১। স্বামীর সেক্রেটারীর প্রতি স্ত্রী কি বিদ্বেষ পোষণ না করে পারেন? সুশ্রী সুন্দরী সেক্রেটারী প্রায় প্রত্যেকেই চেয়ে থাকেন, কেননা প্রতিষ্ঠানে একজন সুন্দরী ফিটফাট চেহারার সেক্রেটারী অফিসারকে শ্রীমণ্ডিত করে তোলে। বহু স্ত্রীই আছেন যারা সেক্রেটারী যদি মহিলা হন তবে তার প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে থাকেন। তারা ধারণা করেন যে, সেক্রেটারীরা শুধু তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে আর পুরুষদের কাছে প্রিয় পাত্রী হওয়ার জন্যই মোটা মাইনে আর সুযোগ লাভ করে থাকে।
কিন্তু সেক্রেটারীর চাকরি সহজলভ্য নয়। একজন ভালো জাতের অফিস সেক্রেটারীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় ঠিক যেমনটি গৃহিণী করে থাকেন অথচ পুরস্কার পাওয়া তেমন কুসুমাস্তীর্ণ নয়।
সেই কারণে সেক্রেটারীদের বেশ প্রফুল্লতা বজায় রেখে কাজ করতে হয়। স্ত্রীরাও যদি এই কথাটা চিন্তা করে দেখেন তাহলে ভালোই হয়। তাই স্ত্রীদের উচিত সেক্রেটারীদের প্রতি বিদ্বেষ ভাবটি মুছে ফেলা
২। কোনো সেক্রেটারীকে দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানো উচিত নয় : এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে লক্ষ্য করা যায় যে, অফিসের যিনি কর্তাব্যক্তি তিনি তার বহু ব্যক্তিগত কাজ সেক্রেটারীকে দিয়ে করাতে চান। এই ধরনের কাজ খুবই অন্যায়। আর সেক্রেটারীর পক্ষেও অফিসের কর্তাব্যক্তির মুখের ওপর কিছু বলা কঠিন হয়ে ওঠে। সেক্রেটারীরা যখন কাজে যোগ দেন তখন তারা ধরেই নেন যে, তাদের অফিস বসের বহু ব্যক্তিগত কাজই করে দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যে বসের পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যোগদান করে অতিথি আপ্যায়নের কাজটিও করে দিতে হয়, অথচ এই সব বাড়তি কাজের জন্য কখনোই পুরস্কার পাওয়া যায় না।
৩। অতিরিক্ত কাজের জন্য মুল্য দেওয়া উচিত : একটা প্রচলিত সত্য যে মানুষ তার যোগ্য কাজের মূল্য চায়, সে তার প্রাপ্য প্রশংসা চায়। কোনো কোনো সময় সেক্রেটারি এমন অনেক কাজ বসের জন্য করে যা অনেক ক্ষেত্রেই তার স্ত্রীরও উপকারে লাগে। যদিও অনুরোধ স্ত্রীর কাছ থেকে আসে না তবুও স্ত্রীরা যেভাবেই হোক উপকৃত হয়ে থাকেন। সেক্রেটারীরা সবসময় কাজের মূল্য পেতে আগ্রহী।
যে সব স্ত্রীদের স্বামী খুব বড় প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত থাকেন, তাদের কখনোই স্বামীর সেক্রেটারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের খুব একটা সাক্ষাৎ ঘটে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের এটা ঘটে না। পারস্পরিক যোগাযোগ তাদের পক্ষে অনেক সহজ। এক্ষেত্রে তাই উচিত সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলা।
নিচের কয়েকটি নিয়ম যদি আমরা মেনে চলি তাহলে আমরা উপকৃত হতে পারবো :
১। যে কোনো রকম সন্দেহের ভাব ত্যাগ করুন।
২। ঈর্ষার ভাব পোষণ করা উচিত নয়।
৩। সেক্রেটারীকে কখনও ব্যক্তিগত কাজে লাগানো উচিত নয়।
৪। সেক্রেটারীকে কখনও সহানুভূতি বা তিরস্কার করা উচিত নয়।
৫। যখনই সম্ভব হবে সেক্রেটারীকে কাজের মূল্য দেওয়া উচিত।
১০. স্বামীকে জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দিন
মানুষ যখন তার কর্মজীবন শুরু করে তখন সে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে না। মানুষ অনবরত জ্ঞান অর্জন করেই কর্মপথে এগিয়ে চলে। জীবনের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলতে চলতেই সে জ্ঞানের অধিকারী হয়।
আমেরিকার বিশিষ্ট সমাজবাদী ডব্লিউ, লয়েড ওয়ার্নার বলেন, “আমেরিকার স্বপ্ন এই বিশ্বাসের উপরেই স্থাপিত যে, মানুষ অগ্রগামী হতে সক্ষম’ আর অগ্রগামী হওয়ার প্রধানতম পথ হল ‘বিদ্যাশিক্ষা’।” মি. ওয়ার্নার আরও বলেছিলেন যে, যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা-বাণিজ্য পদোন্নতির তালিকা লক্ষ্য করেই কর্ম প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া। বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠানই নিজেদের খরচে কর্মচারীদের বিশেষ ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়, যেখানে অনেক মহান চরিত্র অবসর সময়ে লেখাপড়া আর বিদ্যার্জনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে। এই ধরনের এক উদারহরণ হল চার্লস জি. ফ্রন্ট। তিনি ছিলেন একজন ভারমন্ট এলাকার চর্মকার বা চলতি কথায় মুচি। অথচ এমনই একজন মানুষ তাঁর অবসর সময়ে মাত্র এক ঘন্টা পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকে বিখ্যাত একজন অন্ধবিশারদ হয়ে ওঠেন। এই ধরনের আর একজন মানুষ হলেন শ্রমিক জন হান্টার। তিনি তার অবসরের সময়ে তুলনামূলক শারীরবিদ্যা পাঠ করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি প্রতি রাতে মাত্র চার ঘন্টা ঘুমোতেন। ব্যাঙ্ক কর্মচারী লুবেক তার অবসর মুহূর্তে পড়াশোনা করে হয়ে ওঠেন প্রাগৈতিহাসিক বিজ্ঞানী। বিখ্যাত জর্জ স্টিফেনসন যখন রাতের বেলায় ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন অবসর পেলেই পাটীগণিত শিখতেন। এভাবেই তিনি পরে আবার রেলের ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। বিখ্যাত বিজানী জেমস ওয়াট যে সময় নানা ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন তখনই আবার অবসর সময়ে রসায়ন শাস্ত্র আর গণিত শিক্ষা করতেন। পরে আবার তিনি বাষ্পীয় শকট আবিষ্কার করেছিলেন। এই সব জ্ঞানী মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকতেন তাহলে জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতো।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, একজন পুরুষ বা স্বামীর এই বাড়তি শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে একজন স্ত্রী কতখানি সাহায্য করতে পারে? এটা একমাত্র সম্ভব হয় স্ত্রী যদি স্বামীর মনোভাব বুঝে নিয়ে তাকে উন্নত করার জন্য মন-প্রাণ ঢেলে দিতে পারে। স্বামীর অমনোযোগিতা কৃতকার্যের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। স্ত্রীদের মনে রাখতে হবে যে, স্বামীর অকৃতকার্যতার জন্য তারাও অনেকটাই দায়ী। স্বামীদের পক্ষে গতির সঙ্গে সঙ্গতি রাখার জন্য বাইরের নানা বিষয় সম্পন্ধে জানার চেষ্টা করা ভালো। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা অসীম।