পরদিন সকালে খবরের কাগজ খুলে দেখলাম অধিকাংশ খবরই আমার প্রশংসায় ভরা। কাগজে লেখা ছিল নতুন খেলোয়াড় বেটগার অসাধারণ উদ্দীপনাময়। সে দলের সব খেলোয়াড়কেও উদ্দীপিত করেছে। নিউ হ্যাঁভেন শুধু যে খেলায় বিজয়ী তাই নয়, তারা এ মৌসুমের সব সেরা খেলারই নিদর্শন রেখেছে।
আমার মন এই খবর পড়ে আনন্দে ভরে গেল। আমার উদ্দীপনাই আমার ভাগ্যের দরজা খুলে দিল। দিন-দশেকের মধ্যে আমার মাইনে হয়ে গেলো ২৫ ডলার থেকে ১২৫ ডলার। দু’বছর যেতে-না-যেতে নামী ক্লাব কার্ডিনালে সুযোগ পেলাম। সেখানে মাইনে বেড়ে গেল আরও শতকরা ত্রিশ ভাগ। আমি জানি আমার এই সৌভাগ্যের মূল কথা হল-উদ্যম আর উদ্দীপনা।
মি. বেটগার হাতে আঘাত পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বেসবল খেলা ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর তিনি জীবনবীমায় আসেন ব্যবসার চাকরিতে। তিনি ফাঁইডেলিটি মিউঁচুয়াল লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানীতে চাকরি নেন। বছরখানেক কাজ করার পর কোনো উন্নতি না দেখে মি. বেটগার নতুন উদ্যমে উদ্দীপনা নিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি বেসবল খেলার পুরোনো অভিজ্ঞতা ভুলতে পারেন নি।
বর্তমানে মি. বেটগার জীবনবীমা জগতে একজন সফল ব্যক্তিত্ব বলে চিহ্নিত। তিনি বলেন, আমার ত্রিশ বছরের জীবনবীমা বিক্রির অভিজ্ঞতায় লক্ষ্য করি একজন বিক্রয় প্রতিনিধির জীবনে উদ্দীপনা কতখানি। আবার উদ্দীপনার অভাবে বহু বিক্রয়কারীকে প্রায় দেউলিয়া হতেও দেখেছি।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলেই প্রয়োজন উদ্দীপনা। কোনো কাজ যতই কষ্টসাধ্য হোক না কেন এই গুণটি থাকলে কাজে সফলতা অবশ্যম্ভাবী।
সুতরাং প্রত্যেক স্ত্রীর উচিত স্বামীর মধ্যে উদ্দীপনার প্রকাশ ঘটানো, উদ্দীপনাময় কাজে উৎসাহ দেওয়া। আপনার এই উদ্যোগ অনেক সহজ হবে যদি কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা যায়। পরের পরিচ্ছেদে আমরা এই নিয়মগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
০৪. ছয়টি উদাহরণ
যে ছ’টি নিয়মের কথা এই পরিচ্ছেদে উল্লেখ করবো সেগুলো যদি ঠিক মতো অনুসরণ করা যায়, আমার মনে হয় এর সুফল নিশ্চয় প্রত্যক্ষ করা যাবে। একজন আদর্শ স্ত্রী হিসাবে এই নীতি আপনি আপনার স্বামীকে গ্রহণ করতে অনুরোধ করুন। অল্প সময়ের মধ্যেই ফল বুঝতে পারবেন। এবার আমরা নিয়মগুলো আলোচনা করবো:
১। আপনার কাজের জায়গায় শিক্ষা নিন। কাজের সব খুঁটিনাটি আর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সার্বিক সম্পর্কে জেনে নিন : যারা চাকরি করতে অভ্যস্ত তাদের শতকরা অন্তত পঁচাত্তর ভাগ মানুষ মনে করেন, তারা কোনো বিশাল যন্ত্রের একটা অংশ মাত্র। এর অর্থ হল, তারা নিজেদের কাজের গুরুত্ব বা নিজেদেরও গুরুত্ব সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। এই সমস্ত লোক শুধু নিজেদের কাজটুকু নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সেই কাজের সঙ্গে অন্য যে সব কাজ অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত থাকে সে সব কাজ সম্পর্কে তার আর কোনো রকম আগ্রহ থাকে না।
