আমরা স্ত্রীরা যখন ঘর সাজানো আর সৌন্দর্যের কাজটি করি, আমরা কখনোই মনে করি না যে ঘরের পুরুষটির আরামের জন্য কী কী প্রয়োজন হতে পারে। স্ত্রী হিসাবে আপনার দরকার স্বামীর হাতের কাছে সেইসব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি তুলে ধরা। স্বামী যদি বিরক্তি বোধ করেন তাহলে বুঝতে হবে কোথাও আপনার ত্রুটি রয়েছে।
ঘরের মানুষটাকে সুখী করে তুলতে পারাই হচ্ছে তাকে ঘরে আটকে রাখার শ্রেষ্ঠতম কৌশল।
৩। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা : অধিকাংশ পুরুষই সুব্যবস্থায় ভরা সুন্দর পরিবেশে থাকতে পছন্দ করেন। সময়মতো খাওয়া-দাওয়ায় অসুবিধা, সকালের নাশতা পরিবেশনে দেরি, অগোচালো বিছানা ইত্যাদি পুরুষকে ঘরের প্রতি ক্রমশই অসুখী করে তোলে। আর এর পরিণতিও হয় ভয়ঙ্কর-তাদের বাইরের রমণীর প্রতি টান দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৪। আনন্দময় পরিবেশ : ঘরের পরিবেশ ভালো কি খারাপ যাই হোক না কেন, তার জন্য কিন্তু গৃহিণীরাই দায়ী থাকেন। একজন স্ত্রী হিসাবে আপনি ঘরে যে পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন তা আপনার স্বামীর সাংসারিক কাজকর্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবেই। আমরা স্ত্রীরা কামনা করি যে নিজের এলাকায় তারা উন্নতি করুক আর পারদর্শিতা অর্জন করুক আমাদের কামনা পূর্ণ করা সম্ভব হবে যদি আমরা ঘরের পরিবেশেকে শান্তিপূর্ণ আর মধুময় করে তুলতে পারি। স্ত্রী হিসাবে আমাদের কাজ হবে পরম নিষ্ঠায় স্বামীর দৈহিক আর মানসিক শক্তি বাড়িয়ে তোলা এবং তাকে রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব পরম স্নেহে পালন করা। যে স্ত্রী তার সংসারে এমন মধুর পরিবেশ সৃষ্টি করতে জানেন ড. পাসিনোর মতে, তিনিই তার স্বামীর জীবনের শূন্যতা পূরণ করতে পারেন, আর গৃহিণী হিসাবে নিজের দায়িত্ব আর ভূমিকাটির কথাটিও উপলব্ধি করতে পারেন।
৫। একটি অনুভূতি ও নিজের সংসার : নিজস্ব পারিবারিক গৃহ হল এক সুখের আকর। এখানে এক অপূর্ব অনুভূতি বিরাজ করে। আর সেই চমৎকার অনভূতি গৃহকর্তাকে দেয় সুখানুভূতির পরশ। কিন্তু কোনো সময় যদি নিজের বাড়িতে পরিবারের কর্তাব্যক্তি তার স্ত্রীর কুশাসনের স্বীকার হন তখন তাঁর মন থেকে সমস্ত শান্তি বিদায় নেয়। আর এর পরিণতিতে এমন ঘটনাও বিচিত্র নয় যে তিনি সব কিছু থেকে অব্যাহতি পেতে চাইবেন। সংসারের কাজে অথবা পরিবারের কারো জন্য কিছু প্রয়োজন হলে সবসময় স্বামীর মতামত নেওয়াই ভালো। নিজের দায়িত্বে সবকিছু কেনাকাটা করে পরে বিলের টাকা মেটানোর সময় স্বামীকে বলবেন না।
মনে রাখবেন, আপনার হাসিমুখে যতই ভালবাসার ঝিলিক থাকুক, কোনো স্বামীই মনে মনে তার তারিফ করেন না।
আশ্চর্য রকম আকর্ষণীয় সোফা না কেনা হলে আপনি হয়তো পছন্দ করবেন না, তবুও স্বামীর কেনা দোলনা চেয়ারটি আপনাকে ভালো মনেই গ্রহণ করতে হবে। একে একে দেখতে পাবেন আপনার স্বামীর রুচিজ্ঞান আপনারই মতো প্রখর, প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছে।
