ম’দুজে চায় এরোটের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে, কারণ এরোট তার হাতের পুতুল।
একটা কথা স্থির জেনো, ম’দুজে তোমার শত্রু। মনে রেখো, এই কুৎসিত বুড়ির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে দাঁড়িয়েছে তারই ভাগ্যে জুটেছে নির্মম মৃত্যু। কাজেই ম’দুজে, টমোস ও এবোট সম্পর্কে সাবধান; আর বন্ধু হিসেবে তোমাকে চুপি চুপি বলি, নেমান সম্পর্কেও সাবধান।
তারপর দুই বন্ধু বের হল শহর দেখতে। বড় বড় গাছের ছায়ায় ঢাকা প্রশস্ত পথ। দুই পাশে ম্লান্ত নাগরিকদের সাদা ও সোনালী বাড়ি। এক জায়গায় দেখা গেল ক্রীতদাস কেনা-বেচা চলছে। দোকানে দোকানে নানা রকম পসরাও সাজানো রয়েছে।
বাজারের যেখানে যায় যেখানেই টারজান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে; দেখামাত্রই সকলে তাকে চিনতে পারে; সে তো সকলের চোখেই স্টেডিয়ামের নায়ক।
জঙ্গলের রাজা এক সময় বলল, এখান থেকে বেরিয়ে যাই চল; এত ভিড় আমার ভাল লাগে না।
বেশ তো, প্রাসাদে ফিরে চল; সেখানে রানীর সিংহগুলো দেখা যাবে।
টারজান বলল, সেই ভাল; ভিড় দেখার চাইতে সিংহ দেখা অনেক ভাল।
একটি বড় সিংহ দক্ষিণ দিক থেকে নিঃশব্দে কাফা-সীমান্ত পার হয়ে গেল। সে সিংহটি এমন নিশ্চিতভাবে পথ চলছে যে তার মনে সন্দেহের লেশমাত্র আছে বলে মনে হয় না।
সে কেন চলেছে? এই বিঘ্নসংকুল দীর্ঘ পথে কিসের প্রেরণায় সে চলেছে? চলেছেই বা কোথায়? কি বা কাকে সে খুঁজছে? একমাত্র সে-পশুরাজ সিংহ নুমাই তা জানে।
সে রাতে গেমনন ও টারজান তাদের বাসাতেই রাতের খাওয়া শেষ করল। ভালতোর জানাল, সে ঘুমতে যাচ্ছে, সকালের আগে যেন ঘুম ভাঙানো না হয়।
ভোর হতেই টারজান ও ভালতোর ঘুম থেকে উঠে পড়ল, কারণ একটু সকাল-সকাল ভালতোরকে এথনি-যাত্রা করতে হবে। পাশের ঘরে তাদের প্রাতরাশ তৈরি হচ্ছে।
গজদন্তের গুল্ফ-বন্ধনীর সঙ্গে স্যান্ডেলের ফিতে বাঁধতে বাঁধতে ভালতোর বলল, আবার আমাদের দেখা হল, আবারও এল বিদায়ের পালা। আহা বন্ধু, তুমি যদি আমার সঙ্গী হতে তো কী ভালই হত।
টারজান তাকে বুঝিয়ে বলল, দেখ, গেমননের হেফাজতে থাকাকালে আমি যদি কাথুনি ছেড়ে চলে। যাই তাহলে গেমননের জীবন বিপন্ন হবে; তাই আমি এখন যেতে পারছি না। কিন্তু তুমি নিশ্চিত জেন, এথনিতে তোমার সঙ্গে আমি দেখা করবই।
ভালতোর বলতে লাগল, বন্যার ফলে আমরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম তখন আশাই করতে পারি। নি যে আর কোন দিন জীবিত অবস্থায় তোমাকে দেখতে পাব। সিংহের মুখে দাঁড়িয়ে তোমাকে চিনতে পেরেও নিজের চোখকে পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারি নি। টারজান, চার-চারবার তুমি আমার জীবন রক্ষা করেছ; আমার পিতৃগৃহে সাদর অভ্যর্থনা তোমার জন্য সর্বদাই অপেক্ষা করে থাকবে।
টারজান ও ভালতোরের খাওয়া শেষ হতেই একজন এসে খবর দিল, ভাতোরের পথ-প্রদর্শক যাত্রার জন্য তৈরি; এক মুহূর্ত পরে সংক্ষেপে বিদায় পর্ব শেষ করে ভালতোরও স্বদেশের পথে যাত্রা করল।
সেদিন সন্ধ্যায় টারজান সবে গেমনন ও তার বাবা ও মায়ের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে বসেছে এমন সময় একটি ক্রীতদাস এসে জানাল, ডোরিয়ার বাবা টুডোস-এর বাড়ি থেকে একজন বার্তাবহ এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ নিয়ে।
তাকে এখানে পাঠিয়ে দাও, গেমনন বলল।
একটু পরেই ঘরে ঢুকল একটি দীর্ঘকায় নিগ্রো।
গেমনন সাদরে বলল, আরে গেম্বা! কি খবর এনেছ বল?