এটা আমাদের জানা দরকার যে, কোনো জিনিস সম্পর্কে জানতে গেলে যেটা একান্ত প্রয়োজন সেটা হল অনুসন্ধিৎসা। যদি অনুসন্ধিৎসা না থাকে তাহলে জানার স্পৃহা গড়ে ওঠা একেবারেই সম্ভব নয়। এই সম্বন্ধে প্রখ্যাত সাংবাদিক আইডা এম, টারবেল বলেন-একবার মাত্র পাঁচ’শ শব্দের একটি রচনা লেখার জন্য আমি কয়েক সপ্তাহ পরিশ্রম করে রচনার বিষয়বস্তুর মালমসলা যোগাড় করেছিলাম। কিন্তু লেখার সময় আমার সংগ্রহ করা মালমসলার সামন্যই কাজে লেগে ছিল। তবু তাতে আমি প্রচুর আনন্দ পেয়েছিলাম। যে মালমসলা বাইরে পড়েছিল সেগুলো থেকে আমার জ্ঞান বেড়ে গিয়েছিল অঢেল। আমার লেখায়ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ায় দারুণ কার্যকরী হয়ে ওঠে।
প্রখ্যত বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের জীবনেও এই অনুসন্ধিৎসা ভীষণভাবে কার্যকরী হয়েছিল। ফ্রাঙ্কলিন জীবন শুরু করেছিলেন এক সাবানের কারখানায় মজুর হিসাবে। কীভাবে সাবান তৈরি করা হয় সে সম্পন্ধে তার আগ্রহ ছিল। নিজের করণীয় কাজে তার একটুও অনীহা ছিল না। কাজের ব্যাপারে মালিকও ফ্রাঙ্কলিনের ওপর খুব খুশি ছিলেন।
এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের উৎপন্ন মালপত্র বিক্রির জন্য বিক্রয় প্রতিনিধি রাখা হয়, তাদের প্রতিটি উৎপন্ন জিনিসের তৈরি বিশদ বিবরণ লিখতে হয়। অথচ বিক্রি করার সময় সেটার কোনো প্রয়োজন হয় না। এই বাড়তি জ্ঞান থাকার দরুন প্রতিনিধিদের দায়িত্ব জ্ঞান বাড়ে আর উৎসাহও দেখা যায়। যে বিষয়ে যত বেশি জানা যায়, সে বিষয়ে আমাদের ততই উৎসাহ বেড়ে যায়। এই জন্যই যে কোনো আদর্শ স্ত্রীর জানা প্রয়োজন যে, যদি তার স্বামী কাজে উৎসাহ বোধ না করে তবে তার ত্রুটি কোথায়? এই ত্রুটি খুঁজে বের করে স্বামীকে উদ্বুদ্ধ করাই হবে স্ত্রীর কাজ। হয়তো লক্ষ্য করা যাবে যে স্বামীর নিজের কাজ সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান নেই বা আগ্রহও নেই, এক্ষেত্রে স্ত্রীর কর্তব্য হবে সেই সুপ্ত অজ্ঞানতাকে দূর করার জন্য সাহায্য করা।
২। লক্ষ্য স্থির করে তাতে লেগে থাকুন : আপনি যদি মনে করেন, কোনো কাজে সফল হবেন তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে কাজটির দিকে স্থির দৃষ্টি রাখা। আপনার জানা অবশ্যই প্রয়োজন যে কাজটির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? এর পরের কাজ হবে তার পিছনে লেগে থাকা। এই ধরনের মন মানসিকতা থাকলে নানা বাধা-বিপত্তি বা সাময়িক ব্যর্থতায় কখনও নিরুৎসাহ হবেন না।