এক মহিলার কথা এখানে উল্লেখ করবো। বিপদের মধে পড়ে ভদ্রমহিলা চমৎকার মানসিক শক্তির পরিচয় দিয়ে কাজ করে যান আর পরিবারকে বাঁচানোর জন এক নতুন উপায় উদ্ভাবন করেন। মহিলার নাম মিসেস জিনা স্টার্ন। তিনি নিউইয়র্কের ৪২২ স্ট্যানলি অ্যাভিনিউয়ের, ওয়েস্টফিল্ডে স্বামী ও পাঁচটি সন্তান নিয়ে বাস করেন।
মিঃ স্টার্ন পেশায় একজন সেলসম্যান। কঠিন রোদে আক্রান্ত হয়ে তিনি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। স্ত্রী এবং সন্তানদের ভরণপোষণ তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় মিসেস স্টার্ন খুবই চিন্তায় পড়ে যান। তিনি ভাবতে লাগলেন কী করা যায়। তার একটি বিশেষ গুণ ছিল। তিনি খুব ভালো রান্না করতে পারতেন। ব্যাপারটা তিনি কথায় কথায় কয়েকজন পরিচিত মানুষদের বলে ফেলেন। তারা তাদের দেওয়া পার্টির খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব এরপর মিসেস স্টার্নকেই দিতে শুরু করেন। মিসেস স্টার্নের রান্না করা চমৎকার সুস্বাদু খাবার সকলের দারুণ পছন্দ হল। অল্প দিনের মধ্যেই তার পরিচিতি আর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। এরপর অযাচিতভাবেই মিসেস স্টার্ন খাবারের বায়না পেতে লাগলেন। এক সময়ে মিসেস স্টার্ন একজন বিখ্যাত খাদ্য সরবরাহকারিণী হয়ে উঠলেন। বর্তমানে মিসেস স্টার্ন তাঁর প্রসিদ্ধ শীতল বিস্কুটের প্যাকেটেও পার্টি উপলক্ষ্যে খাবার সরবরাহ করে থাকেন প্রায় পঞ্চাশ মাইল এলাকা জুড়ে। মিসেস স্টানের ব্যবসা এতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামী মি. স্টার্নকেও কাজে নামতে হল। তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠলেন স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার।
মানুষের জীবনে দুঃসময় যে কোনো মুহূর্তে আসতে পারে। আচমকা এমন দুর্যোগ এলে ভেঙে না পড়ে মন শক্ত রাখতে হবে। এই ধরনের কোনো অবস্থার জন্য সবাইকেই কিছু ভাবনা-চিন্তা করতে হবে অর্থ উপার্জনের একটা বিকল্প পথ অনুসন্ধান করতে হবে। যাতে বিপদের সময় সেই বাধা অতিক্রম করা যায়।
এই পরিচ্ছেদ শেষে এই কথাই আমরা বলবো যে, স্বামীকে অতিরিক্ত সাহায্য দানের চারটি নিয়ম আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন :
১। স্বামীর কাজ সম্বন্ধে স্ত্রী হিসেবে অবহিত থেকে তাকে সাহাযের জন্য এগিয়ে দিতে হবে।
২। স্বামীর সেক্রেটারীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
৩। শিক্ষার সুযোগ নিয়ে স্বামীকে তাতে লেগে থাকতে অনুপ্রেরণা আর উৎসাহ দিতে হবে। নৈশ স্কুল বা এমন কী বাড়িতে বসেও তিনি যাতে বাড়তি শিক্ষালাভ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। আকস্মিক কোনো দুর্যোগ বা অসুবিধার জন্য মনকে তৈরি করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে কাজে আত্মনিয়োগ করার উদ্দেশ্যেও নিজেকে তৈরি করতে হবে। এজন্য নিজের কর্মকুশলতা যাতে বাড়ে সে দিকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
১২. নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলুন
এক ধরনের মহিলাদের দেখা যায়, যারা স্বামীদের নিজের কাজের জায়গাতেই আবদ্ধ রাখতে চান-তারা কোনো অবস্থাতেই স্বামীদের অন্য জায়গায় যেতে দিতে রাজি হন না। অনেক সময় এই ধরনের মহিলারাই হয়ে ওঠেন পুরুষের উন্নতি লাভের প্রধান অন্তরায়।
এটা ঠিক কথা যে, নিজের পরিচিত গণ্ডি নিজের বাসস্থানটি ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে বেশ একটু সাহসের প্রয়োজন হয়। মেয়েরা এ ব্যাপারে প্রকৃতিগত দিক থেকে দক্ষ হতে পারে। অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে সুখের সংসার গড়ে তুলতে পারে একমাত্র মেয়েরা। এর জন্য প্রয়োজন সহনশীলতা। একজন সহনশীলা স্ত্রীই চলার পথে সব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারেন। এই রকমই একজন মহিলা ছিলেন মিসেস লিওনার্ড কাসনার। মিসেস কাসনার উওম্যান’স ডে ম্যাগাজিন নামের এক পত্রিকায় নিজের কাহিনী লিখেছিলেন। তিনি যা লেখেন তা হল এই রকম :
দু’বছর আগে আমার স্বামীর ডাক পড়েছিল এক নৌযুদ্ধে যোগদান করার জন্য। আমাকেও যেতে হল সঙ্গে। কিন্তু আমাদের নতুন সুন্দর বাড়ি ছেড়ে মাত্র দু’বছরের ছোট ছেলেকে নিয়ে যেতে হবে জেনে, বিশেষ করে বিদেশে, আমার মন খুবই খারাপ হয়ে যায়। উপায়হীন হয়ে আমাকে যেতে হল, স্বামীর সঙ্গে প্রথম সেনা ছাউনীতে হাজির হলাম।
আমি কেবলই ভাবছিলাম যে, আমদের চরম দুঃখের দিনই বোধ হয় এসে গেছে। কিন্তু আবহাওয়া আর নতুন নতুন জায়গায় ঘোরার পর ভেবে দেখতে লাগলাম ব্যাপারটা সত্যিই তো তেমন খারাপ হল না। আমার স্বামী তাড়াতাড়ি কাজ থেকে অবসর নিতে চলেছেন। আমরা আবার ফিরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করবার চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছি। ভবিষ্যৎ জীবনের হাতছানিতে রোমাঞ্চিত হয়েও কিন্তু বর্তমান জীবন থেকে সরে যাওয়াটাও খারাপ লাগতে শুরু করেছে।
এই নতুন জীবনের দু’টো বছর যেভাবে কাটালাম তাতে আমি কৃতজ্ঞ না হয়ে পারছি না। দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো সমস্ত অসুবিধা এখন আমি কাটিয়ে উঠতে শিখেছি।
আজ আমি বুঝতে শিখেছি যে, সুখের ঘর সংসার বলতে কেবল কিছু সুযোগ সুবিধা আর বস্তুকেই বোঝায় না-বরং যে সব মানুষের সংশ্রবে আমরা বাস করি তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা আর সহমর্মিতাকেই বোঝায়। পারস্পরিক প্রীতি ও ভালবাসা, মূল্যবোধ আর পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিয়ে জীবন উপভোগই আসল জীবনের মাধুর্য।
.
কোনো কারণে যদি পরিচিত পরিবেশ থেকে দূরে কোথাও যেতে হয় এবং সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, তাহলে নিচের চারটি পরিকল্পনার কথা মনে রাখা প্রয়োজন।