এজন্যই হয়তো যুগে যুগে আরামের যতো কাজ আছে, যেখানে শারীরিক পরিশ্রমের বালাই নাই, সেইগুলা সব ছেলেরাই করসে। যতো রকমের গুটিবাজি আছে, রাজনীতি, আইন প্রণয়ন কিংবা রাজ-রাজড়ার স্তুতি গেয়ে সাহিত্য রচনা—সবগুলাতেই মেয়েদের এ্যাক্সেস এক রকম বন্ধ করে রাখা হইসে। মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেয়া হইসে ফসলের কাজ, ঘরদোরের কাজ আর বাচ্চা মানুষ করার কাজ। সবগুলাতেই যেখানে প্রচণ্ড শারীরিক শ্রমের প্রয়োজন হয়। কাজেই, মেয়েরা শারীরিকভাবে দুর্বল—এই দাবি আসলে কোন ধোপেই টেকে না।
ইতিহাস বরং আমাদের এই সূত্রই দেয় যে, শারীরিক ক্ষমতা আর সামাজিক ক্ষমতা পরস্পর ব্যস্তানুপাতিক। মাফিয়া গ্রুপগুলোতে প্রায়ই দেখবেন, ছোটোখাট এক লোক হয়তো ডন হিসেবে আবির্ভূত হয়ে বসে আছে। যাকে হয়তো কানের নিচে একটা দিয়েই শোয়ায়ে দেয়া যায়। কিন্তু যার মাথায় ঘুণাক্ষরেও এই চিন্তা আসবে, সে হয়তো এই মহৎ কাজ করার জন্য প্থিবীর বুকে বেশিদিন বেঁচেও থাকবে না। জিয়াউর রহমান কিংবা মইন ইউ আহমেদ যেমন তাদের সময়ে আর্মির সবচেয়ে লম্বাচওড়া লোক ছিলেন না।
শারীরিক সামর্থ্যই যদি সব কিছু হত,তাহলে এতোদিনে বাঘ-সিংহ বা ট-রেক্স আমাদের খেয়ে হয় নির্বংশ করে ছাড়তো নয় গুহার তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করতো। সেটা যেহেতু হয়নি, তারে মানে বুঝতে হবে, শারীরিক সামর্থ নয়, অন্য কিছু এখানে কী রোল প্লে করছে।
সেই অন্য কিছুটা কী?
অনেকে বলেন, সেই অন্য কিছুটা হচ্ছে পুরুষের এ্যাগ্রেসিভ মনোভাব। হাজার-লক্ষ বছরের বিবর্তন পুরুষকে হিংস্র করে গড়ে তুলেছে। তার মানে এই না যে, লোভ, পাপ, হিংসা—এইসব ব্যাপারে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে আছে। কিন্তু যখনই শারীরিক ভায়োলেন্সের প্রয়োজন হয়েছে, ছেলেরা তাদের আগেপিছে চিন্তা না করে এগিয়ে গেছে। আর এটাই তাদের লং রানে এগিয়ে দিয়েছে।
যখনই কোথাও যুদ্ধ হয়েছে, আর্মড ফোর্সের দায়িত্বে ছিলে পুরুষ। যুদ্ধ শেষে শান্তিকালীন সময়ের ভারও তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাঁধে চলে এসেছে। নিজেদের অথরিটি প্রতিষ্ঠায় এরা আবার যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছে। যতো যুদ্ধ হয়েছে, পুরুষের স্কিল ততো বেড়েছে। সেই সাথে সমাজের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ।
তার মানে কি এই যে, যে বেশি এ্যাগ্রেসিভ, তার হাতেই সমাজের চাবি উঠে আসবে? তাহলে রোমান সাম্রাজ্যের চাবি অভিজাতদের হাতে থাকতো না। থাকতো ম্যাক্সিমাসদের মত সৈনিকদের হাতে। ব্রিটিশ সৈন্যদলের নেতা কোন ডিউক অফ ওয়েলিংটন হতেন না। হত আইরিশ ক্যাথলিক ঘরে জন্ম নেয়া কোন সাধারণ সৈন্য। আফ্রিকান সাম্রাজ্যের অধিপতি ঠাণ্ডা মাথার কোন ফ্রেঞ্চ অভিজাত হত না। হত অনেক বেশি এ্যাগ্রেসিভ, হয়তো মাঠের লড়াইয়েও অনেক বেশি স্কিলড কোন আলজেরীয় বা সেনেগালিজ।
