এক্ষেত্রে স্বামীকে শুধুমাত্র যন্ত্র হলে চলবে না, স্ত্রীর প্রেরণা আর সহায়তা পুরোপুরি পেতে হলে স্ত্রীর সম্পর্কেও তার কিছু দায়িত্ব থাকে।
সংসারের প্রতি স্ত্রীর অনেক দায়িত্ব থাকে। সমস্ত পরিশ্রমের মাঝেই স্ত্রী পারেন স্বামীকে সাহায্য করতে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে সাহায্য স্ত্রী করবেন সেটাই হবে প্রকৃত সাহায্য। যাদের বাড়ির কাজ তেমন কিছু করতে হয় না, তারা অনায়াসেই স্বামীকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে পারেন। নিউইয়র্ক শহরের মতো ইস্ট অ্যান্ড অ্যাভিনিউর মিসেস লুইস যা করেন সেটা এই রকম :
মিসেস লুইস তাঁর চিকিৎসক স্বামীর কাজে সাহায্য করতেন। সারাদিন সংসারে কাজ করার পর সন্ধ্যায় মিসেস লুইস স্বামীর কাজে সাহায্য করতেন। স্বামীর কাজে স্ত্রী এমন অংশ নেয় তখন স্ত্রী এক বিশেষ গুণ অর্জন করে থাকে। গার্ল গাইডরা বহু বিখ্যাত কৃতী মানুষের বহু প্ররিশ্রম লাঘব করেছে। বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক অ্যান্টনী ট্রলোপ বলেছেন যে, তাঁর লেখা বই প্রকাশিত হওয়ার আগে তাঁর স্ত্রী ছাড়া আর কেউই ওই পাণ্ডুলিপির একছত্রও পড়ে দেখেন নি। বিখ্যাত ফরাসী সাহিত্যিক এলকোমসের ভয় ছিল বিয়ে করলেই তার কল্পনাশক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত জুলি এলার্ড নামে একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর তার সমস্ত ধারণাটাই বদলে যায়। তাকে বিয়ে করার পরই তার কয়েকটি ভালো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। জুলির সাহিত্যের জ্ঞান থাকায় এলকোমস স্ত্রীর সমালোচনার উপর নির্ভর করতে পারতেন।
বিখ্যাত প্রকৃতিবিদ্ আর মৌমাছি পালন বিশারদ হিউবার মাত্র সতের বছর বয়সে অন্ধ হয়ে যান।
এই অন্ধ অবস্থায় থাকার সময় তাঁর স্ত্রী তাকে প্রকৃতির ইতিহাস’ বইটি পড়ার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন আর শেষ পর্যন্ত তিনিই তা স্বামীকে পড়ে শোনান। তিনি এটা করেছিলেন স্বামীকে বিখ্যাত করে তোলর উদ্দেশ্য নিয়ে।
অনেকেই চান স্বামীর কাজ সম্বন্ধে স্ত্রীরা অনেক বেশি আরও ভালোভাবে জানুক। স্যার জেমস রচিত এক নাটক ‘প্রতিটি স্ত্রী যা জানেন’ নাটকের কোনো-এক দৃশ্যে দেখা যায়, নায়িকা ম্যালী উইলি শুতে যাওয়ার আগে বেশ ভারি কিছু বই নিয়ে চলেছে। তাকে তার ভাইয়েরা ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন করলে ম্যালী জানায় তার স্বামীর নানা বিষয়ে সে জানতে চায় বলেই সে আইনের বই পড়ে নিচ্ছে।
বহু অভিজ্ঞ মানুসের মত হল যে সব স্ত্রীর মনে স্বামীর অবলম্বিত কাজের প্রতি উৎসুক ভাব থাকে, সে তার স্বামী আর স্বামীর নিয়োগকর্তা উভয় পক্ষেরই সত্যিকার সাহয্যকারিণী হন। সুইজারল্যান্ডের কোনো কারখানার এই বিষয়ে ভারি চমৎকার এক নিয়ম চালু আছে। সেখানে সপ্তাহের কোনো এক নির্দিষ্ট দিনে কারখানার কর্মীদের স্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারপর তাদের ওই কারখানা ভালো করে ঘুরে দেখিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রের কাজ, উৎপাদন সবই ব্যাখ্যা করা হয়। কারখানার কর্তৃপক্ষ তাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে লক্ষ্য করে দেখেছেন যে, এই কাজের ফলশ্রুতিতে সুন্দর বাতারবণ তৈরি হয়। ঐ সব মহিলারা অনেকেই খুব বুদ্ধিমতী হওয়ায় নানা উৎপাদন সম্পর্কে মতামতও দেন। এর ফলে দেখা গেছে যে প্রতিষ্ঠানের বেশ উন্নতিও হয়েছে।
