ডায়মন্ড জিম ব্রেডি ব্রডওয়ের একটা সেলুনের ওপর এক ফ্লাটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা সেলুনটা চালাতেন। জিম ব্রেডি জীবনে কোনোদিন একফোঁটাও মদ পান করেন নি কিন্তু তিনি যখন ব্রডওয়ের সবচেয়ে গৌরবজনক আসনে আসীন তখন মদের পেছনে শত শত ডলার ব্যয় করে বন্ধু বান্ধবদের উপহার দিয়েছেন। তার বন্ধুরা যখন মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে যেত তিনি তাদের পাশে বসে সামান্য রুটি বিয়ার চুমুক দিয়ে পিপাসা নিবৃত্ত করতেন। তিনি প্রতিদিন প্রায় পনের প্রকার খাবার দিয়ে ডিনার করতেন; এগুলোর সাথে আরো ছোটখাটো দু’তিন পদও থাকত। ডিনার শেষে তিনি এক পাউন্ড চকোলেট খেতেনএবং এক বাক্স পেপারমিন্ট নিয়ে থিয়েটারে যেতেন। প্রতি সপ্তায় জিমতার বন্ধুদের কাছে মিষ্টির বাক্স পাঠাতেন আর তাতে তার গড়ে দু’তিন হাজার ডলার বিল উঠত। তিনি নিজেও ভোজন রসিক ছিলেন। তিনি চা ও কফি পছন্দ করতেন না এবং কমলার রস অত্যন্ত ভালবাসতেন। একবার তিনি এক বসায় ছয়টা মুরগি খেয়ে সাবাড় করেছেন। ব্যাপারটা আজগুবি মনে হতে পারে কিন্তু বৃদ্ধবয়সে তার পেট অপারেশন করে ডাক্তারটা দেখলেন যেন তার পাকস্থলী সাধারণ পকস্থলীর চেয়ে ছয় গুণ বড়।
যে লোকটি জমকালো ভোজসভার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ডলার উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি কিন্তু কীভাবে লক্ষ লক্ষ ডলার উপার্জন করেছিলেন তা আপনার জিজ্ঞাস থাকতে পারে। তিনি ছিলেন একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ দক্ষ বিক্রেতা। তা ছাড়া তার ভাগ্যদেবী ছিল তার প্রতি অত্যন্ত সুপ্রসন্ন। তখন রেলপথে যখন কাঠের রেলগাড়ি চলতু তিনি তখন স্টিলের রেলগাড়ি তৈরি করে বিক্রি করা আরম্ভ করেন। কিন্তু এগুলো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ছিল বলে কেউ তা চাইত না। অবশেষে চুক্তিসাপেক্ষে প্রতিটা গাড়ি বিক্রি করার জন্য তিনি এক তৃতীয়াংশেরও অনেক বেশি সম্মান পান। এরপর স্টিলের গাড়ির চাহিদা অসম্ভব রকম বৃদ্ধি পেল। আর জিমও কামাতে লাগলেন অগণিত ডলার।
একটা চমকপ্রদ ও অদ্ভুত প্রচারণার দ্বারা ডায়মন্ড জিম স্কোহেগান থেকে সান্তা ফে পর্যন্ত নিজেকে বিখ্যাত করে ফেললেন। বলতে গেলে, তিনি নিজেকে হীরক দ্বারা ভূষিত করলেন। তিনি প্রতিদিন নতুন নতুন অলঙ্কার পরতেন, এমনকি প্রায় দিনে ছ’সাতবার অলঙ্কার পাল্টাতেন। তিনি দু’হাজার পাঁচশ আটচল্লিশটি ঝকঝকে ও মূল্যবান হীরক এবং উনচল্লিশটি চুনি বসানো জমকালো পোশাক পরে ব্রডওয়েতে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি বাইসাইকেল ও মোটরগাড়ির প্রতীক বিশিষ্ট জামার বোতাম এবং রেলগাড়ি ইঞ্জিনের প্রতীক বিশিষ্ট কাফলিঙ্ক পরতেন।
