সতের বছর বয়সে নিউইয়র্কে তাঁর জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটল। যখন তিনি নিউইয়র্কে আটকা পড়লেন তার কাছে তখন একটা ডলারও ছিল না, সাহায্য করার মতো একজন বন্ধুও ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে থার্সটন এক উপাসনালয়ে গিয়ে হাজির হলেন। এক খ্রিষ্ট ধর্মপ্রচারককে তখন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করতে শুনলেন, ‘তোমার মধ্যে একজন মানুষ আছে।’ কথা ক’টি শুনে তিনি অভিভূত ও বিচলিত হলেন! তখন তার মনে স্থির বিশ্বাস জন্মাল, তিনি পাপ করেছেন। সুতরাং তিনি হেঁটে বেদীর কাছে গিয়ে ধর্মপ্রচারকের পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়ে অশ্রু বিসর্জন করলেন, অবশেষে ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করলেন। এবং দু’সপ্তাহ পরে তাকে দেখা গেল চায়না টাউনের এক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তিনি লোকজনকে ধর্মের বাণী শোনাচ্ছেন। তিনি নিজেকে এত সুখী বোধ করলেন যে, তিনি ধর্মপ্রচারক হবেন বলে স্থির করলেন। ম্যাসাচুসেটস-এর এক বাইবেল স্কুলে ভর্তি হলেন থার্সটন এবং নিজের খাওয়া ও থাকার খরচ চালানোর জন্য দারোয়ানের চাকুরি নিলেন। কিন্তু ছয় মাসের পর স্কুলে যান নি তিনি। শেষপর্যন্ত স্থির করলেন যে, তিনি ধর্মপ্রচারক চিকিৎসক হবেন। আর তাই পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য রওনা হলেন।
এ সময় একটা ঘটনা ঘটল, যা তার জীবনের সম্পূর্ণ গতিপথকে পাল্টে দিল। ম্যাসচুসেটস থেকে ফিলাডেলফিয়া যাওয়ার পথে আলবানিতে গাড়ি বদলাতে হবে। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন, ট্রেন আসতে দেরি ভেবে হাঁটতে হাঁটতে এক থিয়েটারে এসে উপস্থিত হলেন। সেখানে আলেকজান্ডার হ্যারম্যান জাদু প্রদর্শন করছেন। আগেই বলেছি, জাদুবিদ্যায় থার্সটনের আগ্রহ ছিল অঢেল। তাই তিনি জাদু সম্রাট হ্যারম্যানের সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন। হ্যারম্যানের কাছে দীক্ষালাভের জন্য। কিন্তু দরজায় নক করার মতো সাহস হারিয়ে ফেললেন তিনি। পরদিন সকালে জাদুকর হ্যারম্যানকে অনুসরণ করে রেল স্টেশনে গেলেন এবং হ্যারম্যানের দিকে নীরব, নির্বাক ও প্রশংসাপূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। জাদুকর তখন সিরাকিউসে যাচ্ছিলেন, থার্সটন যাবেন ভাবলেন নিউইয়র্কে। টিকেট কিনতে গিয়ে তিনি ভুলবশত সিরাকিউসের টিকেট কিনে ফেললেন। আর এই ভুলটাই বদলে দিল তার ভাগ্য। এই ভুলের জন্য তিনি একজন কিখ্যাত জাদুকর পরিণত হলেন।
থার্সটন যখন একজন বিখ্যাত জাদুকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেন, তখন প্রতিদিন তিনি প্রায় এক হাজার ডলার করে রোজগার করলেন। থার্সটন স্বীকার করেছেন, অনেক জাদুকর তার চেয়ে আরো ভালো জাদু বিদ্যা জানতেন। তাহলে, তার সফলতার গোপন রহস্যটা কী ছিল?
তাঁর সফলতার পেছনে মূলত দুটো কারণ নিহিত ছিল–তার ব্যক্তিত্বকে রঙ্গমঞ্চের দর্শকদের মনে গেঁথে দেয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। তিনি মানবপ্রকৃতি উত্তমরূপে অনুধাবন করতে পারতেন এবং প্রদর্শনীতে এভাবে নিজের অনুশীলন ও অভিজ্ঞতার দ্বারা দর্শকদের মাঝে আকর্ষণীয়রূপে উপস্থাপন করতেন। আরেকটি হল তিনি তাঁর দর্শকদের ভালোবাসতেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে লাফ ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সতেজ করে তুলতেন। আর বলতে থাকতেন, ‘আমি আমার দর্শকদের ভালোবাসি। আমি দর্শকদের আপ্যায়ন করতে চাই। আমি একটি চমৎকার কাজ পেয়েছি এবং আমি বড় সুখী। তিনি বিশ্বাস করতেন, নিজে সুখী না হলে অন্যকে তিনি সুখী করতে পারবেন না।
১৯৩৬ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তিনি জাদুকরগণের অধ্যক্ষ এবং ইন্দ্রজালরাজরূপে সর্বজনস্বীকৃত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ চল্লিশটি বছর হাওয়ার্ড থার্সটন বিক্ষিপ্তভাবে পৃথিবীর বহুদেশে বহুবার ভ্রমণ করেছিলেন। হাজারো দর্শককে জাদুবিদ্যায় অভিভূত করেছিলেন তিনি।
বিশ্বের ছয় কোটিরও বেশি লোক তার প্রদর্শনী দেখেছিল এবং তিনিও লাভ করেছিলেন বিশ লক্ষ ডলার।
হেটি গ্রিন : তার আয় ছিল ঘণ্টায় তিন শ ডলার অথচ
একসময় হেটি গ্রিন ছিলেন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ ধনী মহিলা। তার সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ছয় কোটি ডলার। এমন কী তার চেয়েও বেশি। এক বিশাল ধনসম্পত্তির মালিক হয়েও অত্যন্ত সস্তা জীবনযাপন করতেন, যে কোনো ঝাড়ুদারনি তা চেয়ে ভালো পোশাক পরে, ভালো খাবার খায় এবং ভালো বিছানায় ঘুমোয়। মোটেই বিলাসিতা করতেন না তিনি।
হেটি গ্রিনের আয় ছিল প্রতিমিনিটে পাঁচ ডলার বা ঘণ্টায় তিনশ ডলার অথচ প্রতিদিন সকালবেলা তিনি দুসেন্ট দিয়ে যে কাগজ কিনতেন তা পড়ে আবার বিক্রি করে দিতেন। দেশের প্রায় প্রত্যেকটা রেলপথের বন্ড তার ছিল, দুটো রেলপথ সবসুদ্ধ কিনে ফেলেন অথচ রেলগাড়িতে ভ্রমণের সময় বিলাস কামরায় না বসে সাধারণ কামরাতেই বসে ভ্রমণ করতেন।
অত্যন্ত নিম্নমানের এবং কমদামি খাবার খেতেন হেটি গ্রিন; কিন্তু তিনি ছিলেন সুন্দরী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। আটাত্তর বছর বয়সে তার কমনীয় স্বাস্থ্যের গোপন রহস্য সম্পর্কে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করায় তিনি বলছেন, সকালবেলা একটুকরো কেবল মাংস, আলু ভাজি, এক পেয়ালা চা ও দুধ দিয়ে নাস্তা করতেন; মাংসের টুকরো ও দুধের জীবাণু মারার জন্য সারা দিন ধরে সেঁকা পেঁয়াজ চিবোতেন।