ডাক্তার ওয়েজম্যানের সঙ্গে নানা আলোচনার পর আসল রোগ ধরতে পারলেন। ডাক্তার পুলিশ প্রধানকে জানালেন ওয়েজম্যানকে যেন আগের পদেই কাজ করতে দেওয়া হয়, না হলে তারা একজন দক্ষ পুলিশ কর্মীকে হারাবেন। কারণ ওয়েজম্যান অবসাদগ্রস্ত, পুলিশ প্রধান আবার ওয়েজম্যানকে আগের পদেই ফিরিয়ে আনার পর তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে লাগল। অবসাদও দূর হয়ে গেল। মাইনের চেয়ে অনেক বেশি মহৎ হল স্বাস্থ্য, সুখ ও তৃপ্তি।
অনেক স্ত্রী আছেন যারা তাদের স্বামীদের চাকরিতে উঁচু পদে দেখতে আগ্রহী। প্রতিযোগিতায় স্বামীদের জয়ই তাদের একমাত্র কাম্য, হঠাৎ কোনোভাবে কোনো স্বামী এই ধরনের উঁচুপদে আসীন হলে পরে কিন্তু নানা সমস্যা পারিবারিক জীবনকে কন্টকিত করে তোলে। এখন স্বামীদের আর আগের জায়গায় ফিরে আনার কোনো উপায় থাকে না। কারণ সেটা তার ক্ষমতার বাইরে এ কথা ঠিক যে অত্যধিক মাত্রায় উচ্চাকাঙ্ক্ষা সাংঘাতিক রকম ক্ষতিকর। নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় একটি খবরের শিরোনাম আমার নজরে পড়েছিল, সেই শিরোনামে জানা যায় যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বহু অফিসার উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
কিছু ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। আমরা আমাদের আয়ত্তাধীন কাজের অনবরতই সমালোচনা করি-আর যে কাজ আমাদের বহির্ভূত তারই প্রতি আমাদের আগ্রহ থাকে সব থেকে বেশি। এই মিথ্যার পিছনে ছুটতে চেয়ে আমরা ব্যর্থ হই আর নিজেদের বা স্বামীদের আত্মহত্যার পথ খুলে দিতে চাই। এ বিষয়ে ডাঃ পিটার জে, স্টেইনক্রোন হাউ টু স্টপ কিলিং ইওর সেলফ’ গ্রন্থটিতে এই ধরনের মনোভাবাপন্ন স্ত্রীদের দায়ী করেছেন, যারা আরও সম্মান-অর্থ আর জীবনধারনের জন্য বিলাসিতা আর তারই সঙ্গে প্রতিবেশীদের চেয়ে আরও যশ প্রতিপত্তি লাভ করার জন্য স্বামীদের উৎসাহিত করেন সেই স্ত্রীদের তিনি দোষারোপ করেছেন।
ডা. স্টেইনক্রোন বলেন, ওই ধরনের মহিলারা হয় জন্মসূত্রে বা শিক্ষার ফলে এই ধরনের অতিমাত্রায় উচ্চভিলাসী হয়ে থাকেন। আমাদের একমাত্র উচিত হবে আমাদের স্বামীদের তাদের ক্ষমতার সদ্বব্যবহার করতে দেওয়া আর অযথা ব্ৰিত না করা। স্ত্রী হিসাবে কোনোভাবেই আমাদের উচিত নয় যে, স্বামীদের অনির্ধারিত কোনো কাজের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা।
বিখ্যাত লেখক এন. ডি. ব্যারোচ তাঁর ‘আর্ট অব লিভিং’ গ্রন্থে বলেছেন যে, “একজন রাষ্ট্রনায়ক কখনোই রাষ্ট্রের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে না। আবার তেমনই একজন ভ্রমণকারী পৃথিবীর সব দেশও ভ্রমণ করতে পারেন না।” এই কারণে প্রয়োজন দেখা দিলে কোনো প্রলোভন মত্ত অনুপযুক্ত ব্যক্তিকেও প্রয়োজন দেখা দিলে কোনো প্রকল্প থেকে সরিয়ে দিতে হয়।
