স্বামী চেয়েছিলেন কিছু সহানুভূতি আর ভালবাসা যা প্রথমা স্ত্রী একেবারেই স্বামীকে দিতে পারে নি। এই তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ভাবই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অলঙ্ প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। বিরক্তি উৎপাদনের সব থেকে মারাত্মক ব্যাপারটি হল যে, কোনো মানুষকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করে হীন বা ছোট প্রতিপন্ন করার চেষ্টা।
স্ত্রীর জ্বালা ধরানো বাক্যবাণ খারাপ প্রতিক্রিয়া জন্ম দিয়ে থাকে। অত্যন্ত ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, নিজেদের রসনা বা সমালোচনার কাজকে সংযত করতে পারা একটা বিশেষ গুণ। আর এটা করলে মনে রাখবেন যে, কোনো স্বামী-স্ত্রী তাদের পারিবারিক জীবনে শান্তি পেতে পারেন ও নিষ্কলঙ্কভাবে জীবন কাটাতে পারেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, কাজের জায়গায় স্বামীর উন্নতি হোক আর নাই হোক তাকে কখনও প্রত্যেকটি মুহূর্তে বাক্যবাণে জর্জরিত করা উচিত নয়।
ভার্জিনিয়া প্রদেশের একজন অধ্যাপক ড. স্যামুয়েল ডব্লিউ. স্টিফেনসন সম্প্রতি তাঁর এক বক্তৃতায় আমেরিকান স্বামীদের কাছে চারটি দাবি রাখেন। সেগুলো হল :
(১) ঘ্যানর ঘ্যানর থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকা।
(২) পিছু হটে যাওয়া থেকে নিরস্ত হওয়ার চেষ্টা করা।
(৩) সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের শেষে দিনের শেষে পুরনো পোশাকে শয্যায় গা এলিয়ে দেওয়া থেকে মুক্তি।
(৪) বদহজম থেকে মুক্তি।
সব ক্ষেত্রে যে স্ত্রী দোষী তা নয়, স্বামীরা সে সম্পূর্ণ নির্দোষ তা বলা যায় না। দেখা প্রয়োজন এই ঘ্যানর ঘ্যানর কোনো রকম শারীরিক ত্রুটি থেকে আসছে কিনা। সেই কারণে স্ত্রীর সম্বন্ধেও কিছুটা সহানুভূতিশীল হওয়া প্রত্যেক স্বামীর উচিত।
এটা করলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বহু ক্ষেত্রেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে আর পরস্পরকে বুঝতে শুরু করেছে। তাই এর প্রতিকারের উপায় হল জীবনযাত্রাকে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলা।
এবার যে সমস্যাটির কথা উল্লেখ করবো তা হল অবসন্নতা। আমার পরামর্শ হল অবসন্নতার কারণ বের করে তা দূর করা।
মনোবিজ্ঞানীদের মত হল, শত্রুতার ভাব মন থেকে দূর করে ফেলতে হবে। ঈর্ষার ভাব মনের মধ্যে জেগে থাকার ফলে অনেক সময় স্ত্রীদের ঘ্যানর ঘ্যানর করার মনোবৃত্তি জাগতে পারে। এর মধ্যে নানা ধরনের কারণ থাকা সম্ভব, যেমন, আইনগত সমস্যা, ভালবাসার অভাব, জীবনের প্রতি বিভিন্ন কারণজনিত বিতৃষ্ণা। এসব কিছুর পরিণতি মনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ যার প্রকাশ বাইরে ঘটে থাকে।
এটা দূর করতে গেলে অবশ্যই নিজের আভ্যন্তরীণ সংগ্রামের স্বরূপটি খুঁজে বের করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। –একটি ঘটনার কথা বলছি। কোনো এক সময় আমেরিকার জর্জিয়া প্রদেশের সুপ্রিম কোর্টে এক মামলায় রায় দেওয়া হয় যে, কোনো স্বামী যদি কলহপ্রিয়া স্ত্রীর হাত থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে কোনো অতিথি গৃহে নিজেকে আলাদা ভাবে রাখতে চায় তাহলে কোনো ভাবেই স্বামীকে দোষ দেওয়া যায় না। সুপ্রীম কোর্ট আরও জানায় যে পবিত্র বাইবেলে সলোমনের কথা এই রকম:
বিস্তৃত ঘরে কলহপ্রিয়া স্ত্রীর সঙ্গে বাস করা অপেক্ষা ছাদের ছোউ ঘরে এক কোণে বাস করাই শ্রেয়।
এটা প্রামণিত সত্য যে, বহু লোকই তাদের স্ত্রীর হাত থেকে কোনো অর্থ ব্যয় না করে মুক্তি পেতে আগ্রহী। অবশ্য এও দেখা গেছে, বহু স্বামী আবার যে কোনো উপায়েই স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি চায় আর সেজন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেও গররাজি নয়।
এখন জানা দরকার যে, আপনার রোগটা কী এবং সেটা পরিষ্কার করতেই হবে না হলে সে রোগ আরোগ্যের আশা দুরাশা মাত্র।
কোনো স্ত্রী যদি জানতে চান এ রোগ তার আছে কিনা, তবে তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া দরকার তিনি অসন্তুষ্ট হন কিনা। তাহলে শীঘ্রই সেটা করা প্রয়োজন।
এই কাজ ছটি পরিকল্পনা কাজে আসতে পারে :
(১) স্বামী ও পরিবারের সহযোগিতা মেনে নিতে উদ্যোগ নিন। সব চেয়ে সেরা উপায় হল আপনি যখন রেগে গিয়ে বেশি মাত্রায় ঘ্যানর ঘ্যানর করবেন তখনই যেন আপনাকে বেশ ভালো রকম জরিমানা করা হয়।
(২) যে কোনো কথা মাত্র একবারই বলা অভ্যাস করুন। বার বার খিট খিট করলে জানবেন সে কাজ হওয়ার অনেক অসুবিধা আছে।
(৩) মিষ্টি কথা বলে যে কোনো কাজ করানোর চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখবেন ভিনিগারের স্বাদ টক-এর সাহায্যে যত মাছি ধরা সম্ভব চিনির সাহায্যে তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মাছি ধরা সহজ। খিট খিট করে কিছু বলার চেয়ে মিষ্টি কথায় বললে কোনো কাজ শতকরা অনেক বেশি হারে সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা থাকে।
(৪) স্বভাবকে সবসময় সরল রাখার চেষ্টা করতে হবে। দেখা যাবে এ কাজটি আপনার মনে অনেক বেশি উন্নতির ভাব জাগাতে পারে।
বেশি রকম ভাবাবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। এর ফলে প্রচণ্ড ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। লেডি ম্যাকবেথের ভূমিকাতে বহু স্ত্রীকে অভিনয় করতে দেখা যায়, যা কখনোই উচিত নয়। অনেক স্ত্রীকে দেখা যায় যে মানসিক ধৈর্য হারিয়ে এমন অনেক কাজ করে বসেন যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর স্বর্গীয় ভালবাসা ঘৃণাতে পরিণত হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে যে, পশ্চাদপসরণ জয়ের কাজও করতে পারে।
(৫) যে কোনো ধরনের গুরুতর দুঃখ কষ্টের কথা শান্তভাবে গ্রহণ করতে দেখা দিলে সেটা অগ্রাহ্য না করে স্বামী-স্ত্রী আলোচনার মধ্যে দিয়ে তার সমাধান করা উচিত। এখানে বিশ্বাসই হল মূলকথা।