প্রত্যেক স্ত্রীই জানেন বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো কোনো স্বামী-স্ত্রী কীভাবে কাজটি করতেন চান। এই কাজটি যে স্ত্রী সাফল্যের সঙ্গে করতে পারেন তিনি সত্যিই কৃতজ্ঞতার পাত্রী তাতে সন্দেহ নেই। এই ধরনের স্ত্রী নিঃসন্দেহে যা চায় তাই পেয়ে থাকে। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী ডিজরেলি তার স্ত্রীকে কঠোর সমালোচক বলতেন। ডিজরেলি স্ত্রীর কথাকে প্রচুর মূল্য দিতেন বলেই এ কথা বলতেন। তিনি এই প্রশংসা করেছেন সমালোচনার জন্যই। তিনি বলেছিলেন যে, তাঁর স্ত্রী সমালোচনার মধ্যে দিয়েই তাঁকে পদঙ্খলন থেকে রক্ষা করেছেন সেই কারণে তিনি ধন্য।
আমার একজন অতি পরিচিত অত্যন্ত সফল মানুষ আমাকে একবার বলেছিলেন যে, তাঁর স্ত্রী তার সফল জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের এক বিরাট অংশ। ভদ্রলোকের নাম লাইনম্যান বীচার স্টো। তার পিতামহী হ্যারিয়েট বীচার স্টো একদিন বিখ্যাত ‘আঙ্কল টমস কেবিন’ নামের বইটি রচনা করেছিলেন। তিনি একজন বিখ্যাত লেখক আর অধ্যাপক।
মিষ্টার স্টো বলেন, যখন আমি প্রথম মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিয়েছিলাম, তখন সৌভাগ্যক্রমে আমার শ্রোতাদের খুবই সন্তুষ্ট করতে পেরেছিলাম। কলেজে ওই বক্তৃতার কথা ছাপাও হয়। আমার স্ত্রী হিলডা প্রধানত আত্মবিশ্বাসের উপরেই জোর দিয়েছে। সে আমাকে বলল, লাইনম্যান, তুমি যে ভালো করেছ তাতে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত, কিন্তু কখনোই প্রশংসায় তুমি পথভ্রষ্ট হবে না। মনে রেখো, কঠোর পরিশ্রম করে তারই সঙ্গে যদি তোমার কাজের ধারাকে ঠিক না রাখ, তাহলে দেখবে তোমার এই শ্রোতারাই তোমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।
একবার এক জায়গায় বক্তৃতা দিয়ে উৎফুল্ল হয়ে বাড়ি ফিরে হিলডার কাছে বক্তৃতার খুঁটিনাটি শোনালাম। আর অপেক্ষা করতে থাকলাম তার প্রশংসা শোনার জন্য।
হিলডা মন দিয়ে সব শুনে সে মৃদু হেসে বললো, ‘খুবই চমৎকার আর আনন্দের খবর, কিন্তু বক্তৃতার বিষয় থেকে দেখতে পেলাম তুমি ওই বাড়িতে যারা থাকবে তাদের সম্বন্ধে কিছুই বল নি। আমার ধারণা তারাও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।’ কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর প্রশংসা পাওয়ার সব আশাই মিলিয়ে গেল। কিন্তু হিলডাকে আমি আরও বেশি ভালবাসতে শুরু করলাম কারণ ওর সুরুচি সম্বন্ধে জ্ঞান দেখে। আমি এর পরই আমার কাজে আরও সতর্ক হলাম আর সেই ভাবেই কাজ করতে লাগলাম। এভাবেই আমার ভবিষ্যতকে মজবুত করলাম।
মিসেস হাইস, মিসেস জনস্টন, মিসেস কান্টেনবর্ন ও মিসেস স্টো এই সমস্ত মহিলারাই জানেন, কেমন করে স্বামীর সঙ্গে জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে হয়। আর কেমন করে তাদের ভালবাসা লাভ করা যায়।
এই কাজ তারা করেছেন বন্ধু-বান্ধবদের ভালবাসা জয় করে, আদরণীয় হয়ে স্বামীদের বাস্তবভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করে। এর সঙ্গে তারা স্বামীদের সঙ্গে সমান তালেই চলতে পেরেছেন।
যে স্ত্রী এভাবে কাজ করতে পারেন তার ভবিষ্যৎ স্বামীর সঙ্গে মজবুত না হয়ে পারে না।