ঘর-সংসার সম্বন্ধে বেশি আলোচনা না করে আমাদের মনে রাখা দরকার যে, সমস্ত পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হল গৃহকে সুন্দর আর নিরাপদ করে তোলা।
স্বামীকে সুখী করতে হলে কিছু জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে তা হলো:
১। গৃহ বা সংসারকে চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে পরিণত করুন।
২। সুখ ও শান্তির ব্যবস্থা করুন।
৩। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর নিয়ম মেনে চলুন।
৪। সংসারকে ঝগড়া-বিবাদহীন শান্তির নীড় করে তুলুন।
৫। দুজনের মিলিত প্রচেষ্টায় সংসারকে আনন্দময় করে তুলুন।
২৮. অযথা সময় নষ্ট করবেন না
আমরা প্রায় সকলেই বলে থাকি যে সময় নেই, সময়ের খুব অভাব। কিন্তু সারা দিন রাতের এই চব্বিশ ঘন্টা সময় নষ্ট না করে ঠিকমতো কাজে লাগানোই হল আসল কথা। আমেরিকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের স্ত্রী মিসেস রুজভেল্টকে কেউ কর্মবিমুখ অলস অপবাদ দিতে পারে নি। লেখাপড়ার সাথে সাথে নানারকম কাজ, তারই সঙ্গে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপন করার জন্য তৎপরতা চালানো এই সমস্ত কাজের মধ্যে তিনি অহরহ ডুবে থাকতেন। এ কথা কখনোই শোনা যায় নি যে সময়ের অভাব হয়েছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার মিসেস রুজভেল্টের মতো চব্বিশ ঘন্টা হাতে পেয়েও আমরা কিন্তু নিজের আর সংসারের কাজে লাগে এমন কিছুই করতে পারি না। কিন্তু কেন পারি না? এর উত্তর হল, সংসারের কাজের জন্য।
কোনো মহিলা যদি তার সময়কে সুনির্বাচিতভাবে ব্যয় করেন তবে নিজের এই ফলাফল দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবেন। তাই বলা যায়, বিষয়টির তাৎপর্য লক্ষ্য করে নিজেকে দিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করুন। এক সপ্তাহের রোজনামচা আর খতিয়ান পর্যালোচনা করলে আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারবেন, কীভাবে আপনার জীবনের মূল্যবান সময় বয়ে চলেছে।
এই সাপ্তাহিক হিসেবের আলোয় আপনি আপনার সময়ের বাজেট তৈরি করে নিন। এর মধ্যে থেকেই নির্ধারণ করে নিন, কোন কাজের জন্য দৈনিক কত সময় ব্যয় করবেন। দেখবেন, আপনার সময়ের বৃথা অপচয় আপনার থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে।
নিউইয়র্কে ‘নিউ স্কুল ফর সোস্যাল রিসার্চ কর্তৃপক্ষ একটি প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করেছেন। এই কোর্সের নাম হল সমাজের নারীর মানবিক সম্পর্কের কারখানা।’ মিস এলিমা রাইসক নামে একজন ব্যবসায়ী আর শিক্ষিকা এখানে শিক্ষাদান করেন। এই শিক্ষার প্রধান অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মহিলাদের সমাজে যথোপযুক্ত মর্যাদা আর স্বীকৃতি লাভের জন্য করণীয় বিষয় শেখানো। এই শিক্ষণ ব্যবস্থার প্রথম কাজ হল প্রত্যেক ছাত্রী কীভাবে সময় ব্যয় করছে তার তালিকা তৈরি করা। কেননা, দৈনিক চব্বিশ ঘন্টা সময়ের বরাদ্দ থেকেই এইসব মুহূর্ত নিঃশেষ হয়ে চলে।