ছেলেটির নাম ক্লেরান্স ডেরো, খুব সম্ভবত তিনি আমেরিকার সব চাইতে খ্যাতনামা আইনজ্ঞ এবং তাঁর সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ অপরাধ-আইনজ্ঞ। তিনি ছিলেন সগ্রামী, স্বাধীনতচেতা ও নির্যাতিতের প্রতিভূ।
ক্লেরান্স ডেবরা বলেছেন, তিনি কখনো অর্থ বা সম্মান কামনা করেন নি। গণ্ডগ্রামের এক স্কুলশিক্ষক হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। এসময় একটা চমকপ্রদ ঘটনায় তার জীবনে পরিবর্তন ঘটল। এক কর্মকার ঘোড়ার পায়ের নাল পরানোর কাজের অবসরে আইন পড়ত। ডোয়রা এক টিনের কারিগরের দোকানে এ কর্মকারকে এক আইনের মামলার ব্যাপারে যুক্তি দিয়ে তর্ক করতে শোনেন। তাঁর সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও বাকপটুতায় তিনি মুগ্ধ হলেন। তিনি ওই কর্মকারের কাছ থেকে আইনের বইগুলো ধার করে আইন পড়া শুরু করে দেন।
অবসর সময়ে এবং ক্লাসের ছাত্রদের অঙ্ক করানোর ফাঁকে ফাঁকে তিনি মনোযোগ সহকারে আইনের পাতা ওল্টাতে লাগলেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী ঠিক করলেন ওহিওতে একটা বাড়ি কিনবেন। বাড়িটির মূল্য ঠিক করা হল ৩৫০০ ডলার। ডেরো ব্যাংকে তার জমাকৃত অর্থ থেকে ৫০০ ডলার ওঠালেন এবং বাকি টাকা বাৎসরিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে চাইলেন। কথাবার্তা প্রায় পাকাঁপাকি এমন সময় মালিকের স্ত্রী দলিলে সই দিতে অস্বীকার করল। মহিলার ধারণা যে, ডেবরার মতো একজন সাধারণ যুবক সারাজীবনও ৩৫০০ ডলার উপার্জন করতে পারবেন না। এতে ডেরো অত্যন্ত রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে শিকাগো রওয়ানা হলেন। সেখানে প্রথম বছরে তিনশ ডলার আয় করলেন। পরের বছর শহরের বিশেষ এটর্নি হিসেবে আয় করলেন তিন হাজার ডলার। তিনি বলেছেন, যখন আমার ভাগ্য বদলাতে শুরু করল তখন মনে হল সব কিছু যেন ঝটপট আমার পথে চলে আসছে।
এরপর ডেরো শিকাগো এন্ড নর্থ ওয়েস্টার্ণ রেলওয়ে কোম্পানির জেনারেল এটর্নি নিযুক্ত হন এবং এর মাধ্যমে প্রচুর অর্থোপার্জনের পথে এগিয়ে যান। তারপর শিকাগোয় শুরু হল ধর্মঘট ও দাঙ্গাহাঙ্গামা এবং রক্তপাত। তিনি রেলওয়ে কোম্পানির চাকুরি ত্যাগ করে ধর্মঘটীদের পক্ষ নিলেন। তার অগ্নিময় ও চাঞ্চল্যকর মামলাগুলির মধ্যে এটাই প্রথম। এক লোমহর্ষক খুনের মামলায় ডেরো খুনী দু-জনের সমর্থনের দায়িত্ব নিলেন-তাতে লোকে তাকে গালাগালি ও তিরস্কার করল।
এমনকি খুনীদের পক্ষ নেওয়ার জন্য তাদের চেয়েও জঘন্য বলে অপবাদ দিল। তিনি বলেন, ঘৃণা এবং বিদ্বেষের বিপক্ষে আমি কী করতে পারি তাই প্রমাণ করতে চাই। আমার কোনো মক্কেল মৃত্যুদণ্ড পায় নি, ভবিষ্যতে যদি কখনো ঘটে তবে তা হবে আমার মৃত্যুদণ্ডের সামিল। আমি সম্পূর্ণরূপে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে।
ডেরো তাঁর অপরিসীম বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার জন্য এরূপ অনেক মামলায় জিতে সুনাম অর্জন করেন এবং একজন প্রখ্যাত অপরাধ-আইনজীবী হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেন।