লোকে বলে, মেয়েদের শরীরে টেস্টোস্টেরণ কম। তাই তারা ভালো আর্মি, জেনারেল বা পলিটিশিয়ান হতে পারে না। কিন্তু যুগে যুগে আমরা দেখেছি, যুদ্ধ জয়ে টেস্টোস্টেরণ লাগে না। যুদ্ধ কোন টেস্টোস্টেরণের খেলা না। যুদ্ধ অনেক কমপ্লেক্স একটা প্রজেক্ট যেখানে আপনাকে ভয়াবহ রকমের অর্গানাইজড হতে হবে,, স্ট্রাকচারড হতে হবে। নিজেদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে, পারলে নতুন নতুন বন্ধু জোটাতে হবে। শত্রুপক্ষের মনের ভেতর কী খেলা চলছে, সেটাও আপনাকে বুঝতে হবে।
এ্যাগ্রেসিভ কারো চেয়ে ম্যানিপুলেটিভ কারোরই এই খেলায় জেতার সম্ভাবনা বেশি। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট আর জুলিয়াস সীজার তাই যা করে দেখাতে পারেননি, তাই করে দেখিয়েছেন সম্রাট অগাস্টাস। তিনি এদের মত ভালো জেনারেল ছিলেন না, কিন্তু ছিলেন মাস্টার অফ ম্যানিপুলেশন। তার সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব তাই ছিল এদের চেয়ে অনেক বেশি।
মেয়েরা কিন্তু গড়ের উপর ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি ম্যানিপুলেটিভ। শত্রুপক্ষের মনের খবরাখবর এরা ভালো রাখে। এই সূত্র অনুযায়ী সাম্রাজ্য তো তবে মেয়েদের হাতেই তৈরি হোওয়া উচিত ছিল। মেয়েরা আদেশ দেবে আর পুরুষ সৈন্যরা সেই আদেশ পালন করবে। অনেকটা মৌমাছি সমাজের মত। বাস্তবে সেটা হয়নি যদিও। কেন—সেটা একটা রহস্য।
আরেকটা থিওরি বলে, নারীজাতির সারভাইভাল স্ট্রাটেজিই এদের পুরুষের চেয়ে দুর্বল করে বিকশিত করেছে।
একটা মেয়ের জন্য তার সাথে সেক্স করতে ইচ্ছুক—এমন গোটা দশেক ছেলে পাওয়া কোন সমস্যাই না। কিন্তু একটা ছেলের জন্য এটা মহা সমস্যা। একে তো তার মেয়েটাকে কনভিন্স করতে হয়েছে, তার উপর পছন্দের মেয়েটাকে অন্য কোন ছেলে যেন জোর করে নিয়ে না যায়, সেজন্য তাকে স্বজাতির বিরুদ্ধে বহুৎ লড়তে হয়েছে। লোহায় যতো ঘষা দিবেন, তার ধার ততো বাড়বে। ফলে, বাঁটে পড়ে হলেও, পুরুষের ধার ও ভার—দুটোই বেড়েছে। তার জিনগুলোও দিন দিন আরো এ্যাগ্রেসিভ হয়েছে, হয়েছে আরো কম্পিটিটিভ। আর মেয়েটা যেহেতু না চাইতেই অনেক কিছু পেয়ে যাচ্ছে, তার জিনেও তার প্রভাব পড়ছে। তার জিন হয়ে উঠছে আরো প্যাসিভ, আরো সাবমিসিভ।
গর্ভাবস্থা একটা বিরাট ফ্যাক্টর এইখানে। একটা মেয়ের পেটে যখন বাচ্চা থাকে, সেই নয় মাস সে ফলমূল খাদ্য সংগ্রহের জন্য কোথাও যেতে পারতো না। এই কঠিন সময়টা সে একজন পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সেই পুরুষের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখাটাও, যাকে আমরা ভালবাসার সম্পর্ক বলি—এই স্ট্রাটেজিরই ফলাফল। শুধু ঐ নয় মাস নয়, বাচ্চা হবার পর প্রথম দু-তিন বছরও সে ঐ বাচ্চার দেখভালের পেছনে কাটিয়ে দেয়। এই সময়টা তার ও তার বাচ্চার ফুড সিকিউরিটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব পড়ে তার পছন্দের পুরুষটির উপর। ফলাফল, সেই নারীর উপর পুরুষটির আধিপত্য।