একে একে গ্রাহাম দম্পতি নিজেরাই বাড়ি কিনে বিক্রি শুরু করেন। তার সাথে সাথে তেলের ব্যবসাতেও লেগে থাকেন। ধাপে ধাপে উন্নতি হতে লাগলো।
এখানেই থেমে থাকার মানুষ নন গ্রাহ্যম দম্পতি। তাঁদের ব্রত হল আরও এগিয়ে চলা। তাই গ্রাহাম দম্পতি ভাবতে লাগলেন বৈদেশিক ব্যবসার দিকে হাত বাড়াবেন কি না।
এই দম্পতির সাফল্যের মূল কথা হল-কোনো কাজ বা পরিকল্পনা হাতে নিলে তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাতে সাফল্যে কোনো বাধা না ঘটে। তারা তাদের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা আর পরিশ্রমকে উজাড় করে দিতেন এই কাজে। গ্রাহাম দম্পতির জীবন থেকেই বোঝা যায়, ইচ্ছা আর পরিশ্রম যে কোনো মানুষকে তার উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও আছে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সফলতার কাছাকাছি পৌঁছান সম্ভব, তাতে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না।
কলম্বিয়া কলেজের ডীন হার্বাট ই হক বলেন যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যর্থতা দুশ্চিন্তার এক প্রধান কারণ। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে সাফল্যের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। এই কারণেই বলতে বাধা নেই যে, প্রত্যেক স্ত্রীর জানা প্রয়োজন তাদের স্বামীর সাফল্য লাভ করার পথে তাদেরই প্রেরণা যোগান দিতে হবে, যাতে তাঁর স্বামী জীবনে স্থির লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারেন।
সাফল্যের অর্থ এক-একজনের কাছে এক-একরকম। তাই সফলতার অর্থ কি শুধু বিপুল সম্মান, না অর্থ, না নির্বিঘ্ন জীবন তা আপনার এবং আপনার স্বামী উভয়কেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। স্বামী-স্ত্রী এই দু’জনের মিলিত আকাক্ষাই আপনার স্বামীর পথনির্দেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর উচিত স্বামীকে প্রেরণা যোগানো, আর স্বামীর কর্তব্য কোনো সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
জেনে রাখা উচিত, স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা শুধুমাত্র প্রেমের প্রসন্ন দৃষ্টির মধ্যেই থাকে না–আদর্শ দম্পতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেম আর ভালবাসা হল পরস্পরের হৃদয়কে, মনকে জানতে চাওয়া, বুঝতে চাওয়া।
এই কথাটা বলেছিলেন–একজন মানব-প্রেমিক মানুষ। অতএব মনে রাখা প্রয়োজন, কৃতকার্য হওয়ার প্রথম পদক্ষেপটি হবে স্বামীকে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করা।
০২. এক কাজে সফল হলে আরেক কাজে নজর দিন
একজনের কাহিনী দিয়েই শুরু করা যাক। তার নাম নিক আলেকজান্ডার। আলেকজান্ডারের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কলেজের শিক্ষায় সাফল্য লাভ করা। ছেলেটার কপাল মন্দ যে ছোটবেলায় সে এক ছোট অনাথ আশ্রমেই বেড়ে উঠেছিল। সেই অনাথ আশ্রমে ছিল সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম। দু’বেলা ভালো খাওয়াও জুটতো না। আলেকজান্ডারের লেখাপড়ায় খুব আগ্রহ ছিল। তাঁর ধীশক্তিও ছিল প্রখর। কিন্তু ভাগ্যদোষে দরিদ্র ঘরে জন্মগ্রহণ করায় বেশি দূর পড়াশুনা করতে পারে নি। মাত্র চৌদ্দ বছর, বয়সে হাই স্কুলের শিক্ষা শেষ হতেই তাঁকে জীবিকার জন্য চাকরি করা শুরু করতে হয়। বাধ্য হয়েই তাঁকে এক দর্জির দোকানে সেলাই করার চাকরি নিতে হয়। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর তাঁকে সামান্য পারিশ্রমিকের বদলে ঐ সেলাইয়ের চাকরি করে যেতে হয়। এরপর একসময়ে তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় কাজের সময় কিছুটা কমে আসে এবং মাইনেও কিছুটা বাড়ে।
নিক আলেকজান্ডার এক কিশোরীকে বিয়ে করে সংসারী হয়। তাঁর মনে একটা দুঃখবোধ থেকে গিয়েছিল যে, সে কলেজে পড়াশুনা করার সুযোগ পেল না। নিকের স্ত্রী স্বামীর মনের খবর জানতে পেরে ঠিক করলো যে, যেমন করেই হোক স্বামীর জন্য সে কলেজ শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।
১৯৩২ সালে হঠাৎ করে একটা সুযোগ এসে গেল তরুণ দম্পতির জীবনে। একটা নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তোলার সুযোগ। নিজেদের সঞ্চিত সামান্য টাকা মূলধন করে তারা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দু’জনে গড়ে তোলে আলেকজান্ডার রিয়েল এস্টেট কোম্পানী, ১০০ নম্বর ওয়েস্ট প্রভিন্স স্ট্রীটে।
বছর দুয়েকের মধ্যেই তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল। তারা লাভের মুখ দেখতে শুরু করলো। আলেকজান্ডারের স্ত্রী তাঁর ইচ্ছার কথা ভুলে যায় নি। তাই স্ত্রীর ইচ্ছায় আলেকজান্ডার আবার কলেজি শিক্ষা শুরু করেন। একদিকে পড়াশুনা, অন্যদিকে ব্যবসা। থেরেশার তো সুখের কোনো পরিসীমা ছিল না।
নতুন পরিকল্পনা নিতেও ওরা দেরি করল না। সমুদ্রের কাছে ওরা নতুন বাড়ি গড়ে তুলল। ওদের স্বপ্ন কিন্তু থেমে থাকে নি, ইতোমধ্যে ওদের একটা ছোট্ট মেয়ে হয়েছিল। দু’জনে মনস্থ করল মেয়ের শিক্ষার সমস্ত ব্যবস্থা করবে। কিছু অর্থের সমস্যা দেখা দিলেও নিজেদের বাড়ির মধ্যে ভাড়াটে বসিয়ে সে সমস্যা তারা মিটিয়ে ফেললো।
আলেকজান্ডার দম্পতি সত্যিই পরিশ্রমী আদর্শ সুখী পরিবার। উভয়েই ওরা সুখী। ওদের সাফল্যের মূল কথা হল একটাই-নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলা। কোনো কিছুতেই ভেঙে না পড়া।
পৃথিবীতে এমন অনেক লোক আছে যাদের জীবনে কোনো রকম নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। তারা গতানুগতিক জীবনযাপন করে। এসব মানুষের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু যারা সবসময় সুযোগকে আঁকড়ে ধরতে পারে তাদের পক্ষেই সম্ভব জীবনকে সঞ্জীবিত করা।
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া মানুষের জীবনে সাফল্য আসা সম্ভব নয়। তাই যে কোনো মানুষ পরিকল্পনা নিতে পারে। যেমন প্রথম পাঁচ বছরে লাভ করতে হবে কলেজের শিক্ষা আর চাকরিতে উন্নতির চেষ্টা। পরের দশ বছরে কাজ হবে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হওয়ার চেষ্টা। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের সামনে থাকা চাই ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য, আর তা সফল করার নিদিষ্ট পরিকল্পনা।