এই সব মুহূর্তকে বেশ লাভজনক ভাবেই কাজে লাগান যায়। থিয়োডর রুজভেল্ট যখন আমেরিকার রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন তখন তার ডেস্কের ভিতর সবসময় একখানা বই খুলে রেখে দিতেন। কথাবার্তা আর লোকজন ইত্যাদির দেখা সাক্ষাতের মাঝখানে তিনি যে দু’তিন মিনিট সময় পেতেন সেটুকু ওই বই পড়ার কাজে ব্যবহার করতেন। আপনিও চেষ্টা করলে পারেন আপনার জীবনে যে সময়গুলো নষ্ট হয় সেই সময়গুলোকে কাজে লাগাতে। সৃজনশীল লোকেরা যা করেন আপনিও তাই করে দেখতে পারেন। অর্থাৎ আপনার সময়সূচিকে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করুন। সময় এতই মূল্যবান যে তাকে সৃষ্টি ধর্মী কাজে ব্যবহার করা একান্ত প্রয়োজন।
আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করে থাকবেন যে, আপনার পরিচিত যে সব কর্মব্যস্ত মানুষ ঠিক ঠিক সময়ে তাদের কাজ সম্পন্ন করেন তাদের কিন্তু কখনোই সময়ের অভাব ঘটে না। সম্ভবত, একজন কর্মব্যস্ত স্বামীর তরুণী স্ত্রী যিনি তিন সন্তানের মা, পেশায় তিনি হয়তো মেট্রন, এই সমস্ত কাজের মহা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাকে নিজের হাতে সংসারের যাবতীয় কাজ করতে হয়, আবার রবিবার দিন তিনি গির্জায় প্রার্থনা সঙ্গীতেও অংশ নেন।
এটা ঠিক যে এই ধরনের মহিলারা অনেক বেশি কর্মশক্তির অধিকারিণী হয়ে থাকে। কারণ তারা কীভাবে নিজেদের সব ব্যবস্থা করার মধ্যে দিয়ে ঘর সংসার গুছিয়ে নিতে হয় সেটা শিখে নিয়েছেন আর সবার উপরে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে তারা অত্যন্ত সচেতন আর ওয়াকিবহাল থাকেন। এ কথা সত্য যে, সময়ের অপচয় করা বিপুল অর্থ ব্যয় করা চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। যে সময় একবার চলে যায় তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না। কীভাবে সময়ের অপচয় বন্ধ করা যায়, সে সম্পর্কে এখানে কয়েকটি নিয়মের উল্লেখ করছি :
১। সময় জরিপ করুন : প্রত্যহ আপনি যে সময় ব্যয় করেন সে সম্পর্কে নিষ্ঠার সঙ্গে একটা জরিপ করার কাজ করুন। ভালোভাবে অনুধাবন করলেই বোঝা যাবে সময় কোথায় যায়।
২। আগাম প্রতিটি দিনের কাজে জন্য সময় নির্দিষ্ট করে রাখুন : প্রত্যেক সপ্তাহে পরের সপ্তাহের জন্য আগাম প্রতিটি দিনের কাজের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে রাখুন। মনে রাখবেন, যুক্তিসঙ্গত সময়ে প্রতিদিনের কাজগুলো সমাধা করলে স্নায়ুর উপর চাপ কমে-ক্লান্তি আর অবসাদও দূর হয়ে যায়।
৩। বিভিন্নভাবে সময় কাজ লাগান : সময়ের অভাবে কাজটি করতে পারেন নি, এমন কোনো কাজ বেছে নিয়ে সেটা শেষ করার ব্যবস্থা করুন। এ কাজটি করবেন আপনার পাওনা অবসর সময়টুকু কাজে বেছে নিয়ে সেটা শেষ করার কোনো কারণ নেই।
৪। একটি ঘণ্টাকে দু’ঘণ্টায় পরিণত করুন : মিসেস গুজার্ডি এটাই করতেন। তিনি স্বামীর বিক্রির অভিযান সফল করার জন্যই করতেন। তিনি একটা কাজে নিবিষ্ট থাকার মধ্যেই অন্য কোনো কাজ করতে থাকেন। অর্থাৎ এক বিষয়ের কথাই মনে মনে চিন্তা করে চলেন। যেমন-শিশুকে পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে অনায়াসেই সেলাইয়ের কাজটি শেষ করে নেওয়া যায়। এভাবেই এক ঘণ্টা দু’ঘণ্টায় পরিণত হতে পারে।
