নিজের অতীত থেকে কাহিনী সংগ্রহ করুন
একবার আমাদের কিছু শিক্ষককে লিখতে বলা হয় বক্তা হয়ে ওঠার কাজে সবচেয়ে বড় কোন সমস্যার তারা মুখোমুখি হন। লেখাগুলো যাচাই করে দেখা যায় প্রায় সব কটিতেই একই রকম কথা লেখা : প্রথম শিক্ষার্থীদের সঠিক বক্তৃতার বিষয় জানানো।
সঠিক বিষয়টি কি? আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন ঠিক বিষয় আপনার জীবনেই নিহিত আছে, আপনার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তা উপলব্ধি করতে পারেন? সেটা কিভাবে খুঁজে পাবেন? অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করার মধ্য দিয়েই তা পাবেন–কারণ যে ঘটনা বা অভিজ্ঞতা আপনার মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে সেটাই সেই বিষয় হতে পারে। বেশ কয়েক বছর আগে আমরা এই বিষয় সম্পর্কে সমীক্ষা চালাই। যে বিষয় শ্রোতাদের প্রিয়, দেখা যায় কারও অতীত জীবনের কোন অভিজ্ঞতাই শ্রোতাদের প্রিয় হতে চায়। এটা হয় নিচের বর্ণনা মতই :
প্রথম জীবন ও গড়ে ওঠা, যে সব বিষয়ে পরিবার, শৈশব স্মৃতি, স্কুলের দিনগুলো থাকে সেগুলোই শ্রোতাদের আকর্ষণ করে। এর কারণ আমরা জানতে চাই মানুষ কিভাবে সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে।
যখনই সুযোগ পাবেন অতীতের ঘটনা থেকে উদাহরণ রাখার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন শ্রোতাদের কাছে এর আকর্ষণ সর্বদাই অসামান্য।
এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক লড়াই : এই কথা কটি বেশ মানবিক আগ্রহে পরিপূর্ণ। এক্ষেত্রে তাই বেশ সহজেই শ্রোতাদের আকর্ষণ করা সম্ভব নিজের অতীত জীবনের লড়াইয়ের কাহিনী উল্লেখের মধ্য দিয়ে। কিভাবে বিশেষ কোন কাজে যোগ দিতে পেরেছিলেন? আপনার কর্মজীবনে কি ধরণের অবস্থার মুখোমুখি হন? আপনার জীবনের নানা বাধা, আশা-আকাঙ্খ, জয়, প্রতিযোগিতাময় জীবনে এগিয়ে চলা সবই আগ্রহ জাগাতে পারে। কারও জীবনের সত্যিকার ঘটনার বিবরণ–নিশ্চিতভাবেই শ্রোতাদের মনোরঞ্জনে সমর্থ।
শখ ও অবসর বিনোদন : এ বিষয়ে জড়িত থাকে ব্যক্তিগত পছন্দ তাই মানুষের আগ্রহ আকর্ষণও করে। আনন্দের জন্য আপনি যা করেন তা অন্যের কাছে আদরণীয় হওয়াই সম্ভব।
জ্ঞানের বিশেষ এলাকা : কোন বিশেষ বিষয়ে কাজ করায় আপনি প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। ওই অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে আপনার কাহিনীর বর্ণনা শ্রোতারা গ্রহণ করবেই।
অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা : কোনদিন কোন বিখ্যাত মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছেন? যুদ্ধের ভয়ঙ্করতার সামনে এসেছেন? বা অন্য কোন অস্বাভাবিক অবস্থার সামনে পড়েছেন? বক্তৃতার ক্ষেত্রে এই সব বিষয় চমৎকার কাজ দেয়।
