কেউই চায় না নিচে পড়ে থাকতে, এর জন্য চাই বড় হয়ে উঠার বাসনা। তাকে নিজেকে শিক্ষিত করে ভোলা চাই।
অবশ্য সারাদিন কাজ করার পর প্রতিটি রাতে বিদ্যা শিক্ষা করে যাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। এ কাজে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ চায় স্ত্রীর কাছ থেকে। দেখতে হবে যেন চলার পথে স্বামীর পদস্খলন না হয়। স্বামী কখনও নিরুৎসাহ হয়ে না পড়েন। ক্লান্ত না হন বা সাফল্য সম্বন্ধে হতাশা না আসে। স্ত্রীর কাজ অনবরত স্বামীকে উৎসাহ দেওয়া। ঐ সময় স্ত্রীও নিজেকে শিক্ষার কাজে নিযুক্ত রাখতে পারেন। অমূল্য সময় কখনোই হাতছাড়া করা উচিত নয়। জ্ঞানের স্পৃহাই মানুষকে তৎপর করে তুলতে সাহায্য করে। স্বামীর কাজে সহায়তা করে স্ত্রীরা প্রচুর আনন্দ আর প্রফুল্লতা লাভ করতে পারেন। মানব জগতের জ্ঞানভাণ্ডারকে বাড়িয়ে তোলার জন্য পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অসীম। কলেজ শিক্ষাই সব নয়। স্ত্রী হিসাবে স্বামীর নতুন কোনো শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা পূরণে উৎসাহ দিতে থাকুন আর তারই সঙ্গে নিজেও শিক্ষিত হয়ে উঠুন। স্ত্রীর কর্তব্য হল, যে স্থায়ী জীবনে নিজের উন্নতির জন্য উৎসুক সেই স্বামীর কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা আর সেই ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। স্বামীর সব সাফল্যই ভবিষ্যৎ জীবনে এক অপরিসীম সুখ আর আনন্দ বয়ে আনতে পারে।
আমরা যদি আমেরিকান স্কুল ও কলেজের অ্যাসোসিয়েশন দেওয়া হোরেশি ও এলজার এডওয়াড পুরস্কারে ভূষিত মানুষদের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে, এইসব পুরস্কার প্রাপক হলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট লুভার। লুভার ছিলেন আইওয়ার একজন কর্মকারের অনাথ সন্তান। এছাড়া হেনরি ক্রোস্টন-যিনি এক সময়ে একজন সুইচবোর্ডে অপারেটর ছিলেন আর বর্তমানে তিনি বিরাট এক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। টমাস জে. ওয়াটসন নামে আর একজন সপ্তাহে মাত্র দু’ডলার পারিশ্রমিকে জীবন শুরু করে বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনের প্রেসিডেন্ট। পল ইবম্যান প্রথম জীবনে শ্রমিক হিসেবে জীবন শুরু করেন। বর্তমানে হয়েছেন বোর্ড অফ স্টুডিবেকার কর্পোরেশনের প্রধান। তাই স্ত্রীদের মনে রাখা উচিত, আপনার স্বামীর শিক্ষার সুযোগ নিয়ে আপনারই উৎসাহ কাজে লাগিয়ে জীবনে চমৎকার প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেন।
পৃথিবীতে এই রকম অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে একজন সত্যিকারের কর্মতৎপর মানুষ তার জ্ঞান ও কর্মকুশলতা বৃদ্ধি করার কাজে অনেক বেশি আগ্রহশীল হয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. লরেন্স বলেন : ‘একটি মাত্র জিনিসই মানুষের মনকে শিক্ষাদান করতে পারে-আর তা হল নিজের মনকে ইচ্ছা করে কাজে লাগানো। আপনি মনকে চালনা করে তাকে সহায়তা দিতে পারেন, পথ দেখাতে পারেন, প্রস্তাব দিতে পারেন। যা প্রতিদিনের চেষ্টায় পাওয়া যায় তাই প্রকৃত লাভ। মনের ইচ্ছাই তাই উন্নতির প্রকৃত সহায়ক।
১১. হঠাৎ দুর্যোগে মন শক্ত রাখুন
নিউইয়র্ক শহরের জোসেফ আইজেনবার্গ এক কাপড় ধোলাইয়ের কারখানায় কাজ করত। হঠাৎ তাকে বরখাস্ত করা হয়। আইজেনবার্গ দম্পতি চিন্তায় ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত জমা সামান্য পুঁজি দিয়ে তারা ছোট একটা রুটির কারখানা কিনে নিল। তারা আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করল। মিসেস আইজেনবার্গ বাড়ির কাজকর্ম সামলে রুটির কারখানায় কাজ করে চললো। আট-দশ ঘন্টা কাজ করে মিসেস আইজেনবার্গ নিরুৎসাহ হয়ে পড়লো না। আনন্দের সঙ্গেই কাজ করে গেল। পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের ব্যবসা উন্নতির মুখ দেখলো। দুর্যোগের মধ্যে কখনোই ভেঙে পড়া ঠিক নয়, তাতে জীবন ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
আর একটি কাহিনী বলবো। মহিলার নাম মিসেস উইলিয়াম আর কোলম্যান তিনি থাকতেন টেনেসিতে। মিসেস কোলম্যান শুধু যে স্বামীর কাজেই সাহায্য করেন তাই নয়, নিজের অবলম্বিত ব্যবসার মধ্যে দিয়ে তার সমস্ত উপার্জনই তিনি পরিবারের স্বচ্ছলতার কাজে লাগিয়েছিলেন। মিসেস কোলম্যান ছিলেন একজন নার্স।
১৯৩৬ সালে মিসেস কোলম্যান যখন মি. কোলম্যানকে বিয়ে করেন তখন উইলিয়াম কোলম্যান দিনের বেলা চাকরি আর রাতের বেলা নৈশ স্কুলে শিক্ষালাভ করতেন। মি. কোলম্যান শত বিপদেও একদিনও অনুপস্থিত থাকেন নি। ছ’বছর পর তিনি মা স্ত্রী ও মেয়ের আনন্দের পরিপ্রেক্ষিতে ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। একদিন ছিল যখন বিল কোলম্যান রঙ না করা লোহার রান্নার আসবাবপত্র বিক্রি করেছিলেন আর সে কাজে তাকে সাহায্য করতেন তারই স্ত্রী। এরপর একসময় বিলের বাবা মারা যান। বিলের ভাইয়ের একটা ছাপাখানা ছিল, বিল ও তাঁর স্ত্রী ভাইয়ের অংশ কিনে নেন। হেলেন কোলম্যান আমাকে লিখেছিলেন: আমি এটা বুঝতে পেরে আনন্দিত যে আমাদের স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যেই আমাদের বাড়ি আর ব্যবসার ঋণ শোধ করতে পারবো। তারপর আমার চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিল আর ছেলে-মেয়েদের জন্য সেবার কাজ করতে শুরু করব।
মিসেস কোলম্যান আর মিসেস আইজেনবার্গের জীবনের এই উদাহরণ আমাদের শিক্ষণীয়। একজন সতিকার বাস্তববাদী স্ত্রীর কাহিনী।
জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন স্ত্রীকে স্বামীর চাকরিহীন বা অসুস্থতার জীবনে সাময়িকভাবে কাজে লাগাতে হয়। স্বামীর কাজে সহায়তা করে তার অংশীদার হওয়া আনন্দের কাজ, এর ফলে জীবন সুখময় হয়ে ওঠে।