অথচ নিজের কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষ একজন মানুষ। শুধু কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর আদৌ যোগ্যতা ছিল না! এমন হওয়ার কোন কারণ অবশ্য থাকার কথা নয়। কি করে তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দিতে হয় তিনি শিখতে পারতেন। আমার ক্লাসের এমন কোন ছাত্রকে দেখিনি যার পক্ষে এটা শেখা কঠিন। প্রথমেই যা দরকার সেটা ওই ডিরেক্টর কাজে লাগান নি–নিজের পরাজিত মনোভাব জোর করেই দূর করা। কাজটা যতটা কঠিন মনে হোক, মনের জোরেই সে বাধা দূর করা উচিত। আসল প্রয়োজন সাহস।
আপনি হয়তো বলবেন, ‘আমার বক্তব্য যদি আগেই তৈরি করে রাখতাম তাহলে ভাল হত। কিন্তু আচমকা আমাকে কিছু বলতে ডাকা হলে মুখে কথা আসতে চায় না।’
নিজের চিন্তাকে গুছিয়ে নিয়ে হঠাৎ কোন বক্তব্য রাখা অত্যন্ত দরকার হতে পারে-আর সেটা দীর্ঘ পরিশ্রমে তৈরি লম্বা বক্তৃতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আধুনিককালে এধরণের তাৎক্ষণিক বক্তৃতার প্রয়োজন অতি বেশি রকম। বিশেষ করে ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে তো বটেই। বিশেষত আজকের যুগের দ্রুত জীবন-যাত্রার মনকে গুছিয়ে নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অসামান্য। আজকের শিল্পজগতে আর এমনকি সরকারী প্রশাসনেও সমস্ত প্রস্তাব একজন মানুষ গ্রহণ করে না, তা গ্রহণ করা হয় কোন সভায় আলোচনা করে। একজন হিসেবে অনেকের বক্তব্য থাকে, আর তাকে তা তাৎক্ষণিক ভাবেই জানাতে হয়। এখানেই তাৎক্ষণিক বক্তব্য রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
১. তাৎক্ষণিক বক্তৃতা অভ্যাস
মোটামুটি যে কোন বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, যার কিছুটা আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে, তিনিই চমৎকার কোন তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দিতে পারেন। তাৎক্ষণিক বক্তৃতার অর্থ হল, না তৈরি করে কোন কথা বলা। দ্রুত কথা বলে যাওয়ার পদ্ধতি শেখার বেশ কিছু উপায় আছে। একটা পদ্ধতি হল বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পীরা যা করেন সেই পদ্ধতি।
বেশ কয়েক বছর আগে ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্ক আমেরিকান ম্যাগাজিনে একটা প্রবন্ধে বর্ণনা করেন, তিনি চার্লি চ্যাপলিন আর মেরি পিকফোর্ড দু’বছর ধরে প্রত্যেক রাতে একটা খেলা খেলে যেতেন। ব্যাপারটা খেলার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটা আসলে ছিল কথা বলার মত কঠিন শিল্প নিয়ে অনুশীলন করে যাওয়া। খেলাটা সম্বন্ধে ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস এটাই লিখেছিলেন :
আমাদের প্রত্যেকে একটুকরো কাগজে যে কোন বিষয় লিখতাম। এরপর টুকরোগুলো ভাজ করে মিশিয়ে ফেলতাম। এরপর একজন একটা টুকরো তুলত। তারপরেই তাকে কাগজে লেখা ওই বিষয় নিয়ে ষাট সেকেণ্ড কথা বলতে হত। একই বিষয় আমরা দুবার লিখতাম না। এক রাত্তিরে আমাকে ‘ল্যাম্পের ঢাকা নিয়ে বলতে হয়। একবার চেষ্টা করে দেখুন কেমন সহজ। আমি কোন রকমে উতরে যাই।’
