এরপর টম জনস্টন যেন অন্য মানুষ হয়ে যান, তার মনে হতে থাকে সমস্ত ক্ষত চিহ্নই যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে।
ডঃ পাওয়ার্স প্রতিটি গৃহিণীকে অনুরোধ করেন যে, তাঁরা যেন প্রত্যেকদিন সকালে এমন কাজ করেন যে, তাঁদের স্বামীরা যেন সারাদিন আবেগমণ্ডিত আর আনন্দপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। অনেক বেশি সুখী আর অনুরক্ত স্বামী লাভের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে এই ফর্মুলা ভীষণভাবে কার্যকরী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের ইতিহাসের পাতায় অনেক কাহিনী আছে, যেখানে চেষ্টার ফলে বহু অকৃতকার্য অনায়াসভাবেই সফলতায় মণ্ডিত হয়ে ম্যাজিকের মতোই কাজ দিয়েছে।
সুতরাং আদর্শ স্ত্রীর কর্তব্য হবে অপরের বা স্বামীর ত্রুটির কথা না বলে তার যোগ্যতার স্ফুরণ ঘটানো।
০৭. ব্যর্থ হয়েও সাফল্যের আশা ত্যাগ করবেন না
এখন যে কাহিনীটি বলবো, সেটি হল উনিশ শতকের শেষদিকের।
একজন মিস্ত্রি আমেরিকার মিসিগান রাজ্যের ডেট্রয়েটের ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানীতে কাজ করতো। প্রতিদিন দশ ঘন্টা কাজ করে সে মাত্র এগার ডলার উপার্জন করতো। কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরে সে এক ধরনের কাজে নিজেকে নিযুক্ত রাখতো তা হল বিশেষ এক ধরনের ইঞ্জিন তৈরির কাজে সে একদিন সফলতা লাভ করবে কেউ কোনোদিন বিশ্বাস করে নিতো। একমাত্র তার স্ত্রী বিশ্বাস করতো যে তার স্বামী একদিন অবশ্যই সফল হবেন। শত কাজের মধ্যেও সে তার স্বামীকে এই ইঞ্জিন তৈরির ব্যাপারে বিশেষভাবে সাহায্য করতো। স্ত্রীর এই অসামান্য ভূমিকা স্বামীর মধ্যে এনেছিল আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা।
অবশেষে ১৮৯৩ সালে এক বিচিত্র ঘটনা সকলকে অবাক করে তোলে। একদিন পাড়া পড়শীরা ক্রমাগত কিছু অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা পথের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই পাগল যুবকটি যার নাম হেনরি ফোর্ড, সে ও তাঁর স্ত্রী ঘোড়াবিহীন একটা গাড়িতে রাস্তা দিয়ে চলেছে। গাড়িটা কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরেও এলো। পাড়া-প্রতিবেশীরা নিজেদের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারলো না।
পরিশ্রম আর প্রচেষ্টার দ্বারা এভাবেই জন্ম নিয়েছিল একজন অনন্যপ্রতিভাধর। হেনরি ফোর্ড নামে এই অসীম প্রতিভাবান যুবকটি প্রথম মোটর গাড়ি আবিষ্কার করে। এই মোটর গাড়ি আবিষ্কারের পেছনে তার স্ত্রীর অবদান ছিল অনেকখানি। তাঁর স্ত্রীর ক্রমাগত সাহায্য আর অনুপ্রেরণা এই আবিষ্কারকে অগ্রগামী করেছিল।
কারও পক্ষে যখন অবস্থা প্রতিকূল হয় তখন প্রত্যেক স্বামী আশা করেন প্রেরণাদাত্রী এমন একজন তার পাশে থাকুক। এই স্ত্রীলোকটি আর কেউ নয় তারই স্ত্রী।
মানুষ অনেক সময় এমন অবস্থার মধ্যে পড়ে যখন কোনো কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে অসমর্থ হয়, দুশ্চিন্তা তাকে সর্বক্ষণ ঘিরে ধরে। এই সময় প্রয়োজন এমন একজন স্ত্রীর যে, প্রতিরোধ শক্তি আর আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলবে স্বামীর মধ্যে। স্বামীর কর্মশক্তির উপর একমাত্র আস্থা থাকে স্ত্রীর বিশ্বাস এমনই এক শক্তি যা মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
