বিলি সানডে আইওয়া নামক স্থানে একটা ছোট কাঠের কেবিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এক এতিমখানায় বড় হয়েছিলেন। মাত্র পনের বছর বয়সে একটা স্কুলের তত্ত্বাবধায়কের চাকরি পান। তার বেতন ছিল মাসে পঁচিশ ডলার এবং এই দিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পান। মার্শাল টাউনে একজন ঠিকাদারের সহকারি রূপে কাজ করার সময় বিলি সানডে বাস্কেটবল খেলোয়ার হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড়। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর নামাজাদা বেসবল খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। তিনি বলেছেন, আমি বেসগুলি মাত্র চৌদ্দ সেকেন্ডে ঘুরে আসতে পারতাম এবং এ রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারে নি। এর পাঁচ বছর পর তিনি একজন মদ্যপায়ী বল খেলোয়াড় থেকে পরিণত হলেন শ্রেষ্ঠ সম্মোহনী ধর্মপ্রচারকে। তার ধর্ম প্রচারক হিসেবে সম্মোহিত হবার ঘটনাটি ঘটে আঠার শো সাতাশি সালের এক রোববার বিকেলে-বিলি সানডে কয়েকজন বিখ্যাত খোলোয়াড়ের সাথে শিকাগোর রাজপথ দিয়ে হেঁটে গিয়ে একটা সেলুনে ঢুকলেন। পাশের রাস্তা দিয়ে নারী পুরুষ বাঁশি ও ঢাক বাজাতে বাজাতে যাচ্ছিল আর যিশুর স্তবগান গাচ্ছিল। ওই স্তবগানটি তিনি আইওয়ার কাঠের কেবিনে তার মাকে গাইতে শুনেছেন। গানটা শুনে মায়ের কথা মনে পড়ে গেল, তিনি খুব কাঁদলেন। তখন মিছিল থেকে এক যুবক ছুটে এসে তাকে বলল, ‘আমরা প্যাসিফিক গার্ডেন মিশনে যাচ্ছি। তুমি আমাদের সাথে যাবে না। আমি নিশ্চিত যে সেখানে তোমার ভালো লাগবে।’ বিলি সানডের মনে হঠাৎ করে একটা পরিবর্তন এল। মনের অদৃশ্যকোণের কোথায় যেন যিশুর স্তবগানটি ঝাঁকি দিল, তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমার হয়ে গেছে। আমি আর তোমাদের সঙ্গে থাকতে পারছি না। আমার পথ ভিন্ন হয়ে গেল। এই বলে তিনি তাদের দিকে পিঠ ফিরালেন। তারা কেউ কেউ হাসল, কোউ উপহাস করল। একজন তাকে উৎসাহও দিল। তারপর তিনি মানুষকে সৎপথে, যিশুর পথে এবং ঈশ্বর নির্দেশিত পথে আহ্বান .. করার ব্রত নিলেন।
১৯১৯ সালে বিলি সানডে যখন ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যান, তার আগে সেখানে কখনো তেমন ধর্মোন্মাদনা দেখা যায় নি। তিনমাস আগে থেকে তার আগমনে কথা প্রচার করা হয়েছিল এবং আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে কমপক্ষে কুড়ি হাজার প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৬৮ নং স্ট্রিটে এবং ব্রডওয়েতে চার’শ শ্রমিক কুড়ি হাজার লোকের বসার উপযোগী তাঁবু তৈরির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল এবং কাঠগুঁড়োর পথ তৈরি করার জন্য চারগাড়ি বোঝাই করাতের গুঁড়ো এনে মেঝেতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। মঞ্চের ওপরে ঐক্যতান গায়কদের জন্যেই দুই হাজার আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক অবস্থানকালে এই বিশ্ব বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ লোকের কাছে ধর্মপ্রচার করেছিলেন এবং প্রায় এক লক্ষ পাপী ব্যক্তিকে ধর্মোপদেশ দিয়ে সৎপথে এনেছিলেন।
