প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় তিনি শয্যা ত্যাগ করতেন এবং সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত ড্রিল করতেন। তিনি বলেছেন, ভারতবর্ষের সবচেয়ে দুঃসাহসিক ও উত্তেজনাপূর্ণ অভিযানে শূকর শিকারে অংশগ্রহণ করতেন। পৃথিবীর কোনো প্রাণীই আহত বুনো শুকরের মতো বদমেজাজি নয়। কেশয়ালের মতো চাতুর্য, সিংহের মতো সাহস, বাঘের হিংস্রতা এবং অশ্বের ক্ষিপ্রতা এসবের সমন্বয় হল একটি আহত বুনো শূকর। ব্রাউন একটা শূকর শিকারের সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন-একদিন শিকারের সময় কাঁটাময় ঝোঁপঝাড় মাড়িয়ে একটা প্রকাণ্ড শূকর বের করলেন। বর্বর শূকরটা মাঠের মাঝখান দিয়ে ছুটতে শুরু করল। তার বড় বড় দাঁতগুলো সূর্যকিরণে ঝকমক করছিল, ব্রাউন ঘোড়া নিয়ে তার পেছনে ছুটতে লাগলেন। তার বর্শা শূকরটাকে বিদ্ধ করার সাথে সাথেই ঘোড়াটা হোঁচট খেয়ে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ল তাকে নিয়ে। তিনি ঘোড়ার নিচে আটকা পড়লেন। বর্শাবিদ্ধ শূকরটা উঠে দাঁড়াবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। শুকরটা উঠে দাঁড়িয়েই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সরাসরি ব্রাউনকে আক্রমণ করল। তিনি বুঝতে পারলেন নিজের করুণ পরিণতি। অনেক কষ্টে ঘোড়ার নিচ থেকে মুক্ত হয়ে তিনি এক গাছে উঠে পড়লেন। শূকরটা নিরুপায় হয়ে কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর হিমশীতল কোলে ঢলে পড়ল।
ফ্রান্সিস ব্রাউন অদ্ভুতভবে স্ত্রীলোকের ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারতেন। তুর্কিদের বন্দিখানা থেকে তিনি যখন পালালেন, তুর্কিবাহিনী তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজল, এমনকি তার মাথার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করল। তুর্কিরা তাকে যখন খুঁজছিল তখন ব্রাউন এক জার্মান গভর্নেসের ছদ্মবেশ ধারণ করে বিচিত্র পোশাক পরিধান করে এক রাশান প্রিন্সের সাথে এক ক্যাফেতে প্রেমাভিনয়ে রত। এতে তুর্কি গোয়েন্দাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক হল না বরং তারা হ্যাট খুলে মাথা নুইয়ে সুন্দরী গভর্নেসটিকে অভিবাদন জানাল। এই ছদ্মবেশে তুর্কিবাহিনীর চোখ এড়িয়ে তিনি তুরস্ক থেকে পালাতে ব্যর্থ হয়ে রাতারাতি লিঙ্গ ও জাতীয়তা পরিবর্তন করে গোলাবারুদের কারখানার কারিগরের ছদ্মবেশ ধারণ করলেন, শেষপর্যন্ত ধারণ করলেন এক কৌতুকাভিনেতার, তাতেও শেষরক্ষা হল না। আবার তিনি গ্রেফতার হলেন এবং কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন। সেখানে কারাগারের বাগানে যে সব গ্রিকরা নৈশভোজ করত, তাদের ছদ্মবেশে আবার সুচতুরভাবে দক্ষ অভিনেতার মতো কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হলেন। ফ্রান্সিক ইয়েটস ব্রাউনকে তার যোদ্ধা জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের বর্ণনা করতে বলায় তিনি