(৬) স্বামীকে দিয়ে জোর করে কোনো কাজ করানোর চেষ্টা না করে বরং অনুপ্রেরণার মধ্যে দিয়ে সেটা করাই ভালো।
১৯. স্বামীর কাজে মাথা গলাবেন না
কিছুদিন আগে এক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তাঁর মতে,
কীভাবে স্ত্রীরা স্বামীদের জীবনে উন্নতির পথে সহায়তা করতে পারে।
ভদ্রলোক উত্তরে বললেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস স্ত্রীরা যেভাবে স্বামীদের উন্নতির সহায়তা করতে পারেন তার মধ্যে দুটি কাজ প্রধান। প্রথমটি হল, স্বামীকে প্রকৃত ভালবাসা; আর দ্বিতীয়টি হল, স্বামীর কাজে বাধা সৃষ্টি না করে তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া।’ যে কোনো প্রিয় স্ত্রীরই কর্তব্য হওয়া উচিত তার স্বামী যাতে সুখী-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
অনেক স্ত্রী আবার স্বামীকে আরও উঁচু পদে প্রমোশন পাওয়ার জন্য উৎসাহ দান করতে পারে। তবে স্বামীর কাজে স্ত্রীর অকারণ হস্তক্ষেপ ও অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে। তাই স্বামীর কাজে মাথা গলানো ঠিক নয়।
কিছুদিন আগে আমার জনৈক বন্ধু বলেন যে তার প্রতিষ্ঠানে বহুদিনের উচ্চপদস্থ একজন কর্মচারী বরখাস্ত হন, কারণ তার স্ত্রী বেশ জোর করেই তার কাজে হস্তক্ষেপ করতেন। স্ত্রী যে কাজ করেছিলেন তা অত্যন্ত গর্হিত তাতে সন্দেহ ছিল না। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানেরই অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তার ধারণা ছিল, তারা স্বামীর প্রতিদ্বন্দী। ভদ্রমহিলা ওইখানেই থামেন নি। তিনি ওই সব কর্মচারীর স্ত্রীদের বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা রটাতে শুরু করেন।
স্বামী এসব ব্যাপার জানার ফলে নানাভাবে স্ত্রীকে নিরস্ত করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তিনি অপারগ হয়ে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এ ছাড়া তার কোনো পথ ছিল না। স্বামীর কাজে স্ত্রীর অকারণ অন্যায় হস্তক্ষেপের পরিণতি এই রকমই হতে পারে।
২০. স্বামীর কাজে উৎসাহ দিন
১৯২৬ সালে জেন ওয়েলস টমাস কার্লাইলকে বিয়ে করেন। তিনি ইচ্ছে করলে যে কোনো উচ্চপদস্থ মানুষকে সহজেই বিয়ে করতে পারতেন। কারণ টমাস কার্লাইল অসাধারণ ধীশক্তি সম্পন্ন মানুষ হলেও প্রায় গ্রাম্য আর কিছু বিচিত্র চরিত্রের। প্রচণ্ড রকম খামখেয়ালী। তাঁর অর্থকরী অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। বলতে গেলে কিছু ভবিষ্যতও ছিল না। থাকার মধ্যে তাঁর যা ছিল তা হল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর সুপ্ত প্রতিভা।
জেন কার্লইল তাঁর স্বামীর জীবন-যাত্রার মানকে করে তুলতে চান উন্নত। সম্রমকে উন্নতির চরম সীমায় পৌঁছে দিতে চান।