রবার্ট ডিউপার নামে এক ব্যক্তি বলেন, একমাত্র আমার স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় আমি জীবনে আত্মবিশ্বাসকে জাগ্রত করে সাফল্য লাভ করেছি। ইঞ্জিনের জ্বালানির মতো আমারও প্রয়োজন ছিল প্রেরণার। আমার নির্জীব মানসিক শক্তিকে জাগাতে পেরেছে একমাত্র আমার স্ত্রী।
পবিত্র বাইবেলে আছে, আকাক্ষিত বস্তুর সার হল বিশ্বাস।
স্বামীর প্রতি অবাধ বিশ্বাস অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে। স্ত্রী তার বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে স্বামীকে উৎসাহদান করে, তার প্রেমের পরশে পৃথিবীকে রঙে রূপে ভরিয়ে তুলতে পারে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে এই সূত্রগুলি মনে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
প্রথম নিয়ম :
১। তৎপরতা ও মনোযোগের সঙ্গে স্বামীর বক্তব্য শুনুন।
২। বুদ্দিমত্তার সঙ্গে প্রশ্ন করুন।
৩। বিশ্বাসকে নষ্ট না করে কার্যকরী ভাবে শুনুন। দ্বিতীয় নিয়ম : প্রশংসা ও উৎসাহদানের মধ্য দিয়ে স্বামীকে সহায়তা করুন।
তৃতীয় নিয়ম : স্বামী কোনো কাজে ব্যর্থ হলে স্বামীর শক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করুন ও তার উল্লেখ করুন।
০৮. স্বামীর কাজে সহায়তা করুন ও জেনে নিন
মিসেস আইডো ফিশারের জীবন থেকে এমন এক উদাহরণ আমরা উল্লেখ করবো, যাতে লক্ষ্য করা যাবে একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাজে কতখানি বিমোহিত আর মগ্ন থাকতে পারেন। আইডো ফিশারের স্বামী ছিলেন মেয়ার ফিশার। মি. ফিশার ছিলেন বিরাট এক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরি প্রতিষ্ঠানের সফল বিক্রয় প্রতিনিধি।
মিসেস ফিশারের একমাত্র ব্রত ছিল স্বামীর কাজে সহায়তা করা। তার স্বামীকে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে সাফল্যের তোরণে পৌঁছে দেওয়া। মিসেস ফিশারের প্রেরণায় তার স্বামী জীবনে অভূতপূর্ব উন্নতি করেন। মিসেস ফিশার একদিন আমাকে বলেছিলেন, “আমার স্বামী আহারে, চলাফেরায়, মুখে যে কোনো কাজে ও তার কাজের জন্য দারুণ উৎসুক হয়ে চিন্তা করেন। গত পঁচিশ বছর স্বামীর সাহচর্য আমাকে একই সাথে চালনা করেছে। আমিও তারই সাফল্যের চিন্তায় মশগুল থাকি। যে কোনো কাজেই আমার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান স্বামীর সহায়তা করে যাওয়া। এ কাজ করতে আমি দারুণ আনন্দ পাই।”
মিসেস ফিশার সবসময় চিন্তা করে এসেছেন কীভাবে স্বামীর কর্মশক্তিতে আস্থা রেখে তার বিক্রি বাড়ানো যায়। স্বামী কীভাবে আরও ভালোভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। কীভাবে সমস্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে। স্বামীর কাজে সাহায্য করার জন্য তিনি নিজেকে তৈরি করেছিলেন। স্বামীর কাজকর্মে নিজেকে মগ্ন রাখা মিসেস ফিশারের এক নেশা ছিল। মি. ফিশারও তার স্ত্রীকে নিজের অচ্ছেদ্য অংশ বলেই ভাবতে চাইতেন। এটা প্রমাণিত সত্য যে, কোনো মানুষের উন্নতির পথে তার স্ত্রীর প্রেরণা আর সহায়তাই সবার আগে প্রয়োজন।