শুনতে পেলাম ও ঘরে ‘ডি’ বলছে–‘আসুন মাদাম, আসুন, আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি–এ একটা একান্ত নিজস্ব পার্টি, বিশেষ অন্তরঙ্গ কয়েকটি বন্ধু।
শ্যাটো রেনোর গলা শুনতে পেলাম–এসো না এমিলি। ইচ্ছে না হলে তুমি মুখোশ খুলো না।
লুই দ্য ফ্রাঞ্চির মুখ থেকে একটা হিস হিস শব্দ বের হলো-’দুবৃত্ত।
শ্যাটো রেনো আর ডি দুজনে প্রায় টানতে টানতে এক মহিলাকে নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকল। বেচারি ‘ডি’–তার হয়তো মনে মনে ধারণা–অতিথি অ্যাপায়নের জন্য যেটুকু করা দরকার সে সেটুকু করছে।
চারটে বাজতে তখনও তিন মিনিট বাকি। মৃদু স্বরে ‘ডি’, কে জানাল শ্যাটো রেননা।
‘ঠিক আছে বন্ধু, তুমি জিতেছ।
অজানা মহিলা বলে উঠলেন, না, এখনও পুরোপুরি জেতা হয়নি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তিনি শ্যাটো রেনোকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার অত জেদের কারণ এখন বুঝতে পারছি। আপনি বাজি ধরেছিলেন যে এখানের এই ডিনারে আমাকে নিয়ে আসতে পারবেন কেমন?
শ্যাটো রেনো কোনো জবাব দিল না। তখন মহিলা ‘ডি’-এর দিকে ফিরল।
‘মঁসিয়ে, এই ভদ্রলোক জবাব দিচ্ছেন না। কাজেই আপনাকেই প্রশ্ন করি শ্যাটো রেনো কি এই রকম কোনো বাজি ধরেছিলেন হে।’
‘ম্যাডাম, শ্যাটো রেনো আমাকে ঠিক এই ধরনের কথা বলেছিলেন, তা আমি আপনার কাছে অস্বীকার করতে পারি না।’
তাহলে শুনুন, শ্যাটো রেনো বাজি হেরেছেন। কারণ তিনি আমাকে কোথায় নিয়ে আসছেন, তা আমকে মোটেই বলেননি। আমাকে বলেছিলেন, আমার একটি বিশেষ বন্ধুর বাড়িতে খাবার দাওয়াতে আমরা যাচ্ছি। সুতরাং আমি যখন নিজের ইচ্ছায় আসিনি তখন আমার ধারণা, শ্যাটো রেনো বাজি হেরেছেন।’
এতক্ষণ পর শ্যাটো রেনো কথা বলল, ‘এসে যখন পড়েছ তখন থেকে যাও। এত সব সম্মানী ভদ্রলোক রয়েছেন। এমন সুন্দরী সব মহিলা
‘এসে যখন পড়েছি তখন যে ভদ্রলোক এ ঘরের মালিক, তাকে তার ভদ্রতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু তাঁর নিমন্ত্রণ আমার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব না। মঁসিয়ে লুই দ্য ফ্রাঞ্চি আপনি কি আমায় সাহায্য করবেন? আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন?
লুই দ্য ফ্রাঞ্চি বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে অজ্ঞাত মহিলাকে শ্যাটো রেনোর সামনে থেকে আড়াল করে দাঁড়াল।
শ্যাটো রেননা তখন রাগে দাঁতে দাঁত পিষছে। মাদাম, আপনি ভুলে যাবেন না, আপনি আমার সাথে এসেছেন, আমি যখন এনেছি, আপনাকে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও আমার।
মুখোশ পড়া মহিলা উত্তর দিলেন, ‘মঁসিয়েরা, এখানে আপনারা ভদ্রলোকেরা উপস্থিত আছেন। আমি আপনাদের আশ্রয় নিচ্ছি। আশা করি আপনারা দেখবেন যেন শ্যাটো রেনো আমার কোনো অপমান করতে না পারে।
শ্যাটো রেননা সামনে এগোতে গিয়েছিল আমরা সবাই এক সাথে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। শ্যাটো রেননা পিছিয়ে এলো। বলল, ঠিক আছে। ম্যাডাম আপনার ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারেন। তবে কার সাথে আমাকে ফয়সালা করতে হবে, তা আমি জানি।
লুই দ্য ফ্রাঞ্চি যে মর্যাদার সাথে এই পরিস্থিতিতে সামনে এগোল, তা ভাষায় বোঝান যায় না–মঁসিয়ে যদি আমার প্রতি ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে কাল সম্পূর্ণ দিন ৭নং রু দ্য হেয়ডারে আপনার জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকব।’
‘খুব ভালো কথা, তবে আমি নিজে যেতে পারব না। আমার বদলে আমার দুই বন্ধু আপনার সাথে দেখা করতে যাবেন।
‘কোনো মহিলার সামনে এ ব্যাপারে আলোচনা করা অবিবেচনার কাজ। লুই কাঁধ নাড়িয়ে বলে মহিলাটির দিকে ফিরে তার হাত ধরে তাকে বলল, চলুন ম্যাডাম, আমার উপর বিশ্বাস রেখে যে সম্মান আমাকে দিয়েছেন। তার জন্য আপনাকে আমার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
ওরা দুজন চলে গেল। ঘর একদম নীরব।
‘বেশ তাহলে আমি হেরে গেলাম। চেয়ারে বসতে বসতে শ্যাটো রেনো বলল–পরশু ফ্রেয়ার্স হোটেলে নৈশ ভোজ খাব। সে তার গ্লাস বাড়িয়ে দিল, ‘ডি’ তা সম্পূর্ণ ভরে দিল শ্যাম্পেনে।
এরপরে আর কারও খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখা গেল না।