অনেক বিদূষী স্ত্রীই স্বামীর শিক্ষাগত অথবা প্রশিক্ষণগত ত্রুটি দূর করতে পারেন। পৃথিবীর অনেক মহান ব্যক্তিই যারা নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে পেরেছেন, তাদের বিঘ্ন সঙ্কুল জীবনকে স্ত্রীরাই সহজ সরল মসৃণ করে তুলেছেন।
কোনো কোনো মানুষ আছেন যারা অত্যন্ত বিনম্র। আপনার স্বামী যদি ওই ধরনের লোকদের একজন হয়ে থাকেন, তা হলে তাকে সাহায্য করতে পারেন। সেটা কীভাবে করবেন তার জন্য কয়েকটা পদ্ধতির উল্লেখ করছি :
১। অতীতে আপনার স্বামী যে যে বিষয় সাফল্য অর্জন করেছেন তাকে সেগুলো স্মরণ করিয়ে দিন।
২। যখনই সম্ভব নানা বিষয়ে মতামত জিজাসা করে তার আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিন।
৩। এমন বন্ধু-বান্ধব লাভ করার চেষ্টা করুন-যারা তাকে প্রশংসা করবেন আর উৎসাহ দেবেন।
আপনার স্বামীর পরিচয় তার প্রকৃতি জানার সঠিক মাপকাঠি নাও হতে পারে। তা সত্ত্বেও তার বাহ্যিক আচরণের উপর নির্ভর করেই লোকে তার সম্পর্কে অভিমান পোষণ করবে।
ত্রিশ, একত্রিশ পাঠের সূত্র : স্বামীকে যেভাবে জনপ্রিয় করা যায় :
১। তাঁকে প্রিয় করে তুলুন-তার প্রতিভার প্রচার ঘটান। তার শ্রেষ্ঠ দিকটি উন্মোচন করুন।
২। আপনি একজন দক্ষ সাংবাদিক হয়ে উঠুন। তার দোষ প্রায় অদৃশ্য করে তাঁর সমস্ত গুণকে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তুলুন।
৩২. বত্রিশ স্বামীর স্বাস্থ্য ও সম্পদ রক্ষা করুন আয় বুঝে ব্যয় করুন
সংসার জীবনটায় দারিদ্র্য আর আর্থিক অক্ষমতার মতো মারাত্মক আর কিছুই নেই। যে লোক নিজের আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করে সে কখনোই কৃতকার্য হতে পারে না। অমিতব্যয়ী স্ত্রী স্বামীর কাছে বিরাট বোঝার মতো। এটা প্রমাণিত সত্য যে, অতিরিক্ত আয় অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একটি পারিবারিক বিষয়ক সম্পর্কে মনস্তত্ত্বের বই আমার হাতে এসে পড়ে। লেখক মনস্তাত্ত্বিক ব্যক্তিটির এক বিশেষ দুর্বলতা ছিল-তিনি কোনো পারিবারিক বাজেট বরদাস্ত করতে পারতেন না। তার মতে, পরিবারের আয়-ব্যয় কোনো ঝামেলার ব্যাপার নয়। হাতে যখন প্রচুর টাকা থাকে তখন আমরা ইচ্ছামতো খরচ করি। আর যখন থাকে না তখন সংযম অভ্যাস করি।
আমি ভদ্রলোকের সঙ্গে একমত যে তার পদ্ধতি বেশ সহজ। টাকা থাকলে খরচ করব, না থাকলে করব না। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই এই পদ্ধতিকে কোনো ভাবেই সত্যিকার বুদ্ধিদীপ্ত অর্থনীতি বলে না। পরিকল্পনাহীন ব্যয়ের অর্থই হল আপনার আয় প্রায় সকলেই ভোগে লেগেছে।
পরিকল্পনা আর ব্যয়ের মাধ্যমে আপনি ও আপনার পরিবারের মানুষ শুধু উপার্জিত অর্থের একাংশ ভোগ করতে পারছেন। বাজেটের অর্থ কিন্তু উদ্দেশ্য বিহীন ব্যয় বা চুলচেরা হিসাবের তালিকামাত্র নয়। এটা হল, আপনার কাছে যে টাকা আছে বা আসছে তার সাহায্যে বেশি পরিমাণে জিনিষপত্র কেনার পরিকল্পিত এক কর্মসূচি। বাজেট অনুযায়ী ব্যয় করলে আপনি কেনাকাটার ব্যাপারে কোথায় হ্রাস-বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, কোটা বাদ দেওয়া উচিত, কোটার সংযোজন চাই, এসব সহজেই বুঝতে পারবেন। আপনি যদি বরাবর বাজেট সম্পর্কে সচেতন না হন, তাহলে বাজেটানুগ হওয়ার পদ্ধতিটি লিখে ফেলুন। কীভাবে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করতে হয় তাও অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করার চেষ্টা করতে শুরু করুন।
আপনার স্বামীকে জীবনযুদ্ধে জয়ী করে তোলার ক্ষেত্রে আপনি যে মস্ত এক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন তা হল, যতদূর সম্ভব তার আয়-ব্যয়ের সাহায্যে চাহিদার সঙ্কুলান করা আর তাকে আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা। আপনার কাছাকাছি ব্যাঙ্কে নিশ্চয়ই নিজস্ব বাজেট থাকে বা এ বিষয়ে তাদের উপদেস্টাও থাকা সম্ভব। তাহলে পারিবারিক বাজেট কীভাবে তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে তাদেরই সাহায্য নিন। তারা নিশ্চয়ই আনন্দের সঙ্গে আপনাকে পরামর্শ দেবেন। বিনা খরচেই ব্যাঙ্ক আপনার সেবায় তৈরি থাকবে। এ ছাড়াও নানা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে পারিবারিক বাজেটের উপর নানা ধরনের বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। এই সব পাঠ করলে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন। তবে আপনার নিজস্ব বাজেট আপনাকেই তৈরি করতে হবে-আর সেটা করতে হবে আপনার নিজের সামর্থ্য ও প্রয়োজনের দিকে নজর রেখেই।
এবার বাজেট সম্পর্কে আপনাকে কিছু ধারণা দিতে চাই। যেমন, তালিকা রাখুন :
১। প্রথমেই খরচের একটা তালিকা রাখতে শুরু করুন : কোথায় কীভাবে ব্যয় কমাতে হবে সেটা ধরতে না পারলেও খরচ কমানো যাবে না। অতএব কিছুদিনের জন্য নমুনা হিসাবে একটা খরচের তালিকা তৈরি করে নিন। ফলে বছরে মোট ব্যয়ের পরিমাণ কত হল, কোন্ খাতেই বা কত তার সবই বুঝতে পারা যায়। এর ফলে যদি দেখা যায় যে, খরচ বেড়ে যাচ্ছে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হয়। এটা করার সত্যিই দরকার আছে।
২। আপনার পরিবারের প্রয়োজনের দিকে নজর রাখার বাজেট তৈরি করুন : বছরের যে সব ব্যয় নির্দিষ্ট, যেমন-বাড়ি ভাড়া, ধার শোধ, জিনিসপত্র কেনাকাটা, বীমার প্রিমিয়াম ইত্যাদির হিসাব রাখা চাই। পারিবারিক বাজেটের ক্ষেত্রে এটা হল জটিলতার দিক। বাজেটের এই দিকের সিদ্ধান্তে পারিবারিক সহযোগিতা আর আত্মত্যগের প্রশ্ন জড়িত। সব কিছুই আমাদের পক্ষে পাওয়া সহজ নয় মনে রাখবেন, চটজলদি কোনো বাজেটে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করা থাকে না।