বেজিল জেহারফ : লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাধিপ্রস্তর হল তাঁর স্মৃতিসৌধ
জেহারফ হল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী ও রহস্যময় এবং চরম ঘৃণিত এক ব্যক্তির নাম। এক সময় ঘোষণা করা হয়েছিল, যে কেউ এই জোহারফকে হত্যা করতে পারবে তাকে একলাখ ডলার পুরস্কার দেয়া হবে। তার অসংখ্য ঘটনাবহুল জীবনীসংবলিত বই লেখা হয়েছে।
তিনি ভয়াবহ দারিদ্র্যের কোলে জন্মগ্রহণ করেও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী ব্যক্তি হতে পেরেছিলেন। আর সম্পদশালী হয়েছিলেন ভয়াবহ আগ্নেয়াস্ত্র যেমন-বন্দুক, মেশিনগান, কামান আর বিস্ফোরক দ্রব্য বিক্রি করে। তাঁর জীবনীগ্রন্থের শুরুতে এ কথাগুলো লেখা ছিল, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাধি প্রস্তর হবে তার স্মৃতিসৌধ–আর তাদের মৃত্যুকালীন যন্ত্রণা হবে তাঁর স্মৃতিফলকের গাঁথা।‘
।বয়স যখন আটাশ বছর তখন সাপ্তাহিক পঁচিশ ডলারের বিনিময়ে অস্ত্র বিক্রির একটা চাকরি পান। তিনি বুঝে নিয়েছিলেন, বন্দুক বেচার সবচে প্রধান উপায় হল বন্দুকের জন্য চাহিদা সৃষ্টি করা। এই ভেবে তিনি গ্রামবাসীদের মনে ভয়ের সৃষ্টি করতে লাগলেন। তাদের বললেন যে রক্তপিপাসু শত্রুদ্বারা তারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে।
সুতরাং মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে তাদের অবশ্যই অস্ত্রসংগ্রহ করা উচিত। তাঁর প্ররোচনায় সমস্ত দেশের ওপর দিয়ে উত্তেজনা তরঙ্গায়িত হতে থাকল, পতাকা আন্দোলিত হল। গ্রিস বাহিনী সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে জেহারফের কাছে থেকে বন্দুক কিনল, একটা ডুবো জাহাজ কিনল। এভাবে নিজের চতুরতা বুদ্ধি বিবেক দ্বারা লক্ষ লক্ষ ডলার উপার্জন করে গ্রিস ছেড়ে তুরস্কের পানে ছুটলেন এবং তাদেরও উত্তেজিত করার কাজে কোমর বেঁধে নামলেন। তাদের বললেন, “তোমরা দেখ, গ্রিসের লোকেরা পৃথিবী থেকে তোমাদের নাম মুছে ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।” এতেই কাজ হল। তুর্কিরা জাহাজ কিনল দুটো আর তাদের মধ্যে অস্ত্র কেনার একটা প্রতিযোগিতা লেগে গেল। এতে অল্পকাল পরেই জেহারফের ভাগ্যে তিরিশ কোটি ডলার আয়ের ব্যবস্থা হয়ে যায়-যার সম্পূর্ণটা ছিল শোণিত সিক্ত। জেহার বিভিন্ন দেশের জাতীয় রীতিকে পুঁজি করে, পুরুষানুক্রমে শত্রুকে অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত করে এবং যুদ্ধের প্ররোচনা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে নিজের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তিনি জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইটালিতে অস্ত্র কারখানার মালিক হয়ে গেলেন। অর্ধ শতাব্দী ধরে তিনি তার গতিবিধিকে অত্যন্ত গোপনীয়তায় আচ্ছাদিত করে শিকারী বিড়ালের মতো নিঃশব্দে ইউরোপের যুদ্ধ-শিবিরগুলোতে যাতায়াত করেছেন।