আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের গৃহাঙ্গন রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছে। তাই আপনার কাজকর্ম পরীক্ষা করে নিন আর দেখুন আপনি আপনার দক্ষতা বাড়াতে পারেন কিনা। মনে রাখা দরকার যে, ক্ষেত্রবিশেষে দ্রুততম ব্যবস্থাই সর্বোত্তম ব্যবস্থা।
মূলকথা হল, গৃহস্থালির কাজের জন্য যেখানে যেটা দরকার আগে থেকেই সেখানে সেটা যেন সাজিয়ে রাখা থাকে। এই প্রসঙ্গে কিছু পরামর্শের উল্লেখ করছিঃ
১। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র : যেমন-টুথপেস্ট, সাবান, তেল একসঙ্গে কিনে রাখলে টাকা পয়সার দিক থেকেও সাশ্রয় হয় আর সময়ও বাঁচে।
২। পরিকল্পনা : কোনো জিনিস কেনাকাটার আগে কতটা দরকার কত দামের মধ্যে আগে থেকে ঠিক করে তবে দোকানের উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন।
৩। ক্রেতা রিচার্স সার্ভিস : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বহু উন্নত দেশে ক্রেতা রিচার্স সার্ভিসের সহায়তা গ্রহণ করা হয়। এই সার্ভিস কর্তৃপক্ষ মালিক বুলেটিনের আকারে আর বার্ষিক তালিকা বা ক্যাটালগ আকারে ক্রেতাদের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দর-দাম ওঠানামা, গুণ, গুণগত পরিবর্তন আর নতুন আবিষ্কার সংযোজন করে ক্রেতাদের সব সময় অবহিত রাখেন। অনুন্নতদেশগুলোতে এই সুবিধার প্রচলন না থাকলেও নিজের পরিবারের চাহিদার জিনিসপত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা যায়। আর একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, দাম বেশি হলেই জিনিসের গুণগত মান কখনোই বেশি হয় না।
৪। তালিকা রাখুন : যদি স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর না হয় তাহলে যে কেউ প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্রের তালিকা রাখলে সুন্দর সময় সাশ্রয় করা যায়। আসল কথা হল, পদ্ধতিগত বিন্যাসের মধ্যে দিয়ে কাজ যেমন সহজসাধ্য হয়ে ওঠে, তেমনই আবার সময় ও অর্থের অপচয় বন্ধ হয়ে যায়।
এবারে যে সব কাজ আপনি করতে পছন্দ করেন না অথচ করতে বাধ্য হন সেগুলি সংক্ষিপ্ত এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তিনটি পদ্ধতি উল্লেখ করবো। এগুলি হল :
১। কাজের পদ্ধতি বিশ্লেষণ : নিজেকে কখন কোন কাজে লাগাবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলুন। কীভাবে অযথা শ্রম ব্যয় করছেন তার একটা হিসাব রাখুন।
২। পরামর্শ : আপনার বান্ধবীদের কাছ থেকে যেমন পরামর্শ নেবেন, তেমন আপনার স্বামীর কাছ থেকেও পরামর্শ নেবেন। এ কথা ভাববেন না যে পুরুষ মানুষ হিসাবে সাংসারিক বিষয়ে তাঁর জ্ঞান নেই। শর্টকাটের ক্ষেত্রে পুরুষদের অবদান প্রচুর।
৩। দক্ষতা অর্জন : যে সব কাজে আপনি অদক্ষ সেগুলো বেশ সতর্কতার সঙ্গেই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে যে সব কাজ করণীয় সেগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। সদ্ইচ্ছা থাকলে দক্ষতা আসবেই।
৪। একটি সতর্কবাণী : যে সমস্ত কাজে আপনি আনন্দ পান আপনার পরিবারের সকলে সুখী হন, সেগুলো শর্টকাট করার দরকার নেই। কোনো কোনো মহিলা সেলাই করা, নানা স্বাদের রান্না করা ইত্যাদি পছন্দ করেন। আপনার ক্ষেত্রে যে রকম ইচ্ছাই হোক সেটা ভালোভাবেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, তাতে অনেক বেশি তৃপ্তি লাভ করবেন।
আধুনিক যুগে বৈজ্ঞানিক বা অবৈজ্ঞানিক যে পদ্ধতিই কাজে লাগানো হোক না কেন, তার প্রধান উদ্দেশ্যই হল অনেকটা কম সময়ে অন্যান্য কাজ শেষ করে সৃজনশীল কাজে বেশি সময় দেওয়া।
সংক্ষেপে ছাব্বিশ, সাতাশ, আটাশ, ঊনত্রিশ পাঠের নিয়মগুলি আমরা লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করব :
১। আপনি গৃহিণী হওয়ার জন্য গৌরব বোধ করুন।
২। আপনার সংসার সকলের জন্য গড়ে তুলুন। স্বামীর সংসারকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আনন্দ ও বিনোদনের ক্ষেত্রে পরিণত করুন।
৩। সময়ের সুবিধা কাজে লাগান।
৪। শর্টকাট পদ্ধতি বা সংক্ষিপ্ত পথে কাজকর্ম সহজতর আর স্বচ্ছন্দ গতির করে তুলুন।
৩০. স্বামীকে জনপ্রিয় করার কৌশল
স্বামীকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে তিনটি কৌশল মনে রাখতে হবে। একটু চেষ্টা করলেই মহিলারা তাদের স্বামীদের জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন। এখন আমরা সেই তিনটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো :
১। স্বামীকে প্রিয় করে তুলুন : প্রথমেই প্রশ্ন রাখবো, যেসব পুরুষ আকর্ষণীয় নন তাদের স্ত্রীদের কিছু করণীয় আছে কিনা। আমার মত হল, অবশ্যই আছে। আমি একজন মহিলাকে জানি যার স্বামী সামাজিকভাবে ব্যর্থ। ভদ্রলোক ছিলেন অসম্ভব জেদী, বিতর্ক প্রিয় আর অসহিষ্ণু। কিন্তু ভদ্রলোকের স্ত্রীর কাছ থেকে তার ছোটবেলার দুঃখ-কষ্টপূর্ণ জীবন কথা শোনার পরেই কিন্তু তার প্রতি আমাদের সমস্ত বিদ্বেষ, বিতৃষ্ণার ভাব দূর হয়ে মন সহানুভূতিতে ভরে যায়। ভদ্রলোকের স্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায় যে, শৈশবে ভদ্রলোককে আশ্রয় আর অন্ন সংস্থানের জন্য আত্মীয় থেকে আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় নিতে হয়। সমস্ত শৈশবের দিনগুলোতে তিনি কারও কাছেই কণামাত্র স্নেহ মমতার স্পর্শ পান নি, তার ভাগ্যে শুধু অপমান আর নিগ্রহ জোটে। এসব কথা শোনার পর ভদ্রলোকের ওই ধরনের আচরণে একটা কারণ বুঝতে কোনো অসুবিধা হল না যে তার স্ত্রী হয়তো তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন নি। কিন্তু স্বামীর ভুল ত্রুটির কারণ সকলের কাছে ব্যাখ্যা করে তার প্রতি সবাইকে সহানুভূতিশীল করে তুলতে পেরেছেন। বিতৃষ্ণা থেকে সহানুভূতি-দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত মেরু। কৃতকার্যময়ী স্ত্রীই পারবেন তার স্বামীকে সুন্দর ও মার্জিত রুচির মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। এই ধরনের স্ত্রী ইতিহাসে বহু সমাজ বিদ্বেষী স্বামীকে যে কীভাবে রক্ষা করেছেন তার প্রচুর নিদর্শন রয়েছে।