৩। বার্ষিক আয়ের দশভাগ যেন পরিবার পায় : একটা কৌশল সকলের পক্ষে বেশ কার্যকর। সেটা হল, নিজেকে আর পরিবারকে পাওনাদার বলে ভাবতে থাকা। এই জন্যই কমপক্ষে আপনার আয়ের দশভাগ সঞ্চয় করান বা বিনিয়োগ করুন। আপনি যদি স্বামীর আয়ের দশভাগ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন, তাহলে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও খুব বেশি সময় লাগবে না।
এক ভদ্রলোকের কথা আমার জানা আছে, যার নীতি ছিল যেমন করেই হোক আয়ের দশভাগ তিনি বাঁচাবেন, এজন্যই তার যতরকম অসুবিধাই হোক তিনি তা সহ্য করতেন।
৪। দুর্দিনের জন্য তহবিল : বেশির ভাগ বাজেট বিশেষজ্ঞ এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, তিন মাসের সমপরিমাণ অর্থ দুর্দিনের জন্য সঞ্চিত রাখা একান্ত প্রয়োজন। এমার্জেন্সী ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টেই এই টাকা রাখা যায়। তাঁদের মতে, এ কাজ প্রত্যেকেরই করা উচিত। তারা এ কথা বলেন যে, অযৌক্তিকভাবে সঞ্চয় করতে থাকলে অনেক জরুরি কাজে ঘাটতি দেখা দেয়, কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হওয়ার অবস্থায় এসে পড়ে। একসাথে অনেক টাকা সঞ্চয় না করে বরং অল্প অথচ নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করতে শুরু করলে সঞ্চয়ের আনন্দ উপভোগ করা যায়-আর পরিবারের আর্থিক অনটনও থাকে না।
৫। বাজেটকে পারিবারিক উদ্যোগ করে তুলুন : উপদেষ্টারা মনে করেন যে, পারিবারিক বাজেট তৈরি করার কাজে পরিবারের প্রায় সকলেই সহযোগিতা আর উৎসাহ থাকা একান্ত প্রয়োজন। মাঝে মাঝে পরিবারের সদস্যরা বাজেট বৈঠকে উপস্থিত থেকে নানা আবেগময় অভিযোগের সমাধান ঘটাতে পারেন। এতে অনেক সুরাহা হবে।
৬। জীবন বীমা গ্রহণ করে সুখী হয়ে উঠুন : ইনস্টিটিউট অফ লাইফ ইন্সুরেন্সের মহিলা বিভাগের পরিচালক মেরিয়ান স্টিভেন্স বীমা সংক্রান্ত তথ্যাবলীর উপর অতুলনীয় দক্ষতায় আলোচনা করতে পারতেন।
আসলে বীমা সম্বন্ধে ভদ্রমহিলার বিপুল অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি গৃহিণীদের এ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। প্রশ্নগুলো এই রকম : যেমন-আপনি কি জানেন জীবনবীমার পলিসি গ্রহণ করলে আপনার পরিবারের মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে কোনগুলো পূরণকরতে হবে? আপনি কি জানেন স্থায়ী ও অস্থায়ী পলিসির মধ্যে পার্থক্য কোথায় আর দুটোই বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক? আপনি কি জানেন যে আধুনিক জীবন বীমার লক্ষ্য হল দু’রকম। যেমন-যদি বীমাকারী অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান তা হলে সম্পাদিত বীমাচুক্তি তার পরিবারকে রক্ষা করবে। আর যদি তার অকালে মৃত্যু না হয় তবে বার্ধক্যের সময় ওই টাকা তার জীবনে মূলধনের রূপ নিয়ে আসবে? এই ধরনের নানা প্রশ্নই আপনার পরিবারের সার্বিক কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয়। এই সব প্রশ্নের উত্তর কেবল আপনার স্বামীর জানা থাকলেই চলবে না, পরিবারের অন্যতম পরিচালিকা হিসেবে আপনারও এসব জানা থাকা দরকার।
এটি সত্যি যে, টাকাই সবকিছু নয়। কিন্তু কীভাবে আমরা নিজের নিজের উপার্জন দূরদৃষ্টির সঙ্গে ব্যয় করব তা জানার উপরেই আমাদের মনের সুখ-শন্তি স্বামী আর পরিবারের মঙ্গল ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
আমাদের স্ত্রীদের উচিত, স্বামী যা উপার্জন করছেন ব্যয়ের ব্যাপারে অনেক সতর্ক আর সুবিবেচক হয়ে ওঠা। এক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম আমাদের মেনে চলা প্রয়োজন। যেমন :
১। একটি বাৎসরিক বাজেট তৈরি করে ফেলুন।
২। আপনার আয়ের দশ ভাগ সঞ্চয় করুন।
৩। দুর্দিনের জন্য একটি তহবিল তৈরি করুন।
৪। বাজেটকে পারিবারিক বিষয় করে তুলুন।
৫। জমানো সম্পর্কে সজাগ থাকার চেষ্টা করুন।
৩৩. স্বামীর জীবন আপনারই হাতে
পুরুষদের অকাল মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত খাওয়ার ব্যাপটারটা অনেকটাই দায়ী। আর সেই কারণে স্ত্রীদের দোষী করা যায় অনেক ক্ষেত্রেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক পুরুষই পঞ্চাশ বছরের ওদিকে মারা যান। এই অকাল মৃত্যুর হার স্ত্রীদের তুলনায় শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বেশি।
দুঃখের বিষয় হল বেশির ভাগ পুরুষই এজন্য মহিলাদের দায়ী করতে চান।
ডাঃ হার্বার্ট পোলক ‘টু ডেজ উইম্যানে’ প্রকাশিত ‘হোয়াই হাজব্যান্ডস উই টু ইয়ং’ নামক প্রবন্ধে বলেন, স্বামীকে সুস্থ রাখার জন্য অপনার প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে তার পরমায়ু বৃদ্ধি করতে পারে। এই মুহূর্তে আপনার স্বামীর পরমায়ু বৃদ্ধি ক্ষমতা আপনারই হাতে রয়েছে।
স্বামীর ওজন যদি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তাহলে সে সম্ভাবনা কিন্তু অনেকটাই কমে যায়। আমেরিকার ওহিও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক চিকিৎসা বিষয়ক সম্মেলনে এই মন্তব্য করা হয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সমস্যাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।
স্বামীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা আমাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারি না। স্বামীকে দীর্ঘজীবী করতে হলে আমাদের উচিত খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কড়া নিয়ম-কানুন মেনে চলা। অল্প ক্যালোরি যুক্ত অথচ কর্মশক্তি বাড়াতে পারে এমন খাদ্যই নির্বাচন করা উচিত। এছাড়াও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডাঃ ইউজিন হোয়াইটহেডের মতে, প্রথমত চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। তার মতে, দৈনিক তিনবার যে খাদ্য গ্রহণ করা হয় তার পরিমাণ সমান হওয়ার দরকার। তিনি আরও মনে করেন যে,
প্রতিবারের খাদ্যে সমপরিমাণ সব রকম প্রেটিন চাই-ই। উত্তেজক খাদ্য বর্জন করাই ভালো।