৫। বিশ শতকের সময় রক্ষকের পদ্ধতি : দৈনিক সংবাপত্রের বিজ্ঞাপন, ক্রেতা গবেষণা কেন্দ্রের বুলেটিন, ডাকযোগে বইপত্রের গ্রাহক সংগ্রহ ডাকবিভাগ ও টেলিফোনের ব্যবহার ইত্যাদি নিঃসন্দেহে সময় সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যেই চালু হয়। যে সব জিনিস আগে থেকে ডাকযোগে আনার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিঃসন্দেহে সময় বাঁচানোর তাগিদ থেকে উৎপন্ন।
৬। সময় বাঁচানোর জন্য ক্রয় কৌশল শিখুন : আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জানা থাকা, বিশেষ বিশেষ জিনিস কেনা বা বেচা সম্পর্কে অবহিত থাকা আর একই সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যত বেশি কিনে রাখা সম্ভব ক্রেতার পক্ষেও সত্যিই লাভজনক কাজ। সুচিন্তিতভাবে কেনাকাটা একটি বুদ্ধিমানের কাজ। এজন্য অবশ্য সতর্কতার প্রয়োজন। কীভাবে কিনতে হয়, এটা জানা থাকলে আপনি আর্থিক ও সময়ের দুটি দিক থেকেই লাভবান হতে পারেন। নিঃসন্দেহে এটা পৃথিবীর সব দেশেই প্রমাণ হয়েছে।
৭। কাজের প্রতিবন্ধকতা দূর করুন : কাজের সময় যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় একটু চেষ্টা করলেই আপনি তা দূর করতে পারবেন।
‘হাউ টু লিভ অন টোয়েন্টিফোর আওয়ার্স এ ডে’ গ্রন্থটিতে লেখক মি. আর্নল্ড লিখেছেন যে সময় সরবরাহ ব্যাপারটা সত্যই অলৌকিক কোনো ব্যাপার…সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাবেন যে, আপনার জীবনের চব্বিশটি ঘন্টা মন্ত্রবলেই যেন প্রকৃতি আপনার মূলধনের সঙ্গে একই সঙ্গে গেঁথে দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি সারা জীবন ধরে বলেন না, আর একটু সময় পেলেই আমি অনেক পরিবর্তন আনতে পারতাম। মনে রাখতে হবে, আমরা আর কখনোই এর চেয়ে বেশি সময় পাবো না। আমাদের হাতে সময় আছে, সবসময় ছিল-আর তা ভবিষ্যতেও থাকবে।’
২৯. যা বলার সংক্ষেপে বলুন
১৯৪৮ সালে আমরা যখন ইউরোপে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলাম, সেখানে একজন অধ্যাপক আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। ভদ্রলোকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখলাম সেখানে তার স্ত্রী ছিলেন না। তিনি রান্নাঘরে চাকর-বাকরদের কাজের তদারকি করছিলেন। ইতোমধ্যে ভদ্রমহিলা এসে পড়লেন। আমাদের সঙ্গে তাঁর অল্পই কথাবার্তা হল, এরপর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল, ভদ্রমহিলা তার রান্নার মেনু আর তদারকিতে এমনই বিব্রত হয়েছিলেন যে কারও দিকে আর নজর দিতে পারলেন না। এর চেয়ে কোনো রেস্তোরাঁয় গেলে ভদ্রমহিলার সঙ্গে ভালোভাবে আলাপ করা যেত, তার সঙ্গও পেতে পারতাম। ভদ্রমহিলা নিশ্চয়ই ‘শর্টকাট পদ্ধতির কথা জানতেন না। আজকালকার ব্যস্ততার দিনে এই শটকার্ট পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহিণীদের এই শর্টকাট বা স্বল্প পরিশ্রমে কাজকর্ম সমাধা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রচুর মেধা আর উদ্ভাবনীশক্তি ব্যয় করা শুরু হয়েছে। ‘ আমরাই বা এই ধরনের সুযোগ গ্রহণ করবো না কেন? যদি জীবনের কোনো ক্ষেত্রে কর্মশক্তি ও সময়ের ব্যবহার বেশিরকম গুরুত্ব আর তাৎপর্যপূর্ণ হয়, আর তারই সঙ্গে জানা দরকার এই কর্মশক্তি ব্যয় করার মধ্যে দিয়ে আদর্শ স্ত্রী ও মা হাওয়া সম্ভব। বিভিন্ন রকম ফলশ্রুতিতে জানা গেছে দক্ষতা অর্জন আর কাজের মান বাড়িয়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়াই হচ্ছে গৃহিণীদের প্রধান অন্তরায়।