সকালের প্রথম ট্রেন ধরে লন্ডনে পৌঁছেই সোজা হাজির হলাম নাবিকদের সেই হাসপাতালেই। আমার আশঙ্কা তখন একটাই–পোস্টমর্টেম-এর পরে অন্য হাতটা যদি এতক্ষণে জ্বালিয়ে দিয়ে থাকে, তা হলে কী হবে! সৌভাগ্যবশত আমার আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হল–অন্য হাতটা এখনও পোস্টমর্টেম-এর ঘরেই রাখা আছে। সেটা নিয়ে তৎক্ষণাৎ রওনা হয়ে সন্ধের আগেই কাকার বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
কাকা কিন্তু আমাকে কিছুতেই আর ল্যাবরেটরি ঘরে থাকতে দিলেন না। অগত্যা হাতটাকে একটা জারে ভরে আগের দিনের মতোই একটা তাকে রেখে দিলাম। তারপর শুতে গেলাম বাড়ির অন্য অংশে একটা ভালো শোওয়ার ঘরে।
কিন্তু আমার ভাগ্যে বোধহয় নিরুপদ্রব ঘুম আপাতত আর নেই। মাঝরাতে হাতে একটা বাতি নিয়ে ঢোলা ড্রেসিং গাউন পরা অবস্থায় উত্তেজিতভাবে যিনি ঘরে ঢুকলেন, তাঁকে দেখে গতকালের সেই আফগান লোকটাকে দেখার মতো ভয় পেলে বা অবাক হলে কিছু অস্বাভাবিক হত না। কিন্তু ইনি স্যার ডোমিনিক–আমার কাকা। কোনও জাদুমন্ত্রবলে যেন তাঁর বয়স অন্তত কুড়ি বছর কমে গেছে। চোখেমুখে ঝকঝকে ভাব। বিজয়ীর ভঙ্গিতে একটা হাত তুলে আমাকে বললেন, হার্ডএকর, আমরা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি। এখন বলল, তোমার এই ঋণ আমি কী ভাবে শোধ করি?
–রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে?
–হ্যাঁ। তাই তো তোমার ঘুম ভাঙিয়ে সুখবরটা দিতে এলাম। ভগবানই তোমাকে পাঠিয়েছিলেন আমাকে বাঁচাতে কেন না আর ছমাস এরকম চললে আমি আর বাঁচতাম না।
–কিন্তু কী দেখলেন? কী করে বুঝলেন যে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে?
–যা দেখেছি বা অনুভব করেছি, তাতে আমি নিশ্চিত যে এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরিসমাপ্তি হয়েছে। আজ রাতে সে আমার ঘরে এসে অন্যদিনের থেকেও জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে আমায় জাগিয়ে দিয়েছিল। কেন না গতকালের ঘটনায় সম্ভবত আমার প্রতি তার ক্রোধ ও বিদ্বেষ আরও বেড়ে গেছল। আমাকে জাগিয়ে সে তার চিরাচরিত ল্যাবরেটরি পরিক্রমায় চলে গেল। কিন্তু এত বছরে এই প্রথম সে আবার আমার ঘরে ফিরে এল। আনন্দে হাসছিল সে। কালো মুখে তার সাদা দাঁতগুলো ঝকঝক করছিল। তারপর আমার বিছানার পায়ের দিকে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের প্রথামত তিনবার মাথা ঝুঁকিয়ে আমায় কুর্নিশ করল। তৃতীয়বার কুর্নিশ করার পর ও বাহু তুলতেই দেখলাম, ওর দুটো হাতই আছে। তারপরেই ও মিলিয়ে গেল এবং আশা করি, চিরদিনের জন্য।
এর পরে কাকাকে আর কখনও ওই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি। উনি আর কাকিমা আরও বেশ কিছুকাল বেঁচেছিলেন–সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণ দীর্ঘ জীবন। ইংল্যান্ডে জীবনযাপনের খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে সম্পত্তি কেনাবেচা পর্যন্ত অনেক ব্যাপারেই ওঁরা আমার পরামর্শ নিতেন। সুতরাং আমার আর পাঁচ জ্ঞাতিভাইদের অগ্রাহ্য করে যখন স্যার ডোমিনিক আমাকে তার প্রভূত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে যান, তখন আমি বিন্দুমাত্র বিস্মিত হইনি। এক সাধারণ ডাক্তার থেকে রাতারাতি উইল্টশায়ারের এক বিখ্যাত ধনী ব্যক্তি হিসেবে আমি পরিচিত হলাম। এর জন্য কিন্তু হাতকাটা ওই আফগান লোকটি এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও কাকার বাড়িতে আসার প্রথম দিনটির কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
The Brown Hand গল্পটির অনুবাদ