রুজভেল্ট তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন যে তিনি শৈশবে দুর্বল স্নায়ুবিশিষ্ট ও ভীরু প্রকৃতির ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন। তিনি হাত ভেঙেছিলেন, বুকের পাঁজর ভেঙেছিলেন, কাঁধ ভেঙেছিলেন তবু ঝুঁকি নেয়া বন্ধ করেন নি। তিনি বলেছেন, যে সব কাজ করতে তার ভয় হত তা তিনি আরো বেশি করতেন এবং সে সব কাজ করতে গিয়ে খুব সাহস দেখালেও ভেতরে ভেতরে ভীতু ছিলেন শেষপর্যন্ত এত সাহসী হয়ে উঠলেন যে ক্রুদ্ধ সিংহ বা গর্জনশীল কামান কোনো কিছুতেই ভয় পেতেন না। ১৯১২ সালে বুলমোস অভিযানকালে রুজভেল্ট যখন এক জায়গায় বক্তৃতা দিতে যাচ্ছিলেন তখন এক অর্ধপাগল ব্যক্তি তার বুকে গুলি করল। তিনি কাউকে বুঝতে দিলেন না তার বুকে বুলেটটা লেগেছে। তিনি সোজাসুজি আডিটরিয়ামে গিয়ে বক্তৃতা শুরু করে দিলেন এবং যতক্ষণ না সংজ্ঞাহীন হলেন ততক্ষণ বক্তৃতা দিয়ে যেতে থাকলেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন একসময় রুজভেল্ট এক আর্মি অফিসারের সাথে বক্সিং লড়েছেন। এতে ঘুষি খেয়ে রুজভেল্ট তার বাম চোখে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হলেন। বেশ কয়েক বছর পর তিনি চিরদিনের জন্য ঐ চোখের দৃশিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তিনি ওই গোলন্দাজ অফিসারকে জানতেই দিলেন না তার কী ক্ষতি সে করেছে।
তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন। ওয়েস্টার বে’তে তার জমিদারি এলাকায় রুজভেল্ট একসময় খামারের মজুরদের সাথে কাট চিড়তেন, ফসল তদারক করতেন এবং মজুরদের মতো তাকেও একই পরিমাণ বেতন দেয়ার জন্য তিনি পীড়াপীড়ি করতেন। কখনো ধূমপান করেন নি, মদ্যপান বলতে দুধের সাথে কালেভদ্রে এক চামচ ব্রান্ডি মিশিয়ে খেতেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউসে থাকাকালে তাকে অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাতে হত অবশ্যই। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি শতশত বইয়ের পাতা উল্টিয়েছেন। তার হাতে সব সময়ই একটা বই থাকত। একজন সাক্ষাৎপ্রার্থী যাওয়ার পর অন্যজন আসার ফাঁকে যে-কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট সময় পেতেন, বইয়ের পাতা ওল্টাতেন। একদিন তিনি ডাকোটায় পশু চরাচ্ছিলেন, তখন এক রাখালকে সম্পূর্ণ হ্যামলেটটা পড়ে শোনান। তিনি অত্যন্ত সঙ্গীতপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু নিজে সুর মেলাতে পারতেন না। একবার তিনি পশ্চিমের এক শহরের ওপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে যাবার সময় টুপি কাত করে ধরেছিলেন এবং উৎফুল্ল জনতার উদ্দেশ্যে প্রভু তোমার আরো কাছে গানটা গেয়েছিলেন।
