এ কথা মনে রাখা চাই যে স্বামী-স্ত্রীর সাফল্য প্রয়াসী তাকে অগ্রগামী মহিলাদের মতোই উৎসাহী আর সংগ্রামী মনোভাব সম্পন্ন হতে হয় স্বামী যে কাজ পছন্দ করেন সেই কাজে উৎসাহ দিতে হয়। অর্জন করতে হয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা।
এমন এক মানুষের কথা জানা ছিল যিনি তার নির্দিষ্ট চাকরিটি করতেন একান্ত অনিচ্ছায়-তার কাছে ওই কাজ যেন মৃত্যুর আদেশের মতো মনে হত। এর কারণ তার স্ত্রী চাইতেন আরও নিরাপত্তা আর উন্নতি।
ভদ্রলোক বুককিপার হিসাবে চাকরি শুরু করেন। আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ভদ্রলোক একটা মোটর গাড়ি মেরামত করার কারখানা স্থাপন করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বিয়ে করেন। তার স্ত্রী চাইলেন, যা করছেন নিজেদের একটা বাড়ি না হওয়া পর্যন্ত সেটাই করে যান। শেষ পর্যন্ত তাদের একটা বাড়িও হল, তাদের সন্তানও হল। কিন্তু স্ত্রী সেখানেই থেমে থাকলেন না, তার চাপে পড়ে ভদ্রলোক পরিশ্রম করেই চললেন। বেশ কয়েক বছর ওই ভাবেই কেটে চললো। ভদ্রলোক যা কিছু করলেন সবই শুধু মাত্র স্ত্রীর চাপে পড়ে করেন। ওই কাজে তার ইচ্ছা কিছুমাত্র ছিল না। কোনো পরিবর্তন তার স্ত্রীর মোটেই কাম্য। ছিল না।
জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে ভদ্রলোক আজ বড়ই ক্লান্ত। তিনি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন, স্মরণশক্তি একেবারেই নেই। কোনো রকমে তিনি জীবনের বোঝা বহন করে চলেছেন। জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই তাঁর কেটেছিল অতৃপ্তির মধ্য দিয়ে। স্ত্রীর চাপে পড়ে তাকে এমন কাজ করে যেতে হয় যাতে মানসিক আনন্দ এক কণাও ছিল না।
অথচ লোকটি যদি নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারতো তাহলে কিছুটা মানসিক আনন্দ লাভ করতে পেতো ও অনাবিল তৃপ্তি। হয়তো একদিন সাফল্যও আসতো। আমেরিকার শিক্ষার ব্রিউয়িং প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি প্রায় ছ’হাজার গৃহিণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক সমীক্ষা তৈরি করেছেন। এই সমীক্ষাতে দেখা যায়, শতকরা পঁচিশ ভাগ গৃহিণী তাদের স্বামীদের জীবনে কোনো পরিবর্তন চান না। বাকি শতকরা পঁচাত্তর ভাগ পরিবর্তন চান।
একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, যে ধরনের কাজ মানুষকে সুখী করে তোলে সেই রকম কাজই তার উপযুক্ত। যে কাজ তাকে শুধু ধনী বা সম্পদ শালী করে সে ধরনের কাজ নয়। যে কাজে মানুষ তৃপ্তি পায় সে কাজে তার সাফল্যও আসে না। এই কারণেই স্ত্রীদের কর্তব্য সচেতন হওয়া উচিত-তাদের স্বামীদের প্রতি গভীর অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে তাদের কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে। সামাজিক প্রতিপত্তির আকাক্ষা অতিরিক্ত অর্থলোভ তাই ত্যাগ করা দরকার। যে স্ত্রীরা স্বার্থপরতা শূন্য হয়ে স্বামীর কাজে সময়মতো প্রেরণা যোগাতে তৈরি থাকে তাদের জীবনেই সাফল্য আসে।
