তিনি বলেন, বাইরের কাজকর্মগুলো আমার মূল্যবোধের ও উন্নতির বিকাশ ঘটিয়েছে। আগে যে সব নগণ্য ব্যাপারে আমার রাগ হতে চাইতো বর্তমানে নগণ্য বলে সেগুলোর প্রতি কোনো মনোযোগ না দিয়ে আমাদের ঘরকে কীভাবে সকলের জন্য প্রেম ও শান্তির সখের স্বর্গে পরিণত করা যায়, সেই ধরনের অপেক্ষাকৃত বড় ধরনের চিন্তায় মনোনিবেশ করতে পারি।
কোন্ ধরনের কাজ আপনার উপযুক্ত সেটা আসলে নির্ভর করে আপনার প্রতিভার বিশেষ দিক আর অভিরুচির উপর। ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি নিউইয়র্ক শহরে শেক্সপীয়ার ক্লাবে যোগদান করে আমি প্রচুর প্রশান্তি আর আনন্দ পেয়েছিলাম। এই ক্লাবকে আমি বরাবর পছন্দ করে এসেছি। সেখানে নান বিষয় নিয়ে আলোচনা হত। চারশ’ বছরের প্রাচীন পৃথিবীতে পদচারণা করতে গিয়ে আমি আমার বিংশ শতাব্দীর পৃথিবীর সমস্যাকে নতুন পরিপ্রেক্ষিতেই দেখার সুযোগ পেতাম। প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন সম্পর্কে আমার স্বামীর উৎসাহ অপরিসীম। অন্যদিকে আবার সে শেপীয়ারেরও বড় ভক্ত। আমরা একে অপরের কাজ থেকে নিজের নিজের মানসিকতা সম্বন্ধে প্রচুর আলোচনা আর সমালোচনা করেছি। আমরা বিভিন্ন ধরনের যুক্তিতর্কেরও অবতারণা করি। এছাড়া নানারকম রঙ-তামাশাতেও আমরা সময় কাটাই।
এটা খুবই সত্যি যে, বিয়ের ফলে স্বামী-স্ত্রী এতই কাছাকাছি এসে পড়ে যে সব কিছুই একসাথে করার চেষ্টা করার একটা চমৎকার মানসিকতা গড়ে ওঠে। একটা ভিন্ন প্রবৃত্তি বৈচিত্রের অবকাশ ঘটায় আর বিবাহিত জীবনকে স্বাভাবিক এবং সজীব রাখতে সহায়তা করে।
আপনারা যদি মনে করেন যে, আপনাদের বিবাহিত জীবনের কোথাও কোনো রকম অসঙ্গতি থেকে গেছে তাহলে আপনাদের জীবনের বিভিন্ন দিক বিচার করে দেখা প্রয়োজন। অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে যে, আপনি আপনার স্বামীর যথাযযাগ্য বা উপযুক্ত সহধর্মিণী বা জীবনসাথী হতে পেরেছেন কি না।
বাইশ, তেইশ, চব্বিশ, পঁচিশ পাঠের সূত্র ক’টি মেনে চলার চেষ্টা করুন:
১। সব সময় মনে আনন্দ রাখার চেষ্টা করবেন।
২। আপনি আপনার স্বামীর কিছু কিছু খেয়াল বা অভিরুচির অংশীদার হয়ে উঠুন।
৩। আপনার স্বামীকে তার নিজস্ব শখ মেটাতে দিন আর এ জন্য তাকে কিছু সময় একা থাকতে দিন।
৪। স্ত্রী হিসেবে আপনিও বাইরের কাজের শরিক হয়ে উঠুন।
২৬. কীভাবে স্বপ্নের নীড় গড়বেন
আজকাল সুখী গৃহ, স্বপ্নের নীড় রচনার জন্য মহিলারা শ্রদ্ধাভাজন হন না একথা বা অভিমত বহু বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদৃই প্রকাশ করে থাকেন। স্ত্রী হিসাবে নারী জীবনের এই প্রাথমিক দায়িত্ব সম্পাদন করার প্রতি আমরা যতই উদ্যোগ গ্রহণ করি না কেন, তার প্রতি সামাজিক ভাবে একেবারেই কোনো রকম গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এর ফলে মহিলারা যেন অসহায় আর আহত বোধ করেন। কোনো মহিলা যখন নিজেকে গৃহবধু বলে পরিচয় দিতে যান তার গলায় যেন ক্ষমা প্রার্থনার সুর বেজে ওঠে। কিন্তু মনে হয় যে মহিলা স্ত্রীর ভূমিকা পালন করার মধ্যে দিয়ে গৃহস্থালির কাজ সম্পন্ন আর পরিবারের লোকজনের পরিচর্যার জন্য তার সমস্ত সময় আর কর্মশক্তি ব্যয় করেন তার গর্বই বোধ করা উচিত। কোন সংসারে কত্রীকে বিভিন্ন ধরনেরই না কাজ করতে হয়। প্রতিনিয়ত তাকে যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় তার জন্য কোনো পেশাদার অভিযানের থেকে প্রয়োজন হয় অনেক বেশি মেধা আর বহুমুখী নজর। কোনো গৃহকর্ত্রীর জীবনকে যদি আমরা ঠিকভাবে লক্ষ্য করে যাই তবে অবাক না হয়ে পারা যায় না।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোনো গৃহবধূর কাজ অফিসের কর্তাব্যক্তির চেয়ে অনেক অনেক বেশি। ব্যাপারটা ভাবতে খুব অবাক লাগে যে বেচারী গৃহবধূকে কেবল চালাক, চটপটে, কর্মদক্ষ হলে হবে না তাকে আবার সুন্দরী আর মোহময়ী হতে হবে স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য। তাই বলছি, স্ত্রী হিসাবে আমরা যে কখন কোন কাজে অনভ্যস্ত হয়ে পড়ি তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। আমার মনে হয়, আমরা খুবই আনন্দ পেতে পারতাম যদি বছর বছর গৃহকর্ত্রীদের বিশেষত তরুণী গৃহবধূদের বাৎসরিক পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতো। কেননা, একজন গৃহবধূ অনেক বেশি বিচক্ষণ, আর তার দক্ষতাও প্রতিভার অধিকারী।
এবারে আমরা যে প্রশ্নটি রাখবো তা হল সংসার গড়ে তোলার ব্যাপারে আপনার ভূমিকা আপনার স্বামীর সাফল্যের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করে থাকে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি উওম্যান দি লষ্ট সেক্স গ্রন্থের রচয়িতা বিখ্যাত ডা. ফানহ্যাম-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। তাঁর বক্তব্য হল, একজন পুরুষ যা আয় করেন তার স্ত্রী বিবেচনা আর কাজের মধ্যে দিয়ে এর কার্যকারিতা শতকরা ত্রিশ থেকে প্রায় ষাট ভাগ বেড়ে যায়। সাংসারিক অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করা যায় যে, উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর মাধ্যমে খরচ হলে সপ্তাহ বা মাস ধরে সংসারে অর্থের কোনো অভাবই বোঝা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
আমেরিকার বিখ্যাত লাইফ পত্রিকায় ‘উওম্যানস্ ডিলেমা’ শীর্ষক কোনো একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, একজন পুরুষ তার ঘরে স্ত্রীর কাছ থেকে যে সেবা যত্ন আর সহযোগিতা পেয়ে থাকেন তার জন্য তিনি যদি নগদ অর্থ ব্যয় করতেন, তাহলে তাকে খরচ করতে হতো বছরে কম করেও প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এই তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে ১৬ই জুন তারিখে।