চেষ্টায় যে কিছু কিছু ফল হচ্ছে না—তাও তো না। প্রথম মানব ডিএনএ ম্যাপ করতে আমাদের লাগসিলো ১৫ বছর। খরচ হইসিলো ৩ বিলিয়ন ডলার। এখন সেই ডিএনএ ম্যাপ করতে কয়েক সপ্তার বেশি লাগে না। পকেট থেকে যায় মাত্র কয়েকশো ডলার।
পারসোনালাইজড চিকিৎসার যুগ তাই শুরু হল বলে। একদিন আসবে, যখন পাড়ার ডাক্তার আপনার ডিএনএ দেখে বলে দিবে, যে বয়সকালে আপনার লিভারে সমস্যা হতে পারে। হার্টের দিক থেকে মোটামুটি নিশ্চিন্ত। ৯০ পার্সেন্ট লোক যে ওষুধ খেয়ে ভালো হয়, সেটা আপনার জন্য কাজ নাও করতে পারে। আপনার প্রেসক্রিপশনে হয়তো এমন বড়ির কথা লেখা থাকবে, যা সেই ৯০ পার্সেন্ট খেয়ে উলটা অসুস্থ হয়ে পড়বে।
খোলাবাজারে এইভাবে DNA সিকোয়েন্স পাওয়া গেলে ডাক্তারদের না হয় সুবিধা হবে। সমস্যাটা হবে পলিসি মেকারদের। এইভাবে DNA ওপেন করে দেয়া ঠিক হবে কিনা—এইটা আরেকটা ফিলোসফিক্যাল সমস্যা। ব্যাঙ্কের লোকজন আপনার DNA দেখে যদি বুঝে ফেলে, আপনি খুবই উড়নচন্ডী প্রকৃতির মানুষ, তাইলে তো আপনাকে আর ধার দিবে না। চাকরির ইন্টারভিউয়ে আমরা তখন সিভি না নিয়ে ডিএনএ রেজাল্ট নিয়ে হাজির হব। ডিএনএ ভালো দেখালে আপনি চাকরি পাবেন, আর না হলে নাই। ব্যাপারটা এক রকম বৈষম্য হয়ে গেলো না?
সায়েন্স ফিকশন লেখকেরা ভবিষ্যতের পৃথিবীর স্পেসশিপ নিয়ে লেখেন, টাইম ট্রাভেল নিয়ে লেখেন। কিন্তু এর ফলে আমরা যে মরাল, ফিলোসফিক্যাল দ্বন্দ্বগুলার সম্মুখীন হব—সেগুলা নিয়ে খুব একটা কেউ লেখেন না। কেননা, সেই সময়কে বোঝা, সেই সময়ের সমস্যাগুলোকে ধারণ করা, আমাদের মরাল স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। এমনে একটা সত্তার কথা ভাবুন তো যার কোন সেক্সুয়ালিটি নাই, যার মনোসংযোগের ক্ষমতা আমার আপনার চেয়ে হাজার গুণ বেশি। রাগ, দুঃখ, ঘৃণা, হিংসা বলে কোন বস্তু যার মধ্যে নাই—তার আবেগ, তার চাহিদা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করবো?
বলা হয়, বিগ ব্যাং-এর মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের যাত্রা শুরুর। এর আগে সময়, সভ্যতা, প্রাণ—কোন কিছুরই কোন অস্তিত্ব ছিল না। আমরা সম্ভবত সেরকমই একটা নতুন বিস্ফোরণের দিকে এগোচ্ছি।
এই বিস্ফোরণের আগের পৃথিবী আর পরের পৃথিবীর মধ্যে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের কাছে যা মূল্যবান—পরিবার, প্রিয়জন, ভালবাসা, ঘৃণা—সব কিছুই মূল্যহীন হয়ে পড়বে সেই নতুন পৃথিবীর মানুষদের কাছে। এই নতুন মানুষদের আমরা নাম দিয়েছি Homo Deus. ঈশ্বরের সমান মানুষ।
এই নতুন মানুষদের নিয়েও হয়তো গল্প লেখা হবে। অন্য কোন দিন। অন্য কোন সময়।
———-