আবিষ্কারটি ছিল উন্মাদ রোগ সারানোর একটি ওষুধ। ওষুধটি দুর্বল ও উন্মাদ ব্যক্তিদের শরীরে ইনজেকশন দেয়া হয়, আর প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই শরীরে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া বদলে যায় এবং ব্যক্তিটি সুস্থ হয়ে ওঠে। মানবসমাজের জন্য এই আবিষ্কারের গুরুত্বটা নিচের বিবরণ থেকে আপনারাও বিচার করে দেখুন।
আমেরিকার হাসপাতালগুলিতে মানসিকরোগীর সংখ্যা অন্যসব রোগীর চাইতেও বেশি। এখানকার উচ্চবিদ্যালয়গুলোর প্রতি ১৬ জনের মধ্যে একজন ছাত্রজীবনের একটা সময় মানসিক হাসপাতালে কাটায়। গত একযুগ ধরে আমেরিকায় মানসিক রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যদি আর এক শতাব্দী ধরে এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে সমগ্র জনসংখ্যার অর্ধেককেই মানসিক হাসপাতালে বাস করতে হবে।
মেয়ো ভ্রাতৃদ্বয় এ অদ্ভুত প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তাঁরা ছিলেন খ্যাতনামা অস্ত্র চিকিৎসক। তাদের বাবা ডাক্তার মেয়ে যখন আশি বছর আগে রচেস্টারে বাস করতে আরম্ভ করেন, তখন। সেখানে মাত্র দু-হাজার লোক বাস করত। তার সর্বপ্রথম রোগী ছিল মাত্র দু’জন–একটি ঘোড়া ও একটি গাভী। রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে এক যুদ্ধকালে ডাক্তার মেয়ো নিজে বন্দুক ধরেছিলেন এবং বহুসংখ্যক আহতদের বিনা পয়সায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা করেছেন। তাঁর দুই ছেলে উইলিয়াম ও চার্লস যারা পরবর্তীতে মেয়ো ভ্রাতৃদ্বয় নামে বিখ্যাত হয়েছিলেন তারা একটা ওষুধের দোকানে কাজ করতেন। তারপর তারা মেডিকেল কলেজে গেলেন। এরপরে ঘটল সেই ঐতিহাসিক খুব দুঃখজনক ঘটনাটি। প্রেইরি অঞ্চলের উপর দিয়ে এক প্রবলতম ঘূর্ণিঝড় দেবতার প্রচণ্ড তাণ্ডবলীলার মতো সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে বয়ে গেল। ঝড়ের প্রচণ্ড আঘাতে রচেস্টারের চেহারা একেবারে পাল্টে গেল। শত শত লোক হতাহত হল। বাবা মেয়ে ও ভ্রাতৃদ্বয় আহতদের চিকিৎসা করতে লেগে গেলেন। কনভেন্ট সিস্টারস অব। সেন্ট ফ্রান্সিস-এর মাদার সুপিরিয়র সিস্টার্স আলফ্রেড তাদের কাজে মুগ্ধ হয়ে ১৮৮৯ সালে সেখানে একটি হাসপাতাল করে দিলেন। তখন বৃদ্ধ ডাক্তার সত্তর বছরের বৃদ্ধ আর দুই পুত্র তাদের ভাষায় নবীনদের মধ্যে নবীনতম। ভবিষ্যতে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা উইলিয়াম মেয়ে হলেন ক্যান্সার রোগের নির্ভরযোগ্য রোগবিশারদ। এক ভাই অন্য ভাইকে যোগ্যতর মনে করতেন, তারা উভয়েই ছিলেন অন্যতম অস্ত্র চিকিৎসক। তাদের কাজের দ্রুততায় অনেক চিকিৎসক বিস্মিত হয়ে যেত। রচেস্টার শহরের অস্তিত্ব গড়ে উঠেছিল মেয়ো ক্লিনিকের জন্যই। এখানকার রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া চলাচল নিষিদ্ধ, বাসগুলি নিঃশব্দে চলে, এমনকি রাস্তাঘাটে লোকেরা কথা-বার্তাও খুব আস্তে-আস্তে বলে। মেয়ো ভাতৃদ্বয়ের কাজের এক তৃতীয়াংশই ছিল দান স্বরূপ। তাদের নিকট কোনো দরিদ্র রোগী