বেশ ক’বছর আগে কিউবা থেকে একটা তার পেয়ে বেশ অবাক হয়ে যাই। সেটা এই রকম : আপনার জবাব না পেলে আমি নিউইয়র্কে এসে একটা বক্তৃতার জন্য শিক্ষা নেব।’ সই ছিল : মারিও লাজো’। লোকটির নামও আমার শোনা ছিল না।
মিঃ লাজো নিউইয়র্কে এসে বললেন : ‘হাভানা ক্লাব একটা অনুষ্ঠানে তাদের পঞ্চাশ বর্ষ পূর্তি পালন করবে আর আমাকেই প্রধান বক্তা করা হয়েছে। আমি একজন অ্যাটনী, জীবনে জনগণের সামনে বক্তৃতা করিনি। যদি তাই ব্যর্থ হই তাহলে স্ত্রী দুঃখ পাবে আর সমাজেও ছোট হয়ে যাব। তাই কিউবা থেকে ছুটে এলাম, যদি কোন কিছু করতে পারেন। মাত্র তিন সপ্তাহ সময় আছে।
ওই তিন সপ্তাহে মারিও লাজোকে নানা ক্লাসে প্রতি রাতে তিন চারবার বক্তৃতা দেওয়ালাম। তিন সপ্তাহ পরে তিনি সেই বক্তৃতাও দিলেন। তাঁর বক্তৃতা এতই ভাল হল যে টাইম পত্রিকায় তাঁকে বিরাট প্রশংসা করা হয়।
ঘটনাটাকে অলৌকিক মনে হচ্ছে? ঠিকই তাই, বিংশ শতাব্দীতে ভয় জয় করার এক অলৌকিক ঘটনা।
২। নিজের উদ্দেশ্য সামনে রাখুন।
মিঃ ঘেন্ট যখন নতুন দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মনের সুখে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন যা করেছিলেন সেটাই মনে হয় তার সাফল্যের কারণ। তবে এটা ঠিক, তিনি আমার নির্দেশ মেনে চলেছিলেন। আমার ধারণা তিনি তা করেন একজন বক্তা হবেন বলেই। তিনি ভবিষ্যতকে সামনে রেখে কাজ করে গেছেন। আপনাকেও সেইভাবে ভবিষ্যকে সামনে রেখে বাস্তবায়িত করতে হবে।
আপনার আত্মবিশ্বাস এবং সন্দুরভাবে কথা বলবার ক্ষমতা যা সহজবোধ্য হয়ে উঠবে তার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। এটা হলে সমাজে, বন্ধু মহলে আপনার প্রতিপত্তি কতটা বাড়বে, ব্যবসায়ে এটা কতখানি কাজে লাগাতে পারবেন সেকথাই আপনাকে ভাবতে হবে। সংক্ষেপে এটাই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে।
বক্তৃতা ও ব্যবসায়ে প্রতিপত্তি’ নামে এক প্রবন্ধে ন্যাশনাল ক্যাস বেজিন্টার কোম্পানীর চেয়ারম্যান আর ইউনেস্কোর চেয়ারম্যান এস. সি. অ্যালিন লিখেছেন, ‘আমাদের ব্যবসার ইতিহাসে অনেকেই মঞ্চে উঠে চমৎকার কাজ করেছেন। বেশ কয়েক বছর আগে কানসাসের এক তরুণ আমাদের শাখা অফিসে বিচিত্রি এক ভাষণ দেয়। আজ সেই আমাদের বিক্রয়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। আমি জানি আজ তিনি কোম্পানীর প্রেসিডেন্ট।’
আপনার ভাষণের ক্ষমতা আপনাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে আপনার ধারণা করার শক্তি নেই। আমাদের একজন স্নাতক, মাৰ্জো কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট হেনরী ব্ল্যাকস্টোন বলেন কার্যকর ভাবে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ আর তাদের সহযোগিতা লাভকেই শিখরে ওঠার সিঁড়ি বলেই আমরা মনে করি।
একবার ভাবুন আপনার শ্রোতাদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আনন্দ কতখানি। আমি সারা বিশ্বে ভ্রমণ করে দেখেছি শ্রোতাদের বক্তৃতা দান করে মুগ্ধ করে রাখার চেয়ে বড় সুখ আর কিছুতেই নেই। এর মধ্য দিয়ে আপনি লাভ করেন একটা ক্ষমতার অনুভূতি।
এবার কোন সভায় বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন ভেবে নিন। আত্মবিশ্বাস নিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছেন মঞ্চের দিকে, চারদিকে নিস্তব্ধ। শ্রোতাদের আপনার কথায় মুগ্ধ করে তুলেছেন, তারপর বক্তৃতা শেষ হতেই শুধু করতালি আর প্রশংসা বাণীর শব্দ। মনে রাখবেন এর একটা অদ্ভুত মাদকতা আছে।
হার্ভার্ডের বিখ্যাত মনস্তত্বের অধ্যাপক উইলিয়াম জেম্স যে ক’টি কথা লিখে গেছেন তা আপনার জীবনে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কথাগুলো আপনার মনে আলিবাবার মত সাহসের দরজাই খুলে ধরতে পারে। কথা কটি এই : ‘যে-কোনো বিষয়ই হোক তার প্রতি আপনার আকাঙক্ষা আপনাকে রক্ষা করতে পারে। যদি কোন ফল লাভ আশা করেন নিশ্চিত তা পাবেন। যদি ভাল হতে চান-তাই হবেন। যদি শিক্ষিত হতে চান শিক্ষিতই হবেন। একাগ্র হয়ে এগুলো চাইলেই তা লাভ করতে পারেন। সঙ্গে শুধু একশরকম অনাকাঙিক্ষত জিনিস চাইবেন না।‘
ছোট ছোট দলের সামনে ভাষণ দেওয়া শেখা জনগণের সামনে সাধারণ বক্তৃতার চেয়ে অন্যান্য সুযোগ এনে দেয়। আসলে সারা জীবনে আপনি চিরাচরিত কোন জনগণের সামনে বক্তৃতা না করে থাকলেও এই শিক্ষা থেকে যা পাবেন তার মূল্য অনেক। একটি হলো, এই ভাষণ শিক্ষা আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। আপনি যেই বুঝতে পারবেন যে আপনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে একদল মানুষের সামনে বক্তৃতা দিতে পারেন, এটা অনায়াসেই মেনে নেওয়া যায় ঢের বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একজনের সঙ্গে কথা বলবেন। আমার ছাত্ররা যখন দেখেন তাঁরা ক্লাসের সহপাঠিদের সামনে বক্তৃতা দিতে সক্ষম আর তাতে ছাদ ভেঙে পড়ে না। এর ফলে তারা তাদের বন্ধু বান্ধব, পরিবার, ব্যবসায়িক সহযোগী, ক্রেতা সকলকেই উজ্জীবিত করতে পারেন।
এই ধরনের শিক্ষায় ব্যক্তিত্বের যে পরিবর্তন হয় সেটা সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে না। অল্প কিছুদিন আগে আমি আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, সার্জন ড. ডেভিড অলম্যানকে প্রশ্ন করি, মানসিক আর শারীরিক দিক থেকে জনসংযোগের শিক্ষার উপকারিতা কী? তিনি হেসে জবাবে বলেন যে তিনি এজন্য একটা প্রেসক্রিপশন লিখে দেবেন। এটা কোন ওষুধের দোকান তৈরি করতে পারবে না, এটা তৈরি করতে হবে সেই ব্যক্তিকেই, তিনি যদি পারবেন না ভাবেন তাহলে ভুল করবেন।