আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে এই ধরনের কথা বলে যাওয়ার কৌশল শিক্ষা দারুণ শিক্ষণীয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতি যত বেশি করে অনুশীলন করা যায় ততই দক্ষতা বাড়তে থাকে। আর তার ফলে যে কেউ ব্যবসা বাণিজ্য, বিক্রয়, সামাজিক মেলামেশা, সভা সমিতি সর্বত্রই সফলতা পেতে পারবেন তাতে কোন সন্দেহের কারণ নেই।
২. তাৎক্ষণিক বক্তব্য রাখতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন
আপনাকে যখনই কোন অনুষ্ঠান বা সভায় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে ডাকা হয়, তখন নিশ্চয়ই আপনি যে কোন বিশেষ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করবেন সেটা ধরে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে যেটা প্রয়োজনীয় তা হল, আপনি যেটুকু সময় কথা বলার জন্য পাবেন সেই সময়টুকুতে আপনি যা বলতে চান সেটা কেমনভাবে সমাধা করবেন। এটা বেশ এক সমস্যা। সবচেয়ে ভালো উপায় হল যে বিষয়ে আপনি বলতে চাইবেন সে সম্পর্কে নিজের মনকে চট করে তৈরি করে ফেলা।
এমন ক্ষেত্রে যা করণীয় সে সম্বন্ধে আমার পরামর্শ হল এই রকম : মনের দিক থেকে যে কোন পরিস্থিতিতে যে কোন সময় তাৎক্ষণিক কথা বলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন। এটা করার জন্য আপনাকে বেশ একটু চিন্তা করতে হবে। পৃথিবীতে এই ঠিক মত চিন্তা করা কাজটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। তবে আমি নিশ্চিত যে কোন মানুষই তাৎক্ষণিক বক্তা হিসেবে নাম কিনতে বা দক্ষতা অর্জন করতে পারে না যদি না সে আগে থেকে চিন্তা ভাবনা করে জনতা বা শ্রোতাদের মন বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জন করে। একজন দক্ষ বিমান-চালক যেমন আগে থেকেই সবরকম সমস্যা বা পরিস্থিতির একটা আগাম মূল্যায়ন করে নিয়ে নিজেকে যে কোন অবস্থায় মানিয়ে নিতে তৈরি রাখে; বক্তাকেও তাই করতে হয়। তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দেওয়ার আগেও তাই বক্তাকে হাজার হাজার বার এ ধরণের বক্তৃতা অনুশীলন করতে হবে।
তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দেওয়ার কিছু সুবিধাও আছে–যেমন, এই বক্তৃতা তেমন দীর্ঘ হয় না। স্বাভাবিক ভাবেই অল্প সময় ধরে বলতে হয় বলে আপনি সহজেই আপনার বক্তব্য বিষয় ঠিক করতে পারেন। অর্থাৎ অবস্থার পরিস্থিতিতে কোন বিষয় মানানসই হবে। তৈরি হয়ে আসেন নি বলে কখনও মার্জনা চাইতে যাবেন না। এটা সকলেই ধরে নেয় আপনি সময় মত আপনার কথা শুরু করবেন।
৩. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা উদাহরণ দিন
উদাহরণ দেবেন কেন? প্রশ্নটি স্বাভাবিক। এর তিনটি কারণ আছে :
(১) যেহেতু আপনার পরের কথাটার জন্য কঠিন চিন্তা করা থেকে নিজেকে রেহাই দিতে পারবেন,আর তা হওয়ার কারণ হল অভিজ্ঞতা এমনই জিনিস যে তাৎক্ষণিক কথা বলার সময়েও তা সহজেই মনে পড়বে।
(২) আপনি কথা বলার প্রেরণা বোধ করতে থাকবেন, দেখবেন আপনার প্রথম দিকের সমস্ত দূর্বলতা আর ভয় সহজেই দূর হয়ে যাবে এবং আপনি বক্তব্য বিষয় নিয়ে বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠবেন।
(৩) আপনি সহজেই আপনার শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন।
আগেই সপ্তম পরিচ্ছেদে যেমন বলেছি, এই রকম ঘটনার উদাহারণ রাখা হল শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণের নিশ্চিত পথ।
এটা সহজেই দেখা যাবে, আপনার বক্তব্যের মানবিক আকর্ষণের দিকটা সহজেই শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করতে সক্ষম হয়। প্রথম কয়েক মুহূর্তেই এর প্রমাণ মিলবে। এইভাবে শ্রোতা আর বক্তব্য মধ্যে যে যোগসূত্র স্থাপন হয় তা সহজেই বজায় রাখা যায়। এই কারণেই আমি উদাহরণ রাখার কথা বলতে চাই।
৪. সজীবতা আর দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলুন
এ বইতে আগে যেমন বলা হয়েছে, আপনি যদি সজীবতা আর দৃঢ়তা মিশিয়ে কথা বলেন, আপনার বাইরের সজীবতা মনের চেহারাও বদলে দেবে। কাউকে বক্তৃতা করার সময় নানাভাবে অঙ্গ সঞ্চালন করতে লক্ষ্য করেছেন কখনও। দেখলে বুঝবেন দক্ষ বক্তা তার অঙ্গ সঞ্চালনও করেন। এর কারণ হল শারীরিক কাজের সঙ্গে মনের একটা অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধ আছে। উইলিয়াম জেমস ও এ কথা স্বীকার করেছেন।
৫. ‘এখনই’ এই নীতি কাজে লাগান
এমন একটা সময় আসবে যখন কেউ হয়তো আপনার কাঁধে হাত রেখে বলতে পারে, কিছু বলুন আপনি।’ বা এমনও হতে পারে কোন জানান না দিয়েই কেউ হয়তো পরবর্তী বক্তা হিসেবে আপনারই নাম করে বসল।
এমন অবস্থায় পড়লে যেন সেই স্টিফেন লী ফকের ঘোড়সওয়ারের দশাই হয়-ঘোড়াটা চারদিকে ছুটতে থাকে। এমন কোন অবস্থায় পড়লে শান্ত থাকবেন। মনে রাখতে হবে, শ্রোতারা নিজেদের কথাই ভাবে। অতএব তিনটে পথ থেকে আপনি তাৎক্ষণিক বক্তৃতার জন্য প্রেরণা পেতে পারেন।
প্রথমতঃ আছে শ্রোতারা। সহজভাবে কথা বলতে গেলে এ কথাটা অনুরোধ করছি ভাল করে মনে রাখবেন। শ্রোতাদের কথা আলোচনা করবেন, তারা সমাজের কি ভাল করেন সে কথাও বলবেন।
এবার দ্বিতীয়টি হল উদ্দেশ্য। কোন্ উদ্দেশ্যে সভা হচ্ছে সেটা যাচাই করা চাই, অর্থাৎ কোন বার্ষিকী, রাজনৈতিক সভা, না সাহিত্য সভা।
শেষ পথ হল, আপনার পূর্ববর্তী বক্তা যা বলে গেছেন তারই জের টেনে কিছু উদাহরণ রাখা। সত্যিকার তাৎক্ষণিক বক্তৃতা হল সেটাই যা সত্যিই করেই তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া হয়।
৬. তাৎক্ষণিক কথা বলবেন না, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দিন
উপরের কথা দুটোর মধ্যে একটু তফাৎ আছে। তাৎক্ষণিক ভঙ্গীতে উল্টোপাল্টা, সঙ্গতিহীন কিছু বলে যাওয়াই তাৎক্ষণিক বক্তৃতা নয়। আপনাকে, আপনার বক্তব্যের মধ্যে সঙ্গতি রাখতে হবে।