–মাচ বেনহ্যাম, লুমাউথ আমি ভালই চিনি। সম্ভবত
আচমকা খুশি হওয়ার মত শব্দ করে মিস মারপল বলে উঠলেন, মনে পড়েছে হা–সেন্ট মেরী মিডে আমার বাগানে একদিন আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, আপনি ফুটপাথ দিয়ে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আমার মনে পড়ছে, আপনি বলেছিলেন, ওখানেই কোন বান্ধবীর সঙ্গে…।
–ঠিক! এবারে আমারও মনে পড়েছে। আমরা বাগানের বিষয়ে কথা বলেছিলাম।
–হ্যাঁ, আপনি কোন বান্ধবীর ওখানে গিয়েছিলেন সম্ভবত।
–হ্যাঁ,.. আমার একজন বান্ধবী…
মিস কুক কেমন ইতস্তত করতে লাগলেন যেন বান্ধবীর নামটা মনে করতে পারছেন না।
–হেস্টিংস। বললেন মিস ব্যারো।–
হ্যাঁ হ্যাঁ…নতুন বাড়িগুলোর কোন একটায়…মিস মারপল বললেন।
–আমরা সকলেই দেখছি বাগান ভালোবাসি।
.
রাতের খাওয়া সেরে মিস মারপল ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। মিস কুকের ব্যাপারটা তার মাথায় গেঁথেছিল। তিনি স্বীকার করেছেন সেন্ট মেরী মিডে ছিলেন…তার বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
মিস মারপল চিন্তা করলেন তার ওখানে আসার বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ছিল কি? তাকে কি ওখানে পাঠানো হয়েছিল? কিন্তু তার উদ্দেশ্য কি ছিল?
একটু পরে নিজের চিন্তার গতি উপলব্ধি করে তিনি নিজের মনেই হেসে উঠলেন। এসব কি ভাবছেন তিনি। মিস কুক আর মিস ব্যারোকে দুজন স্বাভাবিক মানুষ বলেই মনে হয়। দেখে বেশ হাসিখুশি বলেই মনে হয়।
কিন্তু…কিন্তু মিস কুক যেন মনে হল প্রথমে সেন্ট মেরী মিডে থাকার কথা অস্বীকার করতে চাইছিলেন। তিনি তাঁর বান্ধবী মিস ব্যারোর দিকে তাকিয়েছিলেন কেন? কোন নির্দেশ চাইছিলেন কি?
আচমকা মিস মারপলের মনে বিপদ কথাটা ছায়া ফেলল। প্রথম চিঠিতে মিঃ র্যাফায়েল কথাটা উল্লেখ করেছিলেন।
এই সূত্রেই দ্বিতীয় চিঠিতে দেবদূতের সাহায্যে কথা বলেছিলেন।
তিনি এই ব্যাপারে বিপদে পড়তে পারেন…কিন্তু কেন….কোন দিক থেকে?
নিশ্চয় মিস কুক বা মিস ব্যারোর কাছ থেকে নয়? খুবই সাধারণদর্শন দুই বান্ধবী।
কিন্তু এটাও তো ঠিক যে মিস কুক তার চুল রঙ করে, চুলের বিন্যাস বদলে চেহারার আদল পাল্টাতে চেয়েছেন।
একে নিশ্চয় ছদ্মবেশই বলতে হবে। ব্যাপারটা নিশ্চয় অদ্ভুত।
মিঃ ক্যাসপার–মানুষটিকে সহজেই বিপজ্জনক বলে মেনে নেওয়া যায়। তিনিও পাশে বসেছিলেন। দু-একবার কথায় অংশ নিতেও চেষ্টা করেছেন।
বিদেশীদের সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না। মিস মারপল বিদেশী যাত্রীদের বিষয়ে না ভেবে পারলেন না।
.
গোল্ডেন বোরো নিজের কামরা থেকে বেরিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য নিচে নামছিলেন। এই সময় টুইডের কোট পরিহিতা একজন মহিলা ব্যস্তসমস্ত ভাবে সামনে এসে দাঁড়াল।
–মাপ করবেন, আপনিই কি মিস জেন মারপল?