বিশ্বাস ও ধারণা : আপনি অবশ্যই আজকের দুনিয়ার নানা সমস্যা সম্বন্ধে আপনার অবস্থা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেছেন। এ সম্পর্কে আপনার ধ্যান ধারণার কথা অনায়াসেই বলতে পারেন। শ্রোতাদের চেয়ে কোন বিষয়ে সামান্য বেশি জানা থাকলে সেটা সম্বন্ধে না বলাই ভালো। অন্যদিকে অন্য কোন বিষয়ে আপনার ভালো রকম জ্ঞান থাকলে এটাই হবে আপনার বিষয়। অবশ্য সেটাই কাজে লাগান।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ যেমন বলা হয়েছে কোন বক্তৃতায় শুধু যান্ত্রিক কিছু শব্দ আর বাক্যই থাকে না বা মুখস্থ করলেই চলে না বক্তৃতা মানে কারও ধার করা বাণী বা কাগজের খবর বলে যাওয়া নয়। এর মধ্যে থাকতে হবে আপনার মনের মধ্যে জমা থাকা জীবনের নানা অভিজ্ঞতার নির্যাস। হ্যাঁ, এটাই ঠিক। ওই সম্পদ আহরণ করে আপনাকে ছড়িয়ে দিতে হবে শ্রোতাদের জন্য। এ ধরনের বক্তৃতা সত্যিই উপভোগ্য।
এবার আপনি বক্তৃতার মূল অনুধাবণ করতে পেরেছেন। তাই আসুন এর জন্য দ্বিতীয় যে নিয়মটি প্রয়োজন তাই দেখা যাক :
নিজের বিষয় সম্পর্কে আগ্রহী থাকা চাই
আমি বা আপনি যে সব বিষয় নির্বাচন করি–অবশ্যই শ্রোতাদের সামনে বলার জন্য-সে সম্বন্ধে যে আমাদের পুরোপুরি আগ্রহ আর আকর্ষণ থাকে তা নয়। আমার কথা বলতে পারি যে আমি ডিস ধোয়ার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তবে এটুকু বলি এ বিষয়ে যে বলতে খুব উত্তেজনা অনুভব করব তা কখনই নয়। তবুও আমি শুনেছি গৃহকর্মীরা এ ব্যাপারে চমৎকার বলতে পারেন। কাজটা সম্বন্ধে তারা এতই ঘৃণার ভাব পোষণ করেন যে আবহমান কালের অভিজ্ঞতা তাঁদের দক্ষতার হিমালয়ে তুলে দেয়। এর পরিণতিতে এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য তুলনাবিহীন হয়ে ওঠে।
এবার একটা প্রশ্ন রাখব যাতে আপনি শ্রোতাদের সামনে বক্তব্য বিষয় নির্বাচন করতে আর আলোচনায় সাহায্য পাবেন। কেউ যদি শ্রোতাদের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে সরাসরি আপনার বক্তব্য মানতে অস্বীকার করে তাহলে কি আপনি আপনার বক্তব্যের পক্ষে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারবেন? তা যদি পারেন তাহলে সেটাই হবে আপনার বিষয়।
সম্প্রতি আমার হাতে ১৯২০ সালে লেখা কিছু কাগজপত্র এসেছে। এগুলো আমি জেনেভায় রাষ্ট্রসঙে ঘর ৭ম অধিবেশনের সময় বেড়াতে গিয়ে লিখেছিলাম। একটা প্যারাগ্রাফ এই রকম : তিন চার জন প্রাণহীন বক্তা তাদের বক্তব্য পাঠ করার পর কানাডার স্যার জর্জ ফস্টার উঠে দাঁড়ালেন। বেশ খুশি হয়ে দেখলাম তার হাতে কোন কাগজ ছিল না। তিনি স্বতঃস্ফুর্ত ভঙ্গীতেই বলে চললেন। তাঁর বলবার পিছনে তিনি মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল শ্রোতারা তাঁর বক্তব্য মেনে নেওয়ার চেষ্টাই করছিলেন। আমার পাঠক্রমে আমি যা শিক্ষা দিতে চাই তিনি সেকথাই বলছিলেন।