জানান, যুদ্ধবন্দি অবস্থায় তুর্কিরা তাদের দু’শ মাইল দূরে এক ক্যাম্পে মার্চ করে যেতে বাধ্য করে। পথে তিনি এমন একটা শহরের মাঝখান দিয়ে গেলেন যেখানে এক জন লোকও জীবিত ছিল না। তুর্কিবাহিনী একটা মার্কিন পল্লীর সবাইকে হত্যা করেছিল। সেখানে সর্বত্র মৃত্যুর হিমশীতল নীরবতা বিরাজমান। শুধু জীবিত ছিল কয়েকটা কুকুর ও বাজপাখি। কুকুরগুলো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর বাজপাখিগুলো শহরটির উপরে আকাশে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছিল।
ফ্লোরেঞ্জ জিগফেল্ড : ইতিহাসের যে-কোনো ব্যক্তির চেয়ে তিনি অধিক সংখ্যক
ইতিহাসের যে-কোনো জীবিত লোকের চেয়ে ফ্লোরেঞ্জ জিগফেল্ড সর্বাধিক সুন্দরী মেয়ের টেলিফোন নম্বর জানতেন। তার ব্লু বুক অব বিউটিতে হাজারো মোহময়ী ও আকর্ষণীয়া সুন্দরীর নাম ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর লেখা ছিল।
জিগফেল্ডকে ‘আমেরিকান তরুণীদের গৌরব বর্ধনকারী’ বলে অভিহিত করা হলে তিনি গর্ববোধ করতেন। এমন একটি অতি সাধারণ তরুণী যার দিকে কেউ একবারের বেশি দুবার তাকায় না, তেমনি একটা মেয়েকেও তিনি মঞ্চের উপর একেবারে বদলে দিয়ে একটি রহস্যময়ী মনোমুগ্ধকারী চোখ ঝলসানো সুন্দরী নারীতে পরিণত করে দিতে পারতেন। দৈহিক গড়ন আর মনোরম ভঙ্গি ছিল জিগফেল্ডের মঞ্চে প্রবেশের পাসপোর্ট। কীভাবে একজনকে মোহনীয় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হয় জিগফেল্ড তা ভালো করে জানতেন।
তিনি ছিলেন প্রাচ্যের যে-কোনো রাজার মতোই রাজকীয়। এশিয়া ও ইউরোপের সমস্ত বাজার তন্ন তন্ন করে দামি ও সবচেয়ে সুন্দর পোশাক কেনার জন্য উদার হস্তে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করেছেন। তাছাড়া তিনি মনে করতেন, শরীরের চামড়ার সাথে সুন্দর পোশাকের স্পর্শ না পেলে কোনো মেয়েই নিজেকে প্রকৃত সুন্দরী ভাবতে পারে না। এক রাখালের জন্য একবার তার মনোমতো টুপি খুঁজতে গিয়ে তিনি পুরো তিনমাস নিজের Show Boat-এর প্রযোজনা বন্ধ রেখেছিলেন। আরেকবার তার একটা প্রযোজনায় ২৫,০০,০০০ ডলার ব্যয় করেও মাত্র একবার প্রদর্শন করে সেটা বন্ধ করে দেন। তার মনে হল প্রযোজনটি তার গৌরবময় ঐতিহ্যের জন্য যোগ্যতর হয় নি। তার প্রতিটি কাজ হত প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ। তিনি তাঁর নিকটস্থ লোকের কাছেও টেলিগ্রাম পাঠাতেন। তাঁর কর্মচারীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার জন্য প্রায় প্রতিদিন ভোর ছটায় বিছানা ছাড়তেন। জিগফেল্ড দশ-বারো ডলার বাঁচাবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিকল্পনা করতেন, আবার পরদিনই চোখের পলক না ফেলেই ওয়েল স্ট্রিটে একলাখ ডলার খরচ করে আসতে পারতেন। একবার এডউইন নামক এক ভদ্রলোকের কাছে থেকে জিগফেল্ড ৫০০০ ডলার ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু দেশের অপর প্রান্তে যাবার জন্য একখানি প্রাইভেট ট্রেন ভাড়া করে ওই টাকা উড়িয়ে দিলেন।