তাই স্ত্রীদের সব সময় মনে রাখা প্রয়োজন, স্বামীর সাফল্য যদি চান তবে তাকে উৎসাহিত করুন, ভালবাসুন ও তার সহকর্মী হয়ে উঠুন। কিন্তু কখনোই, তাঁকে দিয়ে কিছু অতিরিক্ত কাজ করানোর চেষ্টা করা উচিত হবে না।
২১. পরিবর্তনে ভয় পাবেন না
আমেরিকার কানসাস প্রদেশের এক খামারের মালিক চার্লস রবার্টসন আশি বছর আগে একবার পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন ইন্ডিয়ান সীমান্তে গিয়ে কিছু করতে পারেন কি না। এরকম কিছু মনস্থ করেই তিনি তার স্ত্রী হ্যারিয়েট সমস্ত মালপত্র আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা ওয়াগনে চেপে অজানার দিকে যাত্রা শুরু করনে। শেষ পর্যন্ত তারা আমেরিকার ওকলাহোমার উত্তর-পূর্ব দিকে সিমারুন নদীর তীরে থাকার ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সেখানে রবার্টসন একটা কাঠের বাড়ি বানিয়ে ফেলেন। এরপর কিছুদিন কাটলে তিনি সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে ওই ছোট্ট গ্রামীণ এলাকায় একটা দোকান করেন। ওই গ্রামটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে টালমা’ নামে পরিচিত।
হ্যাররিয়েটের সময় তেমন ভালো যাচ্ছিল না। অর্থাভাবে নটি সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন কাটছিল, তাদের তৈরি ঘর ছিল সম্পূর্ণ খবরের কাগজের। গ্রামে ডাক্তার বলেও কেউ ছিল না। ছেলেমেয়েদের স্কুল বলতে ছিল একখানা কামরার এক মিশনারি বিদ্যালয়। আবহাওয়া ছিল যেমন গরম তেমনই শীত। তা সহ্য করা খুবই কঠিন। রবার্টসন দম্পতি কিন্তু সব কিছুই সহ্য করতে শিখলেন, প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিলেন, আর ধীরে ধীরে সফলতার দিকে এগিয়ে চলতে থাকেন। হ্যারিয়েট স্বামীর জন্য সবই হাসিমুখে সহ্য করতে থাকেন। তিনি স্বামী ও ছেলেমেয়েদের দেখতে চাইতেন উন্নতিশীল নাগরিক আর শিক্ষিত। একে একে তারা সত্যিকার সুখী দম্পতি হয়ে ওঠেন।
রবার্টসন পরিবার ওই এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওই সুদূর সীমান্ত এলাকা যে উন্নত হয়ে ওঠে তার জন্য এই পরিবারটির দান অসামান্য। তাদের চেষ্টায় এক নতুন অঞ্চল সেখানে গড়ে ওঠে। সবচেয়ে প্রশংসিত হল মিসেস রবার্টসন। তাঁর স্বামীর প্রতি অবিচল আস্থা, ভালবাসা আর কঠিন পরিশ্রমই এই সুন্দর পরিবেশের জন্ম দেয়।
হ্যারিয়েট রবার্টসনের জীবনে থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, যারা কষ্ট আর সহিষ্ণুতার মধে দিয়ে স্বামীকে উৎসাহ যোগাতে পারে তারা রোগ, বিপদ আপদ সবকিছুই অনায়াসে দমন করতে সক্ষম। ভয় তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। কোনো বাধা-বিপত্তি এই ধরনের মানুষের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করতে পারে না। তারা কখনও অতীতে সুখ ঐশ্বর্য বা ধনসম্পদের জন্য ভাবেন না। সমস্ত দেশেই এমন মানুষ ধন্যবাদের যোগ্য।