মার্টিন কোল ‘টুডেজ উওম্যান’ নামের এক গ্রন্থে বলেন যে, একজন মহিলা নিউ ওয়েস্টার্ন নামে কোনো কারখানা পরিদর্শন করতে গিয়ে তার স্বামীকে কোনো মেশিন চালাতে দেখেন। এরপর স্বামী বাড়ি ফিরে আসার পর মহিলাটি স্বামীকে বলেন মেশিনটার মাথার দিকে সিভার না লাগিয়ে নিচের দিকে একটা পাদানি লাগানো থাকলে পরিশ্রম অনেক কমে যেত। আর উৎপাদনও অনেক বেড়ে যেত। কথাটা তাঁর স্বামীর উপযুক্ত মনে হওয়ায় তিনি কর্তৃপক্ষকে তা জানালেন। কর্তৃপক্ষও তা পরীক্ষা করে দেখলেন উৎপাদন প্রায় বিশ ভাগ বেড়ে গেছে। এই পরামর্শের জন্য কর্মীটিকে সাড়ে তিনশত ডলার পুরস্কার দেওয়া হয়। স্বামীর কর্মজীবনে স্ত্রীর অংশ নেওয়া সত্যিই লাভজনক।
একান্তভাবে মনে রাখা প্রয়েঅজন যে, যদি আপনার স্বামীকে অতিরিক্ত উৎসাহ দিতে চান তবে নিচের কথাগুলি অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন :
১। সাধ্য অনুযায়ী স্বামীর কাজ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন।
২। স্বামীকে তার কাজের ব্যাপারে বাইরে থেকে সহায়তা করুন।
০৯. স্বামীর সেক্রেটারির প্রতি কী ধরনের ব্যবহার করবেন
কোনো পুরুষের সময়বিশেষ প্রিয়তম বন্ধু হল তার সেক্রেটারী। একজন সত্যিকার যোগ্য সেক্রেটারীর সাহায্যে কোনো পুরুষ তার দৈনন্দিন কাজের সমাধান চমৎকার আর সুচারুভাবেই করে ফেলতে পারেন। জীবন অগ্রগামী হওয়ার ক্ষেত্রে সেক্রেটারীর সাহায্য একান্ত অপরিহার্য। এখন প্রশ্ন হল একজন বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন স্ত্রী এর কী রকম অর্থ করতে পারেন?
সেক্রেটারী আর স্ত্রী এই দুজনেরই উদ্দেশ্য কিন্তু এক-আসল মানুষটির জীবনের অগ্রগতি বজায় রাখা। এই ব্যক্তিটির কাজকর্মের শেষ ফল লাভের মধ্যে স্ত্রী আর সেক্রেটারী দুজনেরই একটা সীমা নির্দেশক স্থান থাকে। যেহেতু এই দুজনেরই কাজের মূল সুরটি এক, তাই এটাই হওয়া প্রয়োজন যে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে হবেন পরস্পরের পরিপূরক।
বহু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে, দুজন স্ত্রীলোক সম্পূর্ণ বিপরীত মনোভাব নিয়েই হাজির হন। একে অপরের প্রতিপত্তিতে বিদ্বেষ পোষণ করে চলতে থাকেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস দুজনের সুসংহত সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজে স্ত্রীর ভূমিকাই হয় সব থেকে জরুরি। আমার মনে হয় সামান্য কয়েকটা নিয়ম মেনে চললেই স্ত্রী হিসেবে প্রত্যেকেই স্বামীর সেক্রেটারী সম্পর্কে বিদ্বেষ ভাব থেকে মুক্ত হয়ে চমৎকার এক সম্পর্ক আর সহযোগিতার বাতাবরণ গড়ে তুলতে পরেন। এখন আমারা নিম্নে কয়েকটি নিয়মের উল্লেখ করব :