প্রথম জীবনে রকফেলার যে মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলেন সে মেয়েটি তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিল। মেয়েটির মা বলেছিলেন, ‘রকফেলারের মতো একজন স্বল্প আয়সম্পন্ন মানুষ যার উন্নতির আশা অত্যন্ত ক্ষীণ, তার হাতে সঁপে দিয়ে আমার মেয়েকে জলে ভাসিয়ে দিতে পারি না।‘ অথচ এই লোকটিই পরবর্তীকালে আমেরিকার বিখ্যাত ধনকুবের উলওয়ার্থ, ডিউক ও হ্যারিম্যান একত্রে যত অর্থ সম্পদ উপার্জন করেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ সম্পদ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রকফেলার কখনো কলেজে পড়েন নি। স্কুল জীবন শেষ করে কয়েক মাসের জন্য একটি বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছেন মাত্র। ষোল বছর বয়সেই বিদ্যায়তনে শিক্ষা গ্রহণ শেষ হয়ে যায়।
অথচ তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ কোটি ডলার দান করেছেন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধীরস্থির ও শান্তপ্রকৃতির মানুষ, কখনো উত্তেজিত হতেন না কিংবা তাড়াহুড়ো করতেন না। যখন তিনি স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল কোম্পানির প্রধান ছিলেন, তার অফিসে প্রতিদিন দুপুরবেলা একটি নির্ধারিত কাউচে আধঘণ্টা ঘুমাতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিদিন এমনি একটু একটু করে পাঁচবার ঘুমানোর অভ্যেস ছিল তাঁর।
রকফেলারের বয়স যখন পঞ্চান্ন তখন তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম কাজ হয়েছিল। কারণ নিজের অসুস্থতাজনিত ব্যাপারে রকফেলার চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দান করে উৎসাহিত করেছিলেন। এর ফলে গঠিত হয়েছে ‘রকফেলার ফাউন্ডেশন’ যা সারা বিশ্বজুড়ে মানবস্বাস্থ্যের উন্নয়ন কল্পে প্রতি মাসে দশ লক্ষ ডলার দান করে থাকে।
রকফেলারের জীবনের অন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনি ৭৫,০০,০০,০০০ ডলার দান করেছিলেন। বিশ্বের ইতিহাসে আর কোনো লোক এত অর্থ দান করেন নি।
তিনি গির্জার ব্যাপারে গভীর উৎসাহী ছিলেন। কখনো নাচতেন না, থিয়েটারে যেতেন না এবং ধূমপান বা মদ্যপান করতেন না। প্রতিবার খাদ্যগ্রহণের আগে তিনি প্রার্থনা করতেন এবং প্রতিদিনই বাইবেল পাঠ শুনতেন। এতদিন তিনি উন্নত জীবনের গান এবং কবিতা পাঠ শুনতেন।
রকফেলারের ধনসম্পদ এখনো গড়ে প্রতি মিনিটে বেড়ে চলেছে প্রায় একশ’ ডলার করে; তবু তাঁর জীবনের একমাত্র উচ্চাভিলাষ ছিল একশত বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার। তিনি বলেছিলেন যে, যদি তিনি ১৯৩৯ সালের ৮ই জুলাই তার শততম জন্ম বার্ষিকী পর্যন্ত জীবিত থাকেন, তাহলে পোকান্টিকো হিলস-এ অনুষ্ঠিতব্য সেই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানটিতে তিনি ব্যান্ডদল পরিচালনা করবেন। আর যে বাজনাটা বাজাবেন তা হল ম্যাগি, তুমি এবং যখন আমি তরুণ ছিলাম।
জে. পি. মর্গান : একজন বিশিষ্ট ধনকুবের, যিনি ছিলেন অখ্যাত ও রহস্যময়
ঘটনাটি ঘটেছিল দুপুর বারোটা এক মিনিটে। তখন লোকজনের অফিস-আদালত থেকে বাড়ি যাবার পালা। সদর রাস্তার এক প্রাসাদের বিপরীত দিকে একটা পুরানো ঘোড়ার গাড়ি এসে থামল। গাড়িটা কারো মনোযোগ আকর্ষণ করে নি। হঠাৎ একটা সবুজ রংয়ের চোখ ঝলসানো আলোর ঝিলিক চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তারপর একটা দমকা বাতাসের সাথে সাথে প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণ ঘটল। ১০০ পাউন্ডের একটি টি.এন.টি. বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতেই অভাবনীয় ব্যাপার ঘটে গেল–বিশাল বিশাল ভবনগুলির ভীত নড়ে উঠল, জানলাগুলি ভেঙে টুকরো হয়ে গেল, কোথাও দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। রাস্তার প্রায় ত্রিশ ফুট উপরে জানালার ভিতর দিয়ে মানুষের হাত, পা মাথা ও ধড় নিক্ষিপ্ত হয়ে দেয়ালের গায়ে তাকের উপর পড়তে থাকল আর রক্তাক্ত দেহের পঙ্গু মানুষগুলো কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। অ্যাম্বুলেন্সের চিৎকার আর দমকলবাহিনীর সাইরেন সব মিলিয়ে ঘটনার বিভীষিকা আরো বাড়িয়ে দিল।
যখন সব শান্ত হল, দেখা গেল, যে ঘোড়ার গাড়িতে করে বোমা আনা হয়েছে তার চাকার একটি টুকরো, কয়েকটি স্তু ও কজা এবং ঘোড়ার খুরের দুটো নাল ছাড়া আর কিছুই সেখানে অবশিষ্ট নেই। কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে এ ঘটনা ঘটে গেল সেই জে. পিয়ারপন্ট মার্গান তখন ইউরোপে। মর্গান ঠিক করলেন এ বর্বর কাপুরুষোচিত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবেনই। এজন্য পঞ্চাশ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হল। পুলিশবাহিনী, ফেডারেল এজেন্ট, সিক্রেট সার্ভিস, প্রাইভেট ডিটেকটিভ নিয়োগ করে অভিযান শুরু করা হল। সমস্ত পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল, কিন্তু সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল। তারপর বহু বছর গত হয়ে গেছে কিন্তু আজো সেই রহস্য রহস্যই রয়ে গেছে।
জে. পিয়ারপন্ট মার্গনকে বলা হত অর্থ সম্পদের জগতে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি। কিন্তু ওয়াল স্ট্রিটের ডিক্টেটর মর্গান ছিলেন একজন অখ্যাত ও রহস্যময় লোক। তিনি সবসময় প্রচার এড়িয়ে চলতেন এবং ফটোগ্রাফারদের ভয়ে আতঙ্কিত থাকতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী ব্যক্তিত্ব। তাই কখনো কখনো তাকে ‘আমেরিকার সবচেয়ে অকূটনীতিজ্ঞ’ বলা হত।
মর্গানের ওজন ছিল ২০০ পাউন্ড আর উচ্চতা ছিল ছয় ফুট। অত্যন্ত নির্ভীক ছিলেন তিনি। একদিন এক পাগল তার বাড়িতে ঢুকে তাকে পিস্তল বাগিয়ে হত্যা করতে উদ্যত হল। মর্গান ইচ্ছে করলে পালাতে পারতেন। তা না করে তিনি সরাসরি লোকটার দিকে এগোতে থাকলেন, লোকটা তার তলপেটে গুলি করল।