সংক্ষেপে তের-চৌদ্দ-পনের-ষোল-সতের পাঠের নিয়মগুলি:
১। যখনই প্রয়োজন দেখা দেবে তখনই অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি রাখতে হবে।
২। স্বামীকে বাড়তি কাজ করতে হলে সে ব্যাপারটি মানিয়ে নিতে হবে।
৩। স্বামীর কাজে হাসিমুখে যোগ দেওয়া দরকার।
৪। স্বামীকে যদি ঘরে বসে কাজ করতে হয় তবে পরিবেশকে সহজ করে নেওয়া দরকার।
৫। নিজের কাজ যদি কোনো ভাবে স্বামীর স্বার্থের পরিপন্থী হয় তাহলে তা পরিত্যাগ করা উচিত।
৬। স্বামীর কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলা প্রয়োজন।
১৮. পুরুষেরা কেন গৃহত্যাগ করে
স্বামী-স্ত্রীর বিবাহিত জীবন যে সবসময় আনন্দে পরিপূর্ণ থাকে তা নয়, অনেক সময় বিচিত্র সমস্যাও দেখা দেয়।
ডরোথি ডিক্স নামে বিখ্যাত একজন সমাজ সেবিকা বলেন, ‘কোনো লোকের বিয়ের আনন্দ সব থেকে বেশি নির্ভর করে সাধারণভাবে তার স্ত্রীর মেজাজ আর চরিত্রের প্রকৃতির উপর। কোনো সুন্দরী স্ত্রী নানারকম সদগুণের অধিকারিণী হলেও যদি তার মেজাজটি ভালো না হয়, সে যদি কলহপ্রিয় হয় বা ঈর্ষাপরায়ণ হয় তাহলে জীবনের অর্থাৎ বিবাহিত জীবনের সব আনন্দই মাটি হয়ে যায়।’
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. লুই এম. টারম্যান পেন প্রায় একশ’রও বেশি বিয়ের গবেষণা করেছেন। গবেষণার ফল থেকে তিনি দেখেছেন, বেশির ভাগ বিয়ে সফলতা লাভ করে না স্বামী স্ত্রীর দোষ ত্রুটি ধরতে শুরু করায়।
গ্যালাপ পলও ঠিক এই ধরনের কথাই বলেছেন। তিনিও গবেষণায় একই রকম ফল পেয়েছিলেন। তিনি দেখেছেন, পুরুষরা স্ত্রীদের দোষের মধ্যে প্রধান বলে ভাবে বিরক্তি উৎপাদক কাজকে।
তিনি দি জনসন টেম্পারমেন্ট অ্যানালিসিজসানের বৈজ্ঞানিক মনোবিশ্লেষণে দেখেন যে স্ত্রীদের একমাত্র বিরক্তি উৎপাদন আর স্বামীদের দোষত্রুটি ধরার প্রবৃত্তির মতো অন্য কোনো মনোভাবই জীবনযাত্রার এত ক্ষতিসাধন করে না। বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস তার কলহপ্রিয় স্ত্রীর সাহচর্য থেকে আত্মরক্ষার জন্যই দূরে সরে গিয়ে এথেন্স শহরের কোনো গাছের তলায় বসেই তার দার্শনিক তত্ত্ব প্রচার করতেন। তৃতীয় নেপোলিয়ন স্ত্রীর অত্যাচার থেকে আত্মরক্ষার জন্য অপর এক মহিলার কাছে গোপনে অভিসার করে শান্তি পেতে চাইতেন। রোমের বিখ্যাত আগাস্টাস সীজার বাধ্য হয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বনিয়ার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছিলেন। তিনি নিজেই লিখে যান যে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হন। আধুনিক যুগেও এই অবস্থা ঘটে চলেছে। আমাদের পরিচিত একজন ভদ্রলোক বলেছেন যে তার পারিবারিক জীবন তার স্ত্রীর জন্য প্রায় নষ্ট হতে চলেছিল। তার স্ত্রীর সবসময়েই তার কাজকর্ম আর সব ব্যাপারে তাকে তাচ্ছিল্য দেখাতেন। ভদ্রলোক স্ত্রীর খারাপ ব্যবহার সত্ত্বেও মুখ বন্ধ করে কাজ করে যান। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদ। ভদ্রলোক দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। এই মেয়েটি প্রথমা স্ত্রী যা করতে ব্যর্থ হন তাই করে-স্বামীর সমস্ত কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে। ফলে তাদের পারিবারিক জীবনে শান্তি নেমে আছে।