ইতিমধ্যে আমার সলিসিটরের মাধ্যমে আপনি নিশ্চয় আমার বিশেষ প্রস্তাব পেয়ে থাকবেন। আমার বিশ্বাস, আপনি সেটা গ্রহণ করেছেন। অবশ্য এব্যাপারটা আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরেই সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছি।
আমার সলিসিটরদের যেভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে যদি তারা তা যথাযথ সম্পাদন করে তাহলে এই চিঠি আপনার হাতে পৌঁছবার কথা এমাসের ১১ তারিখে। আজ থেকে দুদিন পরে আপনি লণ্ডনের কোন ভ্রমণসংস্থার কাছ থেকে সংবাদ পাবেন। আমার ধারণা ওদের প্রস্তাব আপনার খারাপ লাগবে না। এব্যাপারে আপনি নিশ্চয়ই ভোলা মন রাখবেন। তবে, এটুকুই কেবল আমার বলার যে, নিজের সম্বন্ধে সতর্ক থাকবেন। আপনি বিচক্ষণ, আমি জানি আপনি তা পারবেন।
আপনার শুভ হোক। আর শুভ দেবদূতেরা পাশে থেকে আপনাকে রক্ষা করুন। তা আপনার প্রয়োজন হতে পারে। —
আপনার প্রিয় বন্ধু
জে. বি. র্যাফায়েল
এই চিঠি পাবার ঠিক দুদিন পরেই ডাক বিভাগ গ্রেট ব্রিটেনের ফেমাস হাউসেস অ্যাণ্ড গার্ডেনস-এর একটি চিঠি তাঁর কাছে পৌঁছে দিল।
চিঠিটি এরকম :
প্রিয় মিস মারপল,
প্রয়াত মিঃ র্যাফায়েলের কৃত ব্যবস্থা অনুযায়ী আমাদের ৩৭ নং ভ্রমণ সূচীর বিবরণ আপনাকে পাঠালাম। আগামী বৃহস্পতিবার ১৭ই তারিখে লণ্ডন থেকে এই ভ্রমণযাত্রা শুরু হবে।
আপনার পক্ষে যদি আমাদের লণ্ডন অফিসে আসা সম্ভব হয়, এই ভ্রমণের সহযোগী মিসেস স্যাণ্ডবার্ন সকল বিবরণ জানাতে পেরে সুখী হবেন।
আমাদের ভ্রমণের সময়কাল দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে স্থায়ী হয়। মিঃ র্যাফায়েলের মতে এই বিশেষ ভ্রমণ আপনার কাছে খুবই গ্রহণীয় হবে। কেননা ইংলণ্ডের যে এলাকা দেখানো হবে সম্ভবতঃ তা আপনার অদেখা। চমৎকার দৃশ্য ও বাগান দেখবার সুযোগ রয়েছে। তিনি আমাদের পক্ষে আনুষঙ্গিক সর্বোত্তম ব্যবস্থারই বন্দোবস্ত করে গেছেন।
আমাদের বার্কলে স্ট্রিটের অফিসে কবে আপনার পক্ষে আসা সম্ভব জানালে বাধিত হব।
চিঠিটা সযত্নে ভাঁজ করে রেখে মিস মারপল সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দুই বান্ধবীকে ফোন করলেন। তিনি জানতেন তারা আগে ফেমাস হাউসেস অ্যাণ্ড গার্ডেনসের সঙ্গে ভ্রমণে গেছিলেন।
বন্ধুদের দুজনেই জানিয়ে দিলেন এই ভ্রমণসংস্থার ব্যবস্থাদি খুবই ভাল তবে যথেষ্ট ব্যয়বহুল।
এরপর তিনি বার্কলে স্ট্রিটে ফোন করে জানিয়ে দিলেন, সামনের মঙ্গলবারে তিনি তাদের দেখা সঙ্গে করবেন।
.
