অনেক সময়েই দেখা যায় সভায় পরিচয় দানের সময় বক্তার নামটাও ঠিক ঠিক বলা যায় না। জন ম্যাসন ব্রাউন বলেছেন বহুবার হাস্যকরভাবে তাঁর ভুল নাম সভায় বলা হয়। কোন সময় তার নাম বলা হয় জন ব্রাউন ম্যাসন, কখনও বা জন স্মিথ ম্যাসন। বিখ্যাত কানাডীয় হাস্যরস সাহিত্য রচয়িতা ষ্টিফেন লীফক তার একটা বইয়ে লিখেছেন এক সভায় তাঁর পরিচয় দেওয়া হয় এইভাবে :
‘আজকে অনেকেই এখানে এসেছেন মি. লীরয়েডের কথা শোনার জন্য কে তার নাম জানেন? মিঃ লীরয়েড তো আমাদের একান্ত পরিচিত।
ভাবুন ব্যাপারটা, লীফক হয়ে যান লীরয়েড!
তাহলে পরিচয় প্রদানে কি ধরণের কথা বলা উচিত? নীচে এ সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা হয় :
‘আমাদের বক্তা নিজের বিষয়ে একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি যা বলতে এসেছেন তা শোনার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে আছি, বহুদূর থেকেই এজন্য তিনি এখানে এসেছেন। তাই শ্ৰীঅমুককে আপনাদের সামনে পরিচিত করাতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করছি।‘
২. টি. আই. এস সূত্র অনুসরণ করুন
পরিচয় প্রকাশের কাজে টি. আই. এস সূত্র আপনার গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কাজ দেবে। এ হল এইরকম :
১। টি. হল টপিক্স বা বিষয়। অতএব বক্তার বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে প্রথমেই শ্রোতাদের অবহিত করবেন।
২। আই. হল মুখবন্ধ বা ইস্পোরটেন্স। এ ব্যাপারে বক্তব্যের মুখ্য বিষয় মুখবন্ধ দিয়ে শ্রোতাদের অবহিত করুন।
৩। এস. হল স্পিকার বা বক্তা। এক্ষেত্রে বক্তার কৃতিত্ব সুনাম এবং দক্ষতার বিষয়ে সকলকে জানান।
তার নাম প্রকাশ করুন বেশ স্পষ্ট উচ্চারণে।
এই ফর্মূলা বা সূত্র নানাভাবেই কাজে লাগাতে পারেন, আর তা করা যাবে আপনার কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে।
একটা উদাহরণ রাখছি। এটি ‘নিউইয়র্ক সিটি’ কাগজের সম্পাদক হোমার থর্ন নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানীর কর্মকর্তা জর্জ ওয়েলবাউমকে কিছু সংবাদপত্রের কর্মীদের সামনে পরিচয় করাতে গিয়ে বলেছিলেন :
ভদ্র মহোদয়গণ, আজ আমাদের বক্তার বক্তব্য বিষয় হল ‘টেলিফোন ব্যবস্থা ও আপনি’।
‘আমার মনে হট কেড যখন টেলিফোন করতে চান তারপর যা হয় সেটা একটা মস্ত রহস্য।‘
‘আপনারা ভুল নম্বর পান কেন? কেনই বা নিউইয়র্ক থেকে শিকাগোয় টেলিফোন করা পাশের শহরে করার চেয়ে কঠিন হয়ে পড়ে? আমাদের বক্তার এর উত্তর জানা আছে। গত বিশ বছর ধরে এ নিয়ে তিনি নাড়াচাড়া করেছেন।’
‘আজ তিনি আপনাদের সামনে কথা বলবেন। তিনি আজ আপনাদের কাছে একজন দেবদূত। তিনি টেলিফোন কোম্পানীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী।‘