‘কিন্তু আসল ব্যাপার হল খেলাটা আরম্ভ করার পর থেকে আমাদের তিনজনেরই বেশ উন্নতি হয়েছে। নানারকম বিষয়ে আমরা অনেকের চেয়েই বেশি জানি। কিন্তু তার চেয়েও যা ভাল তা হল, আমরা যে কোন বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে কিছু বলার ক্ষমতা অর্জন করেছি। দাঁড়িয়ে কিভাবে চিন্তা করতে হয় আমরা শিখেছি।’
আমাদের পাঠক্রমের ক্লাসে সদস্যদের তাৎক্ষণিক কথা বলতে বলা হয়। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বুঝেছি এই ধরণের অনুশীলনে দুটো ব্যাপার ঘটে : (১) এতে প্রমাণ হয় ক্লাসের সকলেই দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে পারে, আর (২) এই অভিজ্ঞতা তাদের তৈরি করা বক্তৃতা দানের সময় আত্মবিশ্বাস আর মজবুত মন গড়ে তোলার সহায়তা করে। তারা বোঝেন কোন অজ্ঞাত কারণে তৈরি করা ভাষণ যদি মনে পড়ে তাহলে তারা তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দিয়ে অবস্থা সামলাতে পারবেন।
আমাদের ক্লাসে তাই কোন না কোন সময়ে তাৎক্ষণিক বক্তব্য রাখতে বলা হয়। তাতে কি হয়? দেখা যায় হয়তো কোন এ্যাকউন্ট্যান্টকে বিজ্ঞাপন নিয়ে বলতে বলা হল। বিজ্ঞাপন বিক্রেতাকে বলা হয় কিণ্ডারগার্টেন নিয়ে কথা বলতে, বা কোন ব্যাঙ্ক ব্যবসায়ীকে বলতে বলা হল কিণ্ডারগার্টেন নিয়ে কথা বলতে, বা কোন ব্যাঙ্ক ব্যবসায়ীকে বলতে বলা হল শিক্ষা সম্পর্কে।
তারা কি মাথা নিচু করে থাকবেন। মোটেই না। যদিও বক্তব্য সম্বন্ধে তাঁর বিশেষজ্ঞ নন, তবুও তাদের জানা তথ্যটুকুই তাঁরা কেবল গুছিয়ে বলার চেষ্টা করবেন। হয়তো কারও কাছে কাজটা কঠিন, আবার কারও কাছে সহজ। আসলে এতে বেশ একটু মজা থাকে। তারা বোঝেন যে বিষয়ে তাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই সে বিষয়েও তাঁদের কথা বলার ক্ষমতা জন্মেছে।
আমার বিশ্বাস আছে তারা যদি এই কাজ পারেন তাহলে যে কেউই তা পারবে–এটা করা সম্ভব ইচ্ছাশক্তি আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে। কেউ চেষ্টা করলেই তা পারবে।
আর একটা পদ্ধতি হল জোড়া লাগানো পদ্ধতি। ব্যাপারটা আমাদের পাঠ্যক্রমের ক্লাসে শেখানো হয়। বেশ সজীব এই পদ্ধতি। ক্লাসের একজন সভ্যকে যে কোন কাহিনী যতটা সম্ভব অদ্ভুতভাবে ঝকমকে করে বলতে বলা হয়। ধরা গেল তিনি বললেন, “আমি সেদিন যখন একটা হেলিকপ্টার চালিয়ে উড়ছিলাম তখন অবাক হয়ে দেখলাম এক ঝাঁক ‘উড়ন্ত চাকি আমার দিকে ধেয়ে আসছে। আমি নামতে শুরু করলাম আর সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি উড়ন্ত চাকি থেকে একজন ক্ষুদে মানুষ গুলি চালাতে আরম্ভ করল। আমি ….।
ঠিক তখনই একটা ঘন্টা বেজে ওঠে কারণ বক্তার সময় ততক্ষণে শেষ হয়েছে। এবার পরবর্তী বক্তাকে ওই গল্পের জের টেনে যেতে হবে। ক্লাসের সকলে এক এক করে তাদের পালা কাহিনী বলে গেলে এর শেষ হবে হয়তো মঙ্গলগ্রহের কোনো খাল বা কংগ্রেসের হল ঘরে।