অনেকরকম সখ ছিল রুজভেল্টের। মজার একটা ঘটনা শুনুন, হোয়াইট হাউসে থাকাকালে হঠাৎ করে একদিন ওয়াশিংটনের নামজাদা সাংবাদিককে তার সাক্ষাৎকারের জন্য আসতেন বললেন। সাংবাদিক উত্তেজনায় অধীর হয়ে উঠল, ভাবল, রুজভেল্ট বুঝি তাকে কোনো রাষ্ট্রীয় সাক্ষাৎকার দান করবেন। সে পত্রিকার খবরটি ছাপার জন্য কলাম খালি রেখে তৈরি থাকতে নির্দেশ দিয়েই রুজভেল্টের কাছে ছুটল। যখন সে হোয়াইট হাউসে পৌঁছল, রুজভেল্ট তাকে একটা রাজনীতির কথাও বললেন না। তিনি ওই সাংবাদিককে হোয়াইট হাউসের বাইরে এক গাছতলায় নিয়ে এলেন এবং তাকে নিজের আবিষ্কৃত কতকগুলো বাচ্চাওয়ালা পেঁচার বাসা দেখিয়ে দিলেন।
আমেরিকার সফল প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিয়োডর রুজভেল্ট। তিনি তার জনগণকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। ১৯১৯ সানের ৪ঠা জানুয়ারি ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শেষ উচ্চারিত কথাগুলো হল অনুগ্রহপূর্বক বাতিগুলো নিভিয়ে দিন।
ফ্রান্সিস ইয়েটস ব্রাউন : যিনি তার জীবনে অনেকগুলো জীবনযাপন করেছেন
বিশ বছর আগে এক সোনালি বিকেলে ফ্রান্সিস ইয়েটস ব্রাউন নামক এক পাতলা গড়নের যুবক ফরেস্ট হিলসে আমার মুখোমুখি বসেছিলেন এবং প্রাচ্যের রহস্যময় কিংবদন্তির দেশগুলোতে তার দুঃসাহসিক ভ্রমণের কাহিনী শুনিয়ে আমাকে হতবাক করে দিয়েছিলেন। উনিশ বছর বয়স থেকে তিনি অনেক মৃত্যু দেখেছিলেন। তিনি মেসোপটেমিয়ার উত্তপ্ত মরুভূমিতে তুর্কিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন এবং ফেডার্সের জলাভূমিতে জার্মানদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। বাগদাদ ও কনস্টান্টিনোপলে তিনি যুদ্ধবন্দি ছিলেন। ‘দ্য ব্লাডি ইয়ারস’ নামে তার রচিত এক গ্রন্থের মাধ্যমে তার যুদ্ধের চেয়ে কবিতা ও দর্শনপ্রিয়তা প্রকাশ পেয়েছিল।
বিশ বছরের সৈনিক জীবনে ফ্রান্সিস ব্রাউন সামান্যই সঞ্চয় করতে পেরেছিলেন। তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। তিনি ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের কাছে লেখাপড়া করেছেন এবং অতিন্দ্রিয়বাদের শিষ্য হয়েছেন।
আমাদের সবার মতো তিনি একটা জীবনযাপন করেন নি। তার ঊনচল্লিশ বছরের জীবনে তিনি অনেকগুলো জীবনযাপন করেছেন। শেষপর্যায়ে তিনি যখন তার কর্মচাঞ্চল্যময় জীবন কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন তাতে তিনি আমার কাছে বলা অনেক ঘটনা সন্নিবেশিত করেছেন। বইটার নাম দিয়েছেন তিনি ‘দ্য লাইভস্ অব বেঙ্গল ল্যান্সার।’ ১৯৩০-এর সময়ে বইটা এক যুগান্তকার আলোড়ন সৃষ্টি করে তার সাফল্য এনে দিয়েছিল। এ বই অবলম্বনে হলিউডে চিত্তাকর্ষক ছবি তৈরি হয়েছিল পরবর্তীকালে। ব্রাইন মাত্র ঊনিশ বছ বয়সে রয়্যাল বেঙ্গল ল্যান্সার বাহিনীর পোশাক পরেন। ব্রিটিশবাহিনীর এটাই ছিল সর্বাপেক্ষা অভিজাত ও গর্বিত অশ্বারোহী বাহিনী। এ বাহিনীতে যোগদান করে ব্রাউন ভারত উপমহাদেশসহ প্রাচ্যের অনেক ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের সুযোগ লাভ করছেন।