জিম ব্রেডি ছিলেন ভীষণ অমিতব্যয়ী। নিউজার্সিতে তার একটা খামার ছিল। সেখানে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে গাভীর দুধ দোহানো হত পুরো সোনার বালতিতে করে। তার বিলিয়ার্ড টেবিলটা ছিল মহা মূল্যবান পাথর খচিত। তার বাড়ির সাজসজ্জা সম্পন্ন করার জন্য এক ডেকোরেটরকে তিনি সোয়া তিন লক্ষ ডলারেরও বেশি পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। আরো মজার ব্যাপার হল, তিনি প্রতি বছর তার সমস্ত আসবাবপত্র বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে দিতেন এবং নতুন করে আরো মূল্যবান আসবাবপত্র কিনতেন। রাসেলকে সোনার আস্তরণ করা এবং শত শত হীরা-চুরিন্ন-পান্না ও অন্যান্য মণিমুক্তা খচিত একটি বাইসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। আর যখন লিয়িয়ান ঐ বাইসাইকেলে চড়ে ফিফথ এভিনিউতে গেলেন তাকে দেখার জন্য লোক জমে গিয়েছিলেন। অবশেষে ট্রাফিকের ঠেলা সমালানোই দায় হয়ে উঠল।
জিমের পাঁচ হাজার সুন্দর রুমাল এবং দুশ প্রস্থ পোশাক ছিল। তিনি কখনো তার প্রিয় প্রিন্স এলবার্ট ও লম্বা সিল্কের হ্যাট না পরে লোকজনের সামনে যেতেন না। তার পাকস্থলীটা ছিল যেমন ছয়গুণ বড়, হৃদয়টাও ছিল তেমনি। কেউ তার কাছে এসে দুর্ভাগ্যের ইতিহাস শোনালে তিনি জানতেন যে, এর অধিকাংশই কখনো তিনি ফেরত পাবেন না। তিনি যখন বুঝলেন যে তার মৃত্যু আসন্ন তখন দেখলেন, তার কাছে দু’লক্ষ ডলারের মতো ঋণ স্বীকারপত্র পড়ে রয়েছে তখন সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়াই অন্তিম কাজ বলে মনে করলেন। তিনি বলেন, আমার যদি মরণ থাকে মরে যাব। কিন্তু কারো জন্য দুঃখ কষ্ট ও মনস্তাপ রেখে যাবো না।
তিনি যখন মারা যান তখন মূলত তার বিশাল ধনৈশ্বর্যের সবটাই দান করে যান। প্রত্যেকে ডায়মন্ড জিমকে অত্যন্ত ভালবাসত কিন্তু তিনি সারাজীবন কুমার হয়েই রয়ে গেলেন। তিনি লিলিয়ান রাসেলের কোলে এক মিলিয়ন ডলার রেখে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু লিলিয়ান তা প্রত্যাখ্যান করলেন। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মতো কুৎসিত চেহারার লোককে দুনিয়ার কোনো মেয়েই বিয়ে করতে চাইবে না। তারপর টেবিলে মাথা রেখে তিনি শিশুর মতো কাঁদলেন।
থিয়োডর রুজভেল্ট : বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও বক্তৃতা থামান নি
আমেরিকার সবচেয়ে সুদর্শন এবং বর্ণাঢ্য প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিয়োডর রুজভেল্ট। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন হাঁপানি রুগী। স্বাস্থ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি পশ্চিমে গেলেন। সেখানে তিনি রাখাল হলেন, খোলা আকাশের নিচে ঘুমোলেন। তারপর তিনি সুস্বাস্থ্য ফিরে গেলেন, পরে দেখা গেল তাকে মাইক ডোনাভনের সাথে বক্সিং লড়ছেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল আবিষ্কার করেছেন এবং তিনি সর্বকালের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত বড় জন্তু শিকারী ছিলেন।