‘আপনি হাসবেন না, আমি জানি আপনি কেন এসেছেন এদেশে? বলল কি সে উদ্দেশ্য।
‘বলুন।’
আপনি পৃথিবী দেখতে বেরিয়েছেন, আপনার কর্সিকায় আসার প্রধান উদ্দেশ্য ওই প্রাচীন প্রথা ভেলডেটা’ এটাই আপনি দেখতে চান সচক্ষে কর্সিকা বাসীদের মধ্যেই মেরেসি ‘কলবা’ বইয়ে যে ধরনের চরিত্র এঁকেছে।
আমি তার কথায় সায় দিয়ে বললাম, আমার সে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়নি। এ গ্রামে তো দেখেছি আপনাদের বাড়ি ছাড়া অন্য সব বাড়ি দুর্গের মতো সুরক্ষিত।
‘ঠিক, আমার বাড়ি ছাড়া অন্য সব বাড়ি সুরক্ষিত। এতেই কি প্রমাণ হয় না আমি এ বংশের মর্যাদা ধরে রাখতে পারিনি? এই গ্রামে গত দশ বছর ধরে একটা হানাহানি চলছে। গ্রামের সব লোক দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে, একমাত্র আমি কোনো দলে নেই। আমার বাবা যদি বেঁচে থাকতেন, কিংবা পিতামহ–তবে তারা যে কোনো একটা দলে ভিড়ে যেতেন। আর আমি এখন মিমাংসা করছি। একজন ছোরা মারছে, একজন গুলি চালাচ্ছে। আমি মাঝখানে থেকে দুজনকেই বলছি, থামো, থামো।’ আপনি সার্টেন প্রদেশে এসেছেন খুনি দেখতে, চলুন এখন আমার সঙ্গে, দেখাব আপনাকে খুনি?
‘আমাকে সঙ্গে নেবেন?
‘কেন নেব না? আপনার যদি কৌতূহল থাকে। তবে যাবেন কিনা সেটা আপনার উপর নির্ভর করে।
‘আমি তাহলে আনন্দের সঙ্গেই যাব।
মাদাম ফ্রাঞ্চি বললেন–‘উনি কিন্তু খুব ক্লান্ত। তার ইতস্তত ভাব দেখে মনে হয়। কর্সিকার প্রাচীন প্রথা ভেলডেটা বর্তমানে কমে যাওয়াতে ছেলের মতো তিনিও লজ্জিত।
মা তাতে কী হয়েছে? উনি গিয়ে দেখুক। পরে যখন প্যারিসে ফিরে গিয়ে গল্পের আসরে যোগ দিয়ে, কর্সিকার ভেলডেটা আর কর্সিকার এই খুনিদের নিয়ে অবাস্তব গল্প চলবে, তখন উনি সত্য কথা বলে লোকের ভুল ভাঙিয়ে দিতে পারবেন।
এইমাত্র আপনি যে দশ বছর ধরে ঝগড়ার কথা বলেছিলেন, যার। মিমাংসা আপনি করছেন, তার শুরু হয়েছিল কীভাবে?
‘শুরু যেভাবেই হোক, সেটা কোনো বিষয় না, ঝগড়ার পরিণাম কী হলো মানুষ সেটাই দেখে, মনে করুন একটা মাছি কোনো লোকের সামনে দিয়ে উড়ে গেল। সেই কারণেই মানুষটা মারা গেল। এখানে গুরুত্ব মৃত্যুর মাছির না। সামান্য মাছির কারণে মারা গেলেও মৃত্যুটাই সত্য।
আমি দেখলাম, লুসিয়েন সুল্লাকারোর পুরুষেরা যেটা নিয়ে দশ বছর ধরে একে আরেকজনকে খুন করছে, তার কারণ আমাকে নিজের মুখে জানাতে চাচ্ছে না। কিন্তু তার দ্বিধাই আমার কৌতূহলকে বাড়িয়ে তুলল।
‘কিন্তু ঝগড়াটার একটা কারণ তো ছিল, তবে ব্যাপারটা যদি গোপনীয় কিছু হয়
‘আরে না, গোপন কিছু না, অলাৰ্ত্তি আর কলোনাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।’
‘কীভাবে?