‘ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহিলাগণ, এবার আপনাদের সামনে আসছেন মিঃ জর্জ ওয়েলবাউম’।
লক্ষ্য করে দেখুন কি কৌশলে পরিচয় প্রদান করা যায়। আমার বিশ্বাস এই পরিচয় প্রদানের কথাগুলো কখনই মুখস্থ করা হয়নি–এটা কখনও করা উচিত নয়। পরিচিতি দান সব সময়েই স্বতঃস্ফুর্ত হওয়া চাই।
৩. উৎসাহী হয়ে উঠুন
কোন বক্তাকে পরিচিত করার সময় আপনার হাবভাবের ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ হতে চাইবেন। শুধু মুখের কথা না বলে আপনার ভাবে, আবেগে তা প্রকাশ করা চাই। পরিচয় প্রকাশ করার মুহূর্তে যদি বেশ কিছুটা রহস্যের আমেজ আনতে পারেন তা হলে তো কথাই নেই। শ্রোতারা তা পরিপূর্ণ উপভোগ করবেন।
আপনাকে পরিচিতি প্রদানের সময় প্রথমে বক্তার বক্তব্য বিষয় উল্লেখ করতে হবে। কথা বলার শেষেই বক্তার পরিচয় প্রদান করা দরকার। এই সময় স্পষ্ট উচ্চারণে, থেমে থেমে সঠিক নামটি করবেন।
আরও একটা কথা অবশ্য মেনে চলা চাই–তা হল পরিচয় প্রকাশ করার সময় কোনভাবে কখনই বক্তার দিকে তাকাবেন না। শ্রোতাদের কথাও ভাববেন না।
৪. আন্তরিক হয়ে উঠুন
সবশেষে আন্তরিক হওয়া চাই। কোন হালকা কথা বলবেন না। কোন বেফাঁস মন্তব্য মারাত্মক হতে পারে। শ্রোতারা এ ধরণের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করতে পারে। মনে রাখবেন বক্তার সঙ্গে আপনার সৌহার্দ্য বা বন্ধুত্ব থাকতে পারে, কিন্তু শ্রোতাদের সঙ্গে তা থাকে না। সেটা গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনারই। অতএব আপনাকে সেইভাবেই চলতে হবে।
৫. পরিচিতি প্রদানের বক্তৃতা ভালভাবে তৈরি রাখুন
‘এটা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে যে মানুষের মনের সবচেয়ে বড় আকাঙক্ষা হল সম্মান পাওয়া।‘
কথাটা বিখ্যাত লেখিকা মার্জোরি উইলসন যখন বলেন তখন সত্যিকার সকলের মনের কথাটাই বলেছিলেন। আমরা সবাই জীবনে এগিয়ে চলতে চাই। আমরা চাই সকলে আমাদের প্রশংসা করুক। আমরা অন্যের নজর কাড়তে চাই। আর সেটা শুধুমাত্র মৌখিক প্রশংসা বা কোন পুরস্কার যাই হোক না কেন। এটার যাদুকরী শক্তি আছে।
বিখ্যাত টেনিস তারকা অ্যালথিয়া গিবসন এই সব মানব মনের আকাঙ্খর কথা তাঁর আত্মজীবনী ‘আই ওয়ান্টেড টু বি সামবডি’ তে চমৎকারভাবে বলেছেন।
আমরা যখন কোন পরিচয়জ্ঞাপক কথা বলতে চাই তখন আমরা বুঝিয়ে দিতে চাই বক্তা সত্যিই একজন বিখ্যাত মানুষ। কোন বিশেষ বিষয়ে তিনি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এ সম্মান তাঁর প্রাপ্য। আমরা তাই তাঁকে সম্মানিত করতে চাইছি! আমরা যে পুরস্কার দিতে চাই তা হয়তো অতি সামান্যই, কিন্তু গ্রহীতার কাছে তার মূল্য অনেকখানি। শ্রোতারাও এ ঘটনা চিরজীবন মনে রাখেন।
পরীক্ষায় প্রমাণিত শ্রেষ্ঠ একটি সূত্রের উদাহরণ দিচ্ছি :