–হ্যাঁ, ওটাই আমার নাম। একটু অবাক হলেন মিস মারপল।
-আমার নাম মিসেস গ্লাইন-ল্যাভিনিয়া গ্লাইন। আমি আর আমার দুই বোন কাছেই থাকি। আমরা শুনেছিলাম আপনি আসছেন–
–আপনারা শুনেছেন আমি আসছি
অবাক হয়ে ব্যাপারটা বুঝবার চেষ্টা করলেন মিস মারপল।
–হ্যাঁ। আমাদের এক পুরনো বন্ধু লিখেছিলেন। তিনি বিখ্যাত হাউজেন অ্যাণ্ড গার্ডেনসের ভ্ৰমণতারিখ জানিয়ে বলেছিলেন তার এক নামী বন্ধু এই ভ্রমণে থাকবেন। আমরা যেন তারিখটা মনে রাখি।
মিস মারপল ঘটনার আকস্মিকতায় কথা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
-ওঃ! মিঃ র্যাফায়েল, মিস মারপল বলতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু আপনারা জানেন, তিনি…
–হ্যাঁ, তিনি মারা গেছেন। খুবই দুঃখের কথা। মনে হয়, আমাদের কাছে লেখার কিছু পরেই তার মৃত্যু ঘটে। তিনি যা বলেছেন তা হল, আপনি হয়তো দু-এক রাত আমাদের সঙ্গে কাটিয়ে যেতে পছন্দ করবেন।
ভ্রমণের পরবর্তী অংশ আপনার পক্ষে খুবই কষ্টকর হবে। বহু মাইল হেঁটে খাড়াই বেয়ে ওপরে ওঠার দরকার হবে।
আমরা তিনবোন খুবই খুশি হব যদি আপনি কয়েকটা দিন আমাদের সঙ্গে কাটিয়ে যান। হোটেল থেকে আমাদের বাড়ি মাত্র দশ মিনিটের পথ। এই কদিন স্থানীয় ভাবে অনেক সুন্দর জিনিস আপনাকে দেখিয়ে দিতে পারব।
মিস মারপল নীরবে মিসেস গ্লাইনকে পর্যবেক্ষণ করলেন। হৃষ্টপুষ্ট চেহারার মানুষটিকে বেশ বন্ধুভাবাপন্ন বলেই মনে হলো তার।
দু-এক মিনিট ভাবলেন তিনি। এটা কি মিঃ র্যাফায়েলেরই নির্দেশ…তার পরবর্তী কর্তব্য সম্পর্কে! তিনি মিসেস গ্লাইনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ধন্যবাদ, আপনাদের ওখানে যেতে পারলে সত্যিই খুশি হব।
.
০৮.
প্রাচীন এক জমিদার ভবন। তার একটি ঘরে বিছানায় বসে আছেন মিস মারপল। পাশেই পড়েছিল তার সুটকেস।
জানলা দিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, খুবই অযত্নে লালিত। সম্ভবত কয়েক বছর পরিচর্যা হয়নি। বাড়িটিও অবহেলিত। ঘরের আসবাবপত্রও খুবই মূল্যবান, কিন্তু তাতে বহুকাল পালিশ পড়েনি।
এই ভবনের লোকজনেরা হয়তো অন্য কোথাও চলে যাওয়ার পরে মিসেস গ্লাইনরা এখানে বাস করতে এসেছেন। তার মুখেই তিনি শুনেছেন, বাড়িটি উত্তরাধিকার সূত্রে মিসেস গ্লাইন তার কোন কাকার কাছ থেকে পেয়েছেন। স্বামী মারা যাবার পরে বোনেদের নিয়ে এখানে বাস করতে আসেন।
অন্য দুই বোন অবিবাহিতই রয়ে গেছেন। তারা হলেন মিস ব্র্যাডবেরি ও মিস স্কটস।
বাড়িতে কেবল তিন বোনই থাকেন। কোথাও কোথাও এমন কিছু নেই যা থেকে কোন শিশুর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরা রুশীয়–শেখভ বা দস্তয়ভস্কি এরকম কিছু হবেন, মনে হল তার।