‘কারণ একটা মুরগি, অলাৰ্ত্তিদের বাড়ি থেকে একটা মুরগি গিয়েছিল কলোনাদের বাড়িতে। অলাৰ্ত্তিরা মুরগি আনতে গেলে, কলোনারা মুরগি। তাদের বলে দাবি করল। তাতে অলাৰ্ত্তিরা বিচারের ভয় দেখাল, তাতে। কলোনাদের এক বুড়ো মহিলা রেগে গিয়ে সবার সামনেই মুরগিটা ধরে। এনে গলাটা মুচড়ে ভেঙে দিয়ে অনাৰ্ত্তিদের এক মহিলার মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, নে তোদের মুরগি তোরা খা। তখন ঐ মহিলার ভাই মরা মুরগি। দিয়েই কলোনা বুড়িকে ঘা মারতে যাচ্ছিল, কিন্তু ভাগ্য খারাপ এক কলোনা তার বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়ল, মরা মুরগি হাতে নিয়েই অলাত্তি যুবক মারা গেল।’
‘তাহলে এভাবেই শুরু হলো খুনাখুনি? এ পর্যন্ত কতজন মারা গেছে?’
‘মারা গেছে নয়জন, আহত হয়েছে আরও—’
‘সামান্য একটা মুরগির জন্যে-যার দাম—’
‘সেটাই তো বলেছিলাম–কারণটার কোনো গুরুত্ব নেই, পরিণামই হলো আসল।’
‘নয়জন মারা গেছে বলেই কি দশম জনকে মরতে হবে?’
‘না, তা হবে না, আমি মিমাংসার ভার নিয়েছি বলেই দশম লোকটা বেঁচে যাবে।’
‘কোন দল আপনাকে মিমাংসার জন্য অনুরোধ করেছিল?’
আরে, তাদের কেউ না। আগ্রহটা আমার ভাইয়ের। প্যারিসের বিচারমন্ত্রীর কাছে সে এ ব্যাপারটা জানিয়েছে। কর্সিকার এ গ্রামে কি ঘটেছে
তা নিয়ে প্যারিসের লোকের মাথা ঘামানোর কি দরকার বলুন তো? মূল। কাজই হলো ওই অঞ্চল শাসকটির। সে কিনা প্যারিসে চিঠি লিখে জানাল, একমাত্র আমার পক্ষেই নাকি এর একটা মধুর মিলন করা সম্ভব, আমার একটা কথাতেই–সবার রাগ উড়ে যাবে। শাসকের চিঠি পৌঁছানোর সাথে সাথে আমার ভাই আমাকে চিঠি লিখল, সে বিচার মন্ত্রীকে কথা দিয়েছে, এ ভেলডেটার মীমাংসা আমি করে দেব। এই হলো অবস্থা।
এরপর মাথায় একটা ঝাঁকানি দিয়ে লুসিয়েন বলল, আমার ভাই যখন কথা দিয়ে এসেছে, তখন আমাকে সে কথা রক্ষা করতে হবেই। না করলে সে ফ্রাঞ্চি বংশের যোগ্য হবে না।
হতাশ হয়ে বললাম, তা হলে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, ভেলডেটা দেখার সম্ভাবনা নাই।
বিরক্ত হয়েই জবাব দেয় লুসিয়েন, ‘সেটাই তো মনে হয়।
মনের হতাশ ভাব চেপে, উৎসাহ দেখিয়ে প্রশ্ন করলাম, এখন তাহলে ওই দু-দলের কারও সাথে আপনার আলাপ করার কথা আছে?
‘হ্যাঁ–এক দলের সাথে কালকে কথা বলা হয়েছে।’
‘আজকে যার সাথে কথা বলবেন, সে কি অলাৰ্ত্তি না কলোনা?’
‘অলার্তি।’
‘কোথায় দেখা হবে? কাছেই?’
‘ইস্ত্রিয়া দুর্গে।’
‘ইস্ত্রিয়া! গাইড জানিয়েছিল কাছেই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ।’
‘তিন মাইলের মতো।’
‘তাহলে তো তিন কোয়ার্টারের মধ্যে যাওয়া যাবে।’
‘হ্যাঁ, বেশি হলে তিন কোয়ার্টার।