মঙ্গলবারে নিজের সুটকেস গুছিয়ে নিয়ে চেরিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে মিস মারপল লণ্ডনে গেলেন। সেখানে এক সাধারণ হোটেলে ঘর নিলেন। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে ট্যাক্সি ধরে বার্কলে স্ট্রিটের অফিসে পৌঁছলেন।
বছর পঁয়ত্রিশ বয়সের এক সুদর্শনা মহিলা তাকে অভ্যর্থনা জানালেন। মহিলার নাম মিসেস স্যাণ্ডবার্ন। বিশেষ ভ্রমণ তারই তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে।
প্রাসঙ্গিক দুচার কথার পরে মিসেস স্যাণ্ডবার্ন জানালেন, মিঃ র্যাফায়েল এই বিশেষ ভ্রমণের সমস্ত খরচ মেটানোর ব্যবস্থা করে গেছেন।
-আপনারা জানেন যে তিনি মারা গেছেন? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
-হ্যাঁ। কিন্তু এ ব্যবস্থা তিনি মৃত্যুর আগেই করে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, তার শরীরের অবস্থা ভাল নয়, তাই বন্ধুর জন্য একটু ভ্রমণের ব্যবস্থা করে যেতে চান।
.
বৃহস্পতিবার দিনে বিশেষ ভ্রমণযাত্রা শুরু হল। খুব আরামপ্রদ আর বিলাসবহুল এক গাড়িতে ভ্রমণার্থীরা উঠে বসলেন। লণ্ডনের বাইরের উত্তর-পশ্চিম দিকের পথ ধরে গাড়ি এগিয়ে চলল।
নিজের সিটে বসে মিস মারপল যাত্রী তালিকায় চোখ বুলিয়ে নিতে লাগলেন। ভ্রমণের দর্শনীয় স্থান ও দৈনন্দিন খুঁটিনাটিও তাতে লেখা ছিল।
মিসেস রাইজেল পোর্টার
মিস জোয়ানা ক্রফোর্ড
কর্নেল ও মিসেস ওয়াকার
মিঃ ও মিসেস এইচ. টি. বাৰ্টলার
মিস এলিজাবেথ টেম্পল
প্রফেসর ওয়ানস্টেড
মিঃ রিচার্ড জেমসন
মিস লুমলি
মিস বেন্থাম
মিঃ ক্যাসপার
মিস কুক
মিস ব্যারো
মিঃ এমলিন প্রাইস
মিস জেন মারপল
এই হল ভ্রমণার্থী তালিকা। তাদের মধ্যে তাকে নিয়ে চারজন বয়স্ক মহিলা। মিস স্যাণ্ডবার্ন আর তাকে বাদ দিয়ে মোট পনেরো জন যাত্রী।
মিস মারপল ভাবলেন, এই পনেরো জন যাত্রীর কোন ব্যাপারে অবশ্যই গুরুত্ব আছে। সেই কারণেই এই কোচে তার ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হয়তো কোন খবরের যোগসূত্র কিংবা অপরাধের সূত্র এখানে পেয়ে যেতে পারেন।
খোদ খুনীকে পাওয়াও অসম্ভব নয়। এই হত্যাকারী হয়তো ইতিমধ্যে কোন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিংবা সম্ভাব্য খুনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে। মিঃ র্যাফায়েল হয়তো এভাবে তার বুদ্ধিবৃত্তির পরীক্ষা করে থাকবেন–অসম্ভব নয় কিছু।
মিস মারপল ভাবলেন, এই লোকগুলো সম্পর্কে তার খাতায় টুকে রাখবেন।
অন্য যে দুজন ভদ্রমহিলা আলাদা ভাবে ভ্রমণ করছেন, তাদের দুজনেরই বয়স ষাটের কাছাকাছি। একজন বেশ সুবেশা। তার সঙ্গে রয়েছে আঠারো উনিশ বছরের একটি মেয়ে। মহিলার ভাইঝি। মেয়েটি মহিলাটিকে ডেরালডাইন পিসি বলে সম্বোধন করছে। মেয়েটি সুদর্শনা আর বেশ স্মার্ট।
মিস মারপলের সামনে বসেছিলেন মেদবহুল বড়সড় চেহারার একজন মানুষ। মুখখানা গোলাকৃতি হতে হতে কেমন চৌকো হয়ে গেছে। মাথায় ধূসর ঘন চুল, ঘন লোমশ ভ্র।
ভদ্রলোকের পাশেই বসেছিলেন একজন দীর্ঘাকৃতি বিদেশী। অদ্ভুত ভঙ্গীতে হাত মুখ নেড়ে অনর্গল কথা বলে চলেছেন সহযাত্রীর সঙ্গে।