মনে রাখা দরকার যে, সাফল্য বলতে সেই কাজকেই বোঝায় যে কাজ আপনার পছন্দ। তাই অপছন্দের কাজ সম্পূর্ণ দূর করে দিতে হবে। আমরা কারও পরিপূর্ণ সাফল্য চাইলে তাকে পরিপূর্ণতা অর্জন করতেই হবে, তাদের পরিবর্তনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে আর তারই সঙ্গে নানা বাধা-বিপত্তির জন্য তৈরি থাকতে হবে।
আঠার, উনিশ, কুড়ি, একুশ পাঠের সূত্র : স্ত্রী হিসেবে আপনার স্বামীকে সুখী ও সমর্থ দেখতে চাইলে নিচের এই ত্রুটিগুলো ত্যাগ করুন:
১। অযথা স্বামীকে বিরক্ত করবেন না।
২। স্বামীর অফিসের কাজে নাক গলাতে চাইবেন না, যাতে তার কাজের জায়গায় অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।
৩। স্বামীর ক্ষমতার বাইরে এমন কিছু বলবেন না বা তাকে দিয়ে করানোর চেষ্টা করবে না।
৪। সুযোগ গ্রহণ করার সময় কোনো কাজে ভীত হবেন না।
২২. স্বামীকে সুখী করার চেষ্টা করুন
যে সমস্ত স্ত্রী সম্প্রদায়িনী তাদের বিশেষ কিছু গুণ অবশ্যই থাকে। স্বামীকেও তার মধ্যে বাদ দেওয়া উচিত নয়। যে সব স্ত্রী স্বামীদের মনোহারিণী তাদের স্বামীরা কাজে সব সময় সাফল্য লাভ করেন।
অনেক সময় দেখা যায়, অনেক মহিলা অন্তর দিয়ে তাদের ভালবাসে কিন্তু কিছুতেই তাদের স্বামীদের সন্তুষ্ট করতে পারে না। এর কারণ হল তারা সব কিছু তলিয়ে না দেখেই কাজ করতে চান। তাই ক্রটি অবশ্য শুধরে নেওয়া যায়। সামান্য চেষ্টা, যত্ন আর আশাতীত রকম কম সময়েই যে কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে পারে যদি সে একটি আগ্রহী হয়। কেননা, কোনো মানুষকে সন্তুষ্ট করা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। অনেকের ভুল ধারণা হল রূপ-যৌবন আর সৌন্দর্যের মাধ্যমেই বোধ হয় মানুষকে সন্তুষ্ট করা যায়। কিন্তু তা কখনোই নয়, সৌন্দর্য ক্ষণিক আনন্দ দান করতে পারে, চিরকালীন নয়। আসলে ভালবাসার সঙ্গে সৌন্দর্যের কোনো যোগ নেই। দৈহিক সৌন্দর্যের কোন যোগ নেই দৈহিক সৌন্দর্য কখনোই ভালবাসা বা সুখের পক্ষে একান্ত অপরিহার্য বস্তু নয়। বহু নারীই তাদের স্বামীদের মনোরঞ্জন করার জন্য তাদের সৌন্দর্য কাজে লাগান নি। এমন কী বহু বিখ্যাত মহিলা সুন্দরী ছিলেন না। প্রতিটি প্রাইভেট সেক্রেটারী জানেন কীভাবে তাদের বসকে সন্তুষ্ট করতে হয়। এই ধরনের কাজ যারা করেন তারা যে সবসময় অপরূপ সুন্দরী হন তা মোটেই নয়। তাদের গুণ মনোরঞ্জন আর কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দক্ষতায় নির্ভরশীল।
এই ধরনের সেক্রেটারী কেমন করে হতে হয় বই থেকে বহু শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি। এই কাজে যারা দক্ষতা অর্জন করেছে তারা বেশ সহজেই বসদের মতো স্বামীরও মনোরঞ্জন অবশ্যই করতে পারবে। পারিবারিক শান্তি কিন্তু স্ত্রীদের সুন্দর চিন্তা, শিক্ষা আর করণীয় কাজের মধ্যে দিয়েই আসে।