তিনি বলেন যে, সমাজই অপরাধী সৃষ্টি করে এবং যে কোনো লোকই যে কোনো অপরাধ করতে পারে।
ক্লেরান্স ডেরো কয়েক বছর আগে তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি ঠিক বলতে পারব না, আসলে আমি কতটুকু বেশি সমাধা করতে পেরেছি। তবে জীবনের চলার পথে যথেষ্ট পরিমাণ বড় বড় ভুল করেছি এবং ভাগ্যদেবীর কাছ থেকে যতটুকু পেরেছি সফলতা ছিনিয়ে নিয়েছি। যে-কোনো মানুষকে তার গন্তব্যস্থলের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিটি দিনকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা উচিত।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘সারা পৃথিবীটাকে সামনে রেখে এবং ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে জীবনপথে যাত্রা শুরু করেছি মাত্র অল্পকাল আগে, এখন তীর্থযাত্রা প্রায় সমাপ্ত হতে চলেছে এবং আমার দিনও প্রায় শেষ হয়ে চলেছে। জীবনের না দেখা পথটাকে আগে কী অন্তহীন আর দীর্ঘ মনে হত, আজ পার হয়ে আসা পথটুকু মনে হচ্ছে কতই না ছোট।‘
চার্লস ডিকেন্স : বিস্ময়কর ও জনপ্রিয় লেখক
ইংরেজি সাহিত্যে সর্বাধিক গ্রন্থপ্রণেতা ও সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখক হওয়াটা ছিল তার ভাগ্যনির্ধারিত। অথচ যখন প্রথম লেখা শুরু করেন, পাছে লোকে ঠাট্টা তামাসা করবে এই ভয়ে অত্যন্ত ভীত ছিলেন। তাঁর প্রথম লেখাটা তিনি গভীররাতে গোপনে ডাক বাক্সে ফেলে আসেন যাতে কেউ জানতে না পারে। বাইশ বছর বয়সে যখন তার গল্প সত্যি ছাপা হল, তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় ছুটাছুটি শুরু করে দিলেন পাগলের মতো। অবশ্য ওই গল্পের জন্য তিনি একটি সেন্টও পারিশ্রমিক পান নি। তার পরবর্তী আটটি গল্পের জন্যও তিনি কিছু পেলেন না। একটা গল্পের জন্য তিনি পান মাত্র পাঁচ ডলারের একটি চেক। তার এ গল্পটি তাকে পাঁচ ডলার এনে দিয়েছিল, কিন্তু তার শেষ পাণ্ডুলিপি তাকে প্রতিটি শব্দের জন্য এনে দিয়েছে পনের ডলার। অর্থাৎ সর্বযুগের সকল লেখকের মধ্যে এটাই ছিল সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।
এই বিশ্ববরেণ্য লেখকের নাম, চার্লস ডিকেন্স। আজ থেকে একশ বছর আগে বড়দিনের সময় লন্ডনে একটা ছোট বই প্রকাশিত হল তাঁর। এর গল্পটা তার জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছিল। অনেকে এটাকে পৃথিবীর অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র বই বলে অভিহিত করেছে। যেদিন এটা প্রকাশিত হল ওইদিনই এক হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেল। এক পক্ষকালের মধ্যে আরো পনের হাজার কপি ছাপা হল। তখন থেকেই এই বইয়ের অসংখ্য সংস্করণ রেব হয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষায় তার অনুবাদ হয়েছে। চার্লস ডিকেন্সের এই জগৎবিখ্যাত বইটার নাম হচ্ছে ‘ক্রিসমাস ক্যারল।