ক্রীতদাস বলল, খবরটি গুরুতর এবং গোপনীয়।
এদের সামনেই সব কথা বলতে পার গেম্বা।
আমার মালিক টুডোস-এর কন্যা ডোরিয়া আমাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে, এরোট আজ কৌশল করে তার পিতৃগৃহে ঢুকে তার সঙ্গে কথা বলেছে। কি কথা বলেছে সেটা কিছু নয়, কিন্তু সে যে ডোরিয়াকে দেখেছে সেটাই গুরুতর।
গেমননের বাবা বলে উঠল, ব্যাটা শেয়াল!
গেমননের মুখে ছায়া পড়ল। আর কোন কথা আছে?
না মালিক; এই সব, গেম্বা জবাব দিল।
গেমনন পকেটের থলি থেকে একটা স্বর্ণমুদ্রা বের করে গেম্বাকে দিল। তোমার মনিব-কন্যার কাছে ফিরে গিয়ে বল, কাল তাদের বাড়িতে গিয়ে আমি তার বাবার সঙ্গে কথা বলব।
ক্রীতদাস চলে গেলে গেমনন অহায়ভাবে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি করতে পারি? টুড়োসই বা কি করবে? কে-ই বা কি করতে পারে? আমরা অসহায়।
টারজান বলল, হয়তো আমি কিছু করতে পারি। বর্তমানে আমি তোমাদের রানীর বিশ্বাসভাজনদের একজন; রানীর সঙ্গে আমি কথা বলল; দরকার হলে তোমাদের পক্ষে ওকালতি করব।
গেমননের চোখে নতুন আশার আলো দেখা দিল। তা যদি কর! রানী তোমার কথা শুনবে। আমার বিশ্বাস, একমাত্র তুমিই ডোরিয়াকে বাঁচাতে পার। কিন্তু মনে রেখ, কোনক্রমেই রানী যেন তাকে দেখতে না পায়; তাহলে আর রক্ষা নেই- রানী হয় তাকে বিকলাঙ্গ করে দেবে, নয় তো মেরে ফেলবে।
পরদিন সকালে রাজপ্রাসাদ থেকেই দূত এসে জানাল, রানীর হুকুম দুপুরে টারজানকে তার সঙ্গে দেখা করতে হবে; সেই সঙ্গে গেমননের প্রতি তার নির্দেশ, সে যেন শক্তিশালী রক্ষী নিয়ে টারজনের অনুগমন করে, কারণ রানীর আশংকা টারজনের শত্রুরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
গেমননের বাবা বলল, নেমোনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবার মত সাহস যাদের আছে তারা নিশ্চয় খুব শক্তিমান শত্রু।
গেমনন বলল, গোটা কাথুনিতে সে সাহস শুধু একজনই রাখে।
বৃদ্ধ মাথা নাড়ল। বলল, বুড়ি শয়তানী! আহা! টু যদি তাকে ধ্বংস করে ফেলত! একটি ক্রীতদাসী বুড়ি শাসন করবে কাথুনি রাজ্য-সেটা বড়ই লজ্জার কথা!