে শুরু করলে সহজে সপ্রতিভভাবে এগিয়ে চলা সম্ভবপর হয়। তবে মনে রাখবেন অতি নাটকীয়তা কখনই আনতে চাইবেন না। প্রতিটি শব্দ আর কথা বলার সময় পরস্পর সম্বন্ধ রেখে চলা চাই। কোনভাবেই শ্রোতাদের বিরক্তি উৎপাদন করতে চাইবেন না।
তাৎক্ষণিক বক্তৃতা আর সেই তুলনায় দীর্ঘ বক্তৃতা করার সময় কিছু বিভিন্নতা থাকবেই।
শ্রোতাদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলুন
যে কোন ছোট ভাষণের ক্ষেত্রে যেমন করা হয়ে থাকে, কোন দীর্ঘ বক্তৃতা আরম্ভ করার সময়ও সেই একই নীতি কার্যকর। অর্থাৎ শ্রোতাদের মানসিক ব্যাপারটা একই রকম থাকায় তাদের আগ্রহ জাগানোই বক্তার প্রথম কর্তব্য হবে। এই আগ্রহ জাগিয়ে তোলার সময় এমনভাবে সুরু করা চাই যাতে শ্রোতারা আরও জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
শ্রোতাদের চাহিদা পূর্ণ করার মতো বক্তব্য রাখুন
নিশ্চিতভাবে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার উপায় হল তারা যা চায় সেটি পাওয়ার পথ ও প্রতিশ্রুতি। যেমন এইভাবে শুরু করা চমৎকার :
‘আমি আপনাদের ক্লান্তি দূর করার উপায় সম্পর্কে বলতে চাই।’
‘আমি আপনাদের আয় কি করে বাড়ানো সম্ভব সেই সম্বন্ধে বলব।
‘আমি কথা দিতে পারি, আমি যা বলব সে কথা যদি দশ মিনিট ধৈর্য ধরে শোনেন তাহলে কিভাবে জনপ্রিয় হওয়া যায় নিশ্চিতভাবেই জানতে পারবেন।’
এই রকম শপথ করার উদ্ধৃতিসহ বক্তব্য শুরু করলে চট করে শ্রোতাদের আগ্রহী করে তোলা যায়। কারণ এখানে শ্রোতাদের ব্যক্তিগত আকাক্ষা যুক্ত থাকে। সকলেই কিছু না কিছু জানার জন্য উদগ্রীব তাই দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা সমাধানে কোন উপায় বা পথ নির্দেশ থাকা শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয়।