জেন নিজে ছিলেন একজন সত্যিকার ধীশক্তি-সম্পন্ন মহিলা কবি। অথচ স্বামীর কাজে আরও বেশি সময় দেবার উদ্দেশ্যে কবিতা রচনা ত্যাগ করেন। টমাস কার্লাইল ছিলেন একজন স্কটল্যান্ডের মানুষ। জেন কার্লাইল চাইছিলেন এটাই দেখতে যে তার স্বামী এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লর্ড রেক্টরের পদ অলংকৃত করছেন। এই কারণেই জেন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় পরিজনকে ছেড়ে চলে যান সুদূর স্কটল্যাণ্ডের এক নিরিবিলি গ্রামে স্বামীর সঙ্গে। জেন ছিলেন সত্যিকার একজন মিতব্যয়ী গৃহিণী। নিজের পোশাক পরিচ্ছদ তিনি নিজেই বানিয়ে নিতেন। তিনি স্বামীর সেবা শুশ্রূষা করতেন এবং স্বামীর অসন্তোষকে হেসেই উড়িয়ে দিতেন। তাঁর সবচেয়ে যে প্রশংসনীয় গুণটি ছিল তা হল-তিনি কখনোই স্বামীর ব্যক্তিগত মতামত বদল করার চেষ্টা করতেন না। তিনি স্বামীকে তাঁর পছন্দ করা পথেই চলতে দিতে চাইতেন আর পৃথিবীর সকলেই এই মতটাই গ্রহণ করুক এটাই তিনি চেয়েছেন।
এটা সত্যি যে, একজন মানুষকে তার নিজের শক্তির পরিমাণ বুঝতে দেওয়া আর তার শক্তির বাইরে ঠেলে দেওয়া-এই দুটোর মধ্যে যথেষ্ট তফাৎ আছে। প্রত্যেক স্ত্রীর উচিত পুরুষদের শক্তির সীমা বোঝার চেষ্টা করা। এটা সত্যি যে আমরা কখনোই সব সময় অতখানি সচেতন থাকি না। এখনও দেখা যায় যে, অনেকে কারও অধীনস্থ থাকার ফলে চমৎকার কাজ করার দক্ষতা লাভ করে। অথচ তাদের যদি কোনো সময় জোর করে উঁচু পদে দায়িত্বশীল কাজের ভার চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তাদের যোগ্যতা কমতে শুরু করে। এদের পরিণতি হয় খুবই করুণ। তারা হয় আলসার, না হয় অন্যভাবে মৃত্যু বরণ করে। কারণ তাদের দেহের গঠনে ওই অতিরিক্ত পরিশ্রম সহ্য হয় না। কৃতকার্যতা নির্ভরশীল যে পরিমাণ কাজ আমাদের মানসিক, শারীরিক আর আভ্যন্তরীণ ধাতু প্রভৃতি সহ্য করতে সক্ষম।
ওরিমান মারডেন বলেন, প্রথম শ্রেণীর ভারবাহকের চেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর বাহক হওয়া অনেক ভালো।
এটা আমাদের মনে রাখা দরকার যে, প্রকৃতি কখনও কোনো মানুষকে উচ্চপদস্থ মানুষ হওয়ার যোগ্যতা দিয়ে তৈরি করে না। কিন্তু আমরা উঁচু উপাধিকারীদের এই ধরনের অতিরঞ্জিত সম্মানই কিন্তু দিতে অভ্যস্ত।
কোনো মানুষকে সে যে কাজ পছন্দ করে না সে ব্যাপারে যতই উদ্যোগী করে তোলার চেষ্টা করা হোক না কেন, সে ওই কাজ কিছুতেই মন দিয়ে করতে পারে না। উন্নতি জড়িত থাকলেও আবার দেখা যায়, মানুষ তাতেও সফল হয় না আবার কখনও কখনও বেশি এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও দুর্ভাগ্যের সূচনা করে বসে।
এ ব্যাপারে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হনলুলুর পুলিশ বিভাগের ক্লিফোর্ড ওয়েজম্যানের কথাই বলতে চাই। সে ছিল পুলিশের মোটর টহলদারী দলের একজন। সে হাইডেন স্ট্রীটে বাস করে। তার ছোট মেয়ে জন্মানোর সময় তাকে অন্য এক দপ্তরে বদলি করা হয়, এই বদলির ফলে তার মাইনেও বাড়ে। কিন্তু এর ফলে তার পরিশ্রম আর দায়িত্বও অনেক বৃদ্ধি হয়। এর ফলে স্ত্রী আর শিশুকন্যার দেখাশোনা করার মতো সময়ও তার থাকে নি। কিন্তু বাধ্য হয়েই তাকে নতুন কাজের দায়িত্ব পালন করে চলতে হল। এর পরিণামে ওয়েজম্যানের ওজন কমতে শুরু করল। ওয়েজম্যান অবসাদে প্রায় ভেঙ্গে পড়তে লাগলো। শেষ পর্যন্ত তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হল।