এসে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যায় নি। এক ব্যক্তি তার জীবন রক্ষাকারী মেয়ো ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রাপ্য প্রতিশোধের জন্য ক্ষেতখামার বন্ধক দিয়েছিল। যখন তারা ব্যাপারটা। জানতে পারলেন তখন তার চেক ফেরত দিলেন এবং অসুস্থ থাকাকালীন লোকটার যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণের জন্য নিজেরাই কয়েকশ ডলারের চেক পাঠিয়ে দিলেন। তাদের একমাত্র কামনা ছিল নিপীড়িত মানবতার সেবা করা। তারা খ্যাতির পরোয়া করতেন না, অথচ তারাই হয়েছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত চিকিৎসক।
লরেন্স টিবেট : প্রত্যাখান তাকে অনেকদূর নিয়ে গেছে
১৯২২ সালে লরেন্ট টিবেট এত গরিব ছিলেন যে, লস এঞ্জেলসের কাছে একটা গ্রামে অত্যন্ত কষ্টকর অবস্থায় দিন কাটাতেন। রোববার গির্জায় অন্যান্য গায়কদের সাথে গান গাইতেন এবং মাঝেসাজে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের গান গেয়ে সামান্য উপার্জন করতেন। তিনি গ্রামে একটা বাসা ভাড়া করে থাকতেন এবং বাসাটা ছিল আঙুর খেতের মধ্যস্থলে। তিনি স্বীকার করেছেন তার এমনও সময় গেছে যখন শুধু আঙুর ছাড়া আর কোনো খাবার ছিল না। গায়ক হিসেবে বাসাভাড়ার টাকাটাও উপার্জন করতে পারতেন না। একবার দশ মাসের ভাড়া বাকি পড়ে গেলে; তখন আঙুর তুলে এবং আঙুর গাছ ছাটাই করে তা পরিশোধ করতে হয়েছিল।
লরেন্ট টিবেট যথেষ্ট পড়াশুনা করেছিলেন কিন্তু জীবনের করুণ ও দুঃখময় অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কিছুই করতে পারলেন না। তার বন্ধু রুপার্ট হিউযের তার ওপর অপরিসীম আস্থা ছিল। তিনি লরেন্ট টিবেট সম্পর্কে অত্যন্ত আশাবাদী ছিলেন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। হিউয তোমার গলায় দামি কণ্ঠস্বরের সকল উপাদান আছে। তোমার নিউইয়র্ক গিয়ে শিক্ষালাভ করা উচিত। এই ছোট্ট বন্ধুসলভ উৎসাহটাই তার জীবনের গতিপথটাকে এক উজ্জ্বলময় ভবিষ্যতের দিকে প্রভাবিত করতে তাকে সহায়তা করল।
নিউইয়র্ক এসে মাসে পাঁচ ডলারের বিনিময়ে একটা পিয়ানো ভাড়া করলেন। টিবেট। নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটান অপেরা হাউসের সবচেয়ে সস্তা একটা আসন ক্রয় করার ক্ষমতাও তার হল না। অপেরা হাউসের পেছনে দাঁড়িয়ে সুন্দরী মেরি গার্ডেনের মোহময় নাট্যাভিনয় দেখবার জন্য দু’ডলার বিশ সেন্ট করে দিতেন। ঘরভাড়া ও সঙ্গীত শিক্ষার জন্য তাকে বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করতে হত। দশবছর পর লরেন্স টিবেট নিজেই মেট্রোপলিটানের রঙ্গমঞ্চে উত্তেজনাময় আনন্দধ্বনির মধ্যে একটিমাত্র নাট্যাভিনয় দর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য বাইশবার অনুরোধ এসেছিল এবং তিনি সমগ্র বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসবে সুখ্যাতি অর্জন করে ছিলেন। আপনারা তখনকার সময়ে নির্মিত বহু চলচ্চিত্রে তার সুকণ্ঠ শুনেছেন। তিনি বলেছেন অনেক উচ্চাভিলাষী গায়কের ব্যর্থতার কারণ তাদের কণ্ঠস্বরের নির্বুদ্ধিতা এবং প্রদর্শন দক্ষতার অভাব।