লরেন্স টিবেট ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ডে শৈশবকাল কাটান। তার বাবা ছিলেন একজন রাখাল। তিনি গোচারণ ক্ষেত্র ঘোড়ায় চড়ে তদারক করতেন। তার কোমরে সবসময় মুক্তাখচিত বাটওয়ালা একটি রিভলভার রাখতেন। তার লক্ষ ছিল অব্যর্থ। পশ্চিমাঞ্চলের এক কুখ্যাত ব্যাংক লুটকারী ডাকাত জিমম্যাক কিনির সাথে এক সংঘর্ষে তাঁর বাবা গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা যান। টিবেট বলেছেন যে, বাবার এই করুণ মৃত্যু না হলে তিনি একজন গায়ক এবং অভিনেতা হওয়ার সাহস করতেন না। তার বাবার শিক্ষা তার ওপর জাদুকরী প্রভাব বিস্তার করেছিল। এখনো তিনি বছরে মাত্র একটা সিগার খান এবং যখন খান তার মনে হয়ে যে, সাংঘাতিক ধরনের একটা অন্যায় করছেন আর সাক্ষাৎ শয়তান দাঁড়িয়ে অন্যায়ের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
স্কুল জীবনে টিবেটের মনে হীনতাবোধের সৃষ্টি হয়। তার মা ঘরভাড়া দিতেন। তার মাত্র একপ্রস্থ কাপড় ছিল, পাজামাগুলো অত্যন্ত ছোট হয়ে গিয়েছিল এবং তার বান্ধবীকে একটা আইসক্রিম সোডা কিনে দেওয়ার মতো পয়সা তার পকেটে থাকত না। ক্লাসের অন্যান্য ছেলেরা তাচ্ছিল্য করে পাত্তা দিত না। তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে, খ্যাতি অর্জন করতে হবে এবং কীভাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায় তার সোজাপথ খুঁজতে লাগলেন। তিনি স্কুলের গ্নি ক্লাবের সদস্য হতে চাইলেন এবং নাটকে অভিনয় করতে চাইলেন কিন্তু তারা তাকে নিল না। অথচ এই বালক যিনি কিনা ক্যালিফোর্নিয়ার সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত গায়ক হিসেবে খ্যাতিলাভের জন্য ভাগ্য কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে আছেন, তিনি স্কুলের একটা কনসার্টে গান গাইতে চাইলে নিদারুণভাবে প্রত্যাখ্যাত হন। অবশ্য তার বয়স একুশ হওয়ার আগে তার কণ্ঠস্বরে প্রতিভার ফুলিঙ্গ স্ফুরিত হয় নি। তার গাওয়া পর্যন্ত যত গান লেখা হয়েছে তার মধ্যে ‘দ্য এন্ড অব এ পারফেক্ট ডে’ একটি অন্যমত শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় গান। বিশ্বের পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি লোক এই গানের রেকর্ড কিনেছেন এবং লরেন্স টিবেট বলেন যে, এই সাধারণ গানটা ছিল সত্যিই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।
লর্ড বায়রন : মানুষের মাথার খুলিতে করে মদ পান করতেন
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম লগ্নে একজন আদর্শ প্রেমিক কেমন ছিল, কী ধরনের পুরুষ আমাদের দাদি নানিদের বুকে দুপদাপ সৃষ্টি করত আর উনুনের পাশে বসা দাদা-নানিদের ঈর্ষান্বিত আশক্ষায় বুকের ভিতর মোচড় মারত কোনো নারীরা? কারা ছিল সেদিনের ডন জুয়ান, ভ্যালেন্তিনো, ক্লার্ক গেলব? উত্তরটা সহজ। তখনকার দুনিয়াতে এমন কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিল না যে কি না মহিলাদের ব্যাপারে ভাবপ্রবণ জর্জ গর্ডন, লর্ড বায়রন-এর পাশে দাঁড়াতে পারত।
আপনারা জানেন লর্ড বায়রন ছিলেন তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর কাব্যগ্রন্থের প্রভাবে সমসাময়িক সাহিত্য অঙ্গনের সকল প্রবণতা বদলে গিয়েছিল! তার সাহিত্য রচনা ছিল আবেগময় ও স্বতন্ত্র। বায়রনের জীবনটাও ছিল বৈচিত্র্যময়। ডজন ডজন সুন্দরী মহিলার সাথেও প্রেম করেছেন। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে বায়রন তার নিজের সৎবোনের সাথেও প্রেমে লিপ্ত হয়েছেন। যে প্রেমের। অপবাদ সমস্ত ইউরোপকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। আর এতে তছনছ হয়েছিল জীবনটা। বোনের প্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর তার উদ্দেশ্যে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা রচনা করেছেন। তার ক’টা লাইন হচ্ছে
যদি আবার পাই গো তোমার দরশন
অনেক বছর পরে,
কেমন করে করবো তোমায় সম্ভাষণ
নীরবতায় নিবিড় অশ্রু নীড়ে।
বায়রনের নামে কুৎসা রটানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রেমিকার সংখ্যাও বেড়ে গেল দারুণভাবে, অগণিত মহিলারা বিমুগ্ধ হয়ে গভীরভাবে তাকে ভালোবাসতে থাকে। অবশেষে মহিলাদের প্রেমের অত্যাচার আর তার বর্বরতা সহ্য করতে না পেরে বায়রনের স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যান। তখন ইউরোপের মহিলারা প্রকাশ্যে বায়রনের নিন্দা করতে লাগল। এই মহিলারাই তাকে প্রেমপত্র, চুলের গোছা ও নানা উপঢৌকন দিয়ে অভিভূত করেছিল।
একবার এমন হয়েছিল : এক অভিজাত পরিবারের সুন্দরী মহিলা বায়রনকে প্রেম নিবেদন করার জন্য এবং তার নাগাল পাওয়ার জন্য বালকের ছদ্মবেশ ধরেছিল। তার প্রেমে পাগল হয়ে আরেক মহিলার মাথা এমন খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ইতালি পর্যন্ত পুরো রাস্তা তার পিছু নিয়ে এমনভাবে চেপে ধরলেন যে বায়রনকে হার মানতে বাধ্য হতে হল।
এই মহা কুলাদর্শ প্রেমিক কেমন ছিলেন? স্বভাবতই এই প্রশ্ন পাঠকের মনে জাগবে। তিনি কি সুদর্শন ছিলেন? মোটেই না। তিনি বিশ্রীভাবে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন, একটা পা ছিল বিকৃত। তিনি আঙুলের মুখে নখ চিবোতেন, তামাক চিবোতেন। এ রকমের কতকগুলো বদস্বভাব ছিল তার। একজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোকের মতো ব্রিটেনের রাজপথে গুলিভরা পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। তার মেজাজ ছিল তিরিক্ষি। কোনো লোক যদি তার চোখের দিকে তাকাত তা হলে বায়রনের রক্তচাপ অসম্ভব রকম বেড়ে যেত, কারণ তার ধারণা যে লোকটি তার বিকৃত পায়ের দিকে তাকিয়েই উপহাস করছে।
বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রনকে রোমিও বলে অভিনন্দিত করা হত। তিনি মহিলাদের ওপর অত্যাচার করতে ভালোবাসতেন। তার বিয়ের দু-ঘণ্টা পরেই নববধূকে তার মনের জঘন্য ইচ্ছেটা জানিয়ে দিলেন যে, তিনি তাকে ঘৃণা করেন এবং ঘৃণার বশেই তাকে বিয়ে করেছেন। আরো বলেছেন, নববধূ যখন তার সঙ্গে প্রথম দেখা করবেন তখন তাকে অনুশোচনা ও দুঃখ পেতে হবে এবং তিনি করেছিলেনও তাই। তাই তাদের দাম্পত্যজীবনের অঙ্গীকারপত্র মাত্র একটি বছর টিকে ছিল। অবশ্য স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন নি কিন্তু ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করতেন এবং প্রেমিকাঁদের বাসায় নিয়ে আসতেন। অবশেষে তার স্ত্রী ভাবলেন যে তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তিনি বাড়িতে ডাক্তার ডাকতে বাধ্য হলেন। তার বাড়ির পাশ্ববর্তীর ভাষ্য ছিল যে–তার সমস্ত ভৃত্য ছিল যুবতী মেয়ে–সুন্দরী এবং মিষ্টস্বভাবের। ওই সমস্ত যুবতী চাকরানিরা বায়রন ও তার বন্ধুবান্ধবদেরকে মানুষের মাথার খুলিতে মদ্য পরিবেশন করে আনন্দ দিত। খুলিগুলোকে ঘষে মেজে ঝকঝকে তকতকে করে পান